![এমপির ‘প্রজ্ঞাদীপ্ত পরামর্শ’ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের ব্যানার!](uploads/2024/01/23/1706023636.Sylhet_MP-Nadel.jpg)
‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড হিসেবে আপনার কর্মদক্ষতা এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে আপনার সংসদীয় এলাকা। একই সাথে আপনার প্রজ্ঞাদীপ্ত পরামর্শ এবং সহযোগিতায় এগিয়ে যাবে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি...’।
মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নবনির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে শুভেচ্ছা জানাতে এ রকম ব্যানার টানিয়েছেন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল আলম। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে চারপাশে এ রকম ব্যানার টানানোয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট নগরীর শামীমাবাদ আবাসিক এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান ফটকে শোভা পাচ্ছে ব্যানার। প্রথম দেখায় মনে হবে ছাত্রলীগের কোনো নেতা হয়তো দলীয় এমপিকে এই শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এ ধরনের কাজে বিরূপ মন্তব্য করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এমনকি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারাও এ শুভেচ্ছা বার্তা দেখে নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রধান সড়ক নগরীর কানিশাইল সড়কের প্রবেশমুখে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশেসহ কয়েকটি জায়গায় এই শুভেচ্ছা বার্তা সম্বলিত ব্যানার টানিয়েছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল আলম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যদি রাজনৈতিক নেতাদের মতো শুভেচ্ছা বার্তা দেন তাহলে রাজনৈতিক নেতারা কী করবেন?
এ রকম শুভেচ্ছা ব্যানার টানাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সেবা শাখা থেকে গত ১২ জানুয়ারি জারিকৃত নোটিশের নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়নি উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকজন শিক্ষক বলেন, গত ৩০ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন বকেয়া। অথচ আমাদের উপাচার্য ব্যানার তৈরি করার টাকা ঠিকই পাচ্ছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এ ধরনের ব্যানার টানাতে পারেন না।
তারা বলেন, এই শুভেচ্ছা ব্যানার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে আলোচনা হচ্ছে। আমরাও কথা বলছি, শিক্ষার্থীরাও বলছে, এলাকার মানুষজনও বলছেন। একজন উপাচার্যের এ ধরনের শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়া মানানসই হয়নি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও বলছে, একজন উপাচার্য এ ধরনের শুভেচ্ছা দিতে পারেন না। এ ধরনের শুভেচ্ছা না দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তারপরও উপাচার্যের এমন কাণ্ড পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
ইতোমধ্যে জাতীয় পত্রিকায় এ ধরনের শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তোপের মুখে পড়েন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না মেনে নবনিযুক্ত দুই মন্ত্রীকে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারকে দেওয়া এক চিঠিতে এ ব্যাখ্যা চেয়েছে ইউজিসি।
উপাচার্যের ব্যানার টানানো প্রসঙ্গে একজন শিক্ষক বলেন, উপাচার্যদের এমপি-মন্ত্রীদের শুভেচ্ছা দিতে টাকা খরচ করার কোনো ক্ষমতা নেই। এ সংক্রান্ত খরচের কোনো খাতও নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে একটা কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা দিতে পারি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দিতে পারি না। এখন কোনো উপাচার্য যদি এমন কাজ করেন এটা নির্ভর করে ওই উপাচার্যের ব্যক্তিত্বের ওপর।
নবনির্বাচিত এমপির কাছে ‘প্রজ্ঞাদীপ্ত পরামর্শ’ কী চান? জানতে চাইলে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রথমত উনি শুধু এমপি হিসেবে না , উনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান উপদেষ্টা। উনি এমপি নির্বাচিত হলেও এমপি হিসেবে নয়, মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা ও ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা যেটা দেওয়া হয়েছে সেটা আমি খেয়াল করিনি। যদি নিষেধাজ্ঞা থাকে আমি এগুলো সরিয়ে নেব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন প্রায় ৩০ মাস ধরে বকেয়া রয়েছে। এই বকেয়া বেতন স্বাভাবিক করতেই নবনির্বাচিত এমপিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যানার টানানো হয়েছে।
অবশ্য এ ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, ‘বেতন বকেয়ার সঙ্গে ব্যানারের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা বলছেন বেতন দেওয়া হচ্ছে না, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করেন। তাহলে সব বুঝতে পারবেন।’ তবে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড চেক’ করা কথার কোনো ব্যাখা দেননি তিনি।
সিলেট ব্যুরো/সালমান/