ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়মবহির্ভূতভাবে জনবল নিয়োগ দিয়ে বেতন-ভাতা বাবদ দুই বছরে সরকারের ১ কোটি ২৬ লাখ ১২ হাজার ১০৯ টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সাবেক উপাচার্য ও সাবেক রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
বুধবার (২৭ মার্চ) দুর্নীতি দমন কমিশনের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন রুয়েটের সাবেক উপাচার্য ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম সেখ এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন।
জনবল নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দুদক মামলা দায়েরের অনুমোদন দেওয়ার পর আজ মামলাটি করা হয়। মামলার বিবরণে বলা হয়, ‘পারস্পরিক যোগসাজশে লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বরপ্রাপ্ত প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় বেশি নম্বর দিয়ে এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক ৬ জন সেকশন অফিসারের জায়গায় ১৩ জনকে নিয়োগ প্রদান, জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে নিয়োগের অনুমোদন ও শূন্য পদ না থাকা সত্ত্বেও সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদের বিপরীতে জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ প্রদান, পিএ টু ভিসি/ডিরেকটর পদে ২ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও ৩ জনকে নিয়োগ প্রদান, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে ১ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলেও ২ জনকে নিয়োগ করা, মালি পদে ৩ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিলেও ৭ জনকে নিয়োগ প্রদান, ড্রাইভার পদে বিজ্ঞপ্তি ১ জনের জায়গায় ৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া এবং সহকারী কুক পদে ৩ জনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও ৫ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। অতিরিক্ত নিয়োগপ্রাপ্তদের ২০২১ সালের জুন মাস থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত বেতন-ভাতা বাবদ সরকারের মোট ১ কোটি ২৬ লাখ ১২ হাজার ১০৯ টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ডবিধি ৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘রুয়েটের সাবেক উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখের মেয়াদকালে ১৩৫ জন নিয়োগেই কমবেশি অনিয়ম হয়েছে। তবে তার মধ্যে ১৭ জনের নিয়োগ নিয়ে মামলা করা হয়েছে। এই নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অনৈতিক সুবিধা গ্রহণসহ নানা বিষয়ে অনুসন্ধান শেষে গত সোমবার (২৫ মার্চ) তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমোদন মেলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি নিজেই বাদী হয়ে মামলাটি করেছি।’ মামলার তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে বলেও জানান দুদকের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
অভিযোগে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই চার বছরের জন্য রুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ। এরপর বিভিন্ন সময়ে তিনি ১৩৫ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ দেন। ২০২১ সালের ৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২তম সিন্ডিকেট সভায় এসব নিয়োগ অনুমোদন ও বৈধ করা হয়। তবে এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নিয়োগবিধি লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে সাবেক ভিসি নিজের কয়েকজন আত্মীয়স্বজনকেও নিয়োগ দেন, যারা ওই সব পদে চাকরি পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রুয়েটের সাবেক ভিসি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ বলেন, ‘দুদকের মামলার বিষয়ে কিছু জানা নেই। আর নিয়োগে কোনো অনিয়মও হয়নি। তবে মামলা হলে আইনগতভাবে তা মোকাবিলা করা হবে।’