![রপ্তানিতে সুখবর নেই](uploads/2023/12/05/1701764180.Roptani.jpg)
দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে সুখবর নেই। অক্টোবর মাসের পর নভেম্বরেও রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমেছে। এ নিয়ে পর পর দুই মাস রপ্তানি কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বিশ্ব অর্থনেতিক মন্দার প্রভাবে দেশে রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ ভালোভাবে লেগেছে। এ প্রভাবমুক্ত কবে কেটে যাবে তা বলা মুশকিল।
রপ্তানির উন্নয়ন ব্যুরোর গতকাল প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের নভেম্বরে ৪৭৮ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ কম।
টানা দুই মাস পণ্য রপ্তানি কমে যাওয়ায় সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির গতিও কমে গেছে। চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস শেষে (জুলাই-নভেম্বর) পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ৩ শতাংশ।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, নভেম্বর মাসে রপ্তানি কমায় পাঁচ মাসের হিসাবে (জুলাই-নভেম্বর) প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত জুলাই-নভেম্বর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ২২৩ কোটি ডলারের পণ্য।
উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল।
চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার। পণ্য রপ্তানি আয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান গতকাল সোমবার প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তৈরি পোশাক ছাড়া অধিকাংশ পণ্যের রপ্তানি কমে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে হিমায়িত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য ইত্যাদি।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে ১ হাজার ৮৮৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। আলোচ্য সময়ে তৈরি পোশাকের মধ্যে নিট পোশাকের রপ্তানি ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে ওভেন পোশাকের রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জানান, রপ্তানিকারকরা বলছেন, শ্রমিক আন্দোলনের সময় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বৈশ্বিক খুচরা বিক্রয় ও চাহিদা হ্রাসের কারণে এ গতিমন্থরতা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকের প্রধান বাজারগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
এতে মানুষ কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে তৈরি পোশাকের ওপর। এ ছাড়া গত মাসে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অনেকে সময়মতো রপ্তানি করতে পারেনি। রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটিও অন্যতম বড় কারণ।
মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘নতুন করে কোনো অনিশ্চয়তা তৈরি না হলে তৈরি পোশাক রপ্তানির ধীরগতি শিগগিরই কেটে গিয়ে রপ্তানি বাড়বে। আমাদের অবকাঠামো, অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারব।’
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘তারা আশা করেছিল, জানুয়ারি থেকে রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো হবে। তবে সেটি হওয়ার সম্ভাবনা কম। ক্রয়াদেশ আসার গতি বাড়লেও তা খুব বেশি আশাব্যঞ্জক নয়।’
তিনি আরও বলেন, বিশ্বমন্দার আশঙ্কায় রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কমে গেছে অর্ডারের সংখ্যা। সাম্প্রতিক সময়ে কমপক্ষে নিট ও ওভেন মিলে ৩০ শতাংশ অর্ডার স্থগিত হয়ে গেছে। এর মধ্যে নিট খাতের বেশি অর্ডার বাতিল হচ্ছে বলে তিনি জানান।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম জুলাই-নভেম্বর সময়কালে ১ দশমিক ৮৮৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। আলোচ্য সময়ে তৈরি পোশাকের মধ্যে নিট পোশাকের রপ্তানি ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে ওভেন পোশাকের রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৪ শতাংশ। উল্লিখিত পাঁচ মাসে ১০ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারের নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে এ সময়ে ৭ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের মধ্যে হিমায়িত মৎস্য রপ্তানি হয়েছে ১৭৫ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলারের, ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশ। ৪২০ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন ডলারের কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ৮৯ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ, নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রপ্তানির পরিমাণ ৪২৭ মিলিয়ন ডলার।
একসময়ের প্রধান রপ্তানি পণ্য সোনালী আঁশ পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ১১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৬১ দশমিক ৯১ মিলিয়ন ডলারের। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের, ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪২ দশমিক ২৭ শতাংশ। প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২০০ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলারের, ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ। জাহাজ রপ্তানি কমেছে প্রায় শতভাগ।