![বুয়েটে হিযবুতের ইমেইল, নিরাপত্তা চান শিক্ষার্থীরা](uploads/2024/04/06/1712380591.buet.jpg)
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের পক্ষ থেকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের ইমেইলে বার্তা দেওয়া হয়েছে। যদিও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না হিযবুত তাহরীরের পক্ষ থেকে এই মেইল পাঠানো হয়েছে কি না। এ ঘটনায় বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নিরাপত্তা চেয়ে আইনিব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্র রাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এদিকে রাজনীতিমুক্ত পরিবেশ পেলে বুয়েটের সুনাম বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে বলে বিবৃতি দিয়েছে বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। অন্যদিকে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চালুর দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট।
বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) রাত ১২টায় বুয়েটের সব বর্ষের বহু সাধারণ শিক্ষার্থীর ইনস্টিটিউশনাল ইমেইলে হিযবুত তাহরীর নামক নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন থেকে একটি পিডিএফ প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় বলে দাবি করেছেন আন্দোলনরকারীদের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে।
শিক্ষার্থীদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘৫ এপ্রিল রাত ১২টায় পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিটির শিরোনাম ছিল ‘ছাত্রলীগের আগ্রাসন থেকে আমাদের মেধাবী সন্তানদের কে নিরাপত্তা দেবে?’ এবং তারা সাধারণ ছাত্রদের এই নিষিদ্ধ সংগঠনের দিকে আহ্বান করে। আজকে এবং এর আগেও পৃথক ইমেইল ব্যবহার করে এ জাতীয় পিডিএফ পাঠানো হয়েছে।’
এর আগেও নিষিদ্ধ ও জঙ্গি সংগঠনের নামে ইনস্টিটিউশনাল ইমেইলে মেইল পেয়েছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘কৌশলে নিষিদ্ধ সংগঠনের এমন তৎপরতায় শঙ্কিত হয়ে আমরা বিভিন্ন সময় উপাচার্য এবং ছাত্রকল্যাণ পরিষদ বরাবর অভিযোগ করি। কে বা কারা গোপনে এরূপ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তা নিয়ে তদন্ত চলমান বলে আমাদের জানানো হয়। নির্দেশনা দেওয়া হয় যে, আমরা যেন উপাচার্য স্যার, এডিএসডব্লিউ (ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের সহকারী পরিচালক) স্যার এবং আইআইসিটি (ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি) বরাবর অনলাইনে অভিযোগ দাখিল করি।’
শিক্ষার্থীরা জানায়, এভাবে গণহারে মেইল আসার পর আমরা সবাই অনতিবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানাই। পাশাপাশি আমাদের মধ্যে অনেকে এদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে জিডি করছে। তাদের বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘নিষিদ্ধ মৌলবাদী ও জঙ্গি সংগঠনের কোনো স্থান এই ক্যাম্পাসে হবে না এবং বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে থেকে প্রতিহত করার চেষ্টা করবে।’
রাজনীতিমুক্ত পরিবেশ বুয়েটের বৈশ্বিক খ্যাতি বাড়াবে: বুয়েট অ্যালামনাই
অপরাজনীতিমুক্ত অনুকূল পরিবেশ বজায় থাকায় ২০২১ সাল থেকে বিষয়ভিত্তিক র্যাংকিং, অ্যাকাডেমিক সূচক এবং সাইটেশন স্কোর বাড়ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)। যদি রাজনীতিমুক্ত পরিবেশ বজায় থাকে তাহলে বুয়েট তার বৈশ্বিক খ্যাতি আরও বাড়াতে এবং বিশ্বের একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটির অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন।
শুক্রবার (৫ মার্চ) বুয়েট অ্যালামনাই সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত এবং মহাসচিব প্রকৌশলী মাহতাব উদ্দিন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়। গত ৩ এপ্রিল বুয়েট অ্যালামনাই বোর্ড অব ট্রাস্টি, বুয়েট আবাসিক হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং অন্যান্য বিশিষ্ট অ্যালামনাইদের সঙ্গে এক জরুরি সভায় অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার সিদ্ধান্তগুলো ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-এর সাম্প্রতিক ঘটনাবলি বিষয়ে বুয়েট অ্যালামনাই-এর বক্তব্য’ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়, বুয়েট অ্যালামনাই মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পূর্ণ দায়িত্ব উপাচার্য ও সিন্ডিকেটের। কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি অনভিপ্রেত। এই সভা সুষ্ঠু রাজনীতির পক্ষে মত প্রকাশ করছে। তবে বর্তমানে ছাত্ররাজনীতির নামে যা চলমান, তা অপরাজনীতির বহিঃপ্রকাশ বা নামান্তর। বিগত পাঁচ বছরে বুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম অবিঘ্নিত ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের গবেষণার ক্ষেত্রে সম্মানজনক অর্জন ও স্বীকৃতির ক্রমোন্নতি এই ধারাবাহিক সাফল্যের সাক্ষ্য দেয়। এই পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়া কারোরই কাম্য হতে পারে না।
বুয়েট জঙ্গিবাদ লালনের ক্ষেত্র নয় উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জঙ্গিবাদের ন্যূনতম আভাস বা সম্ভাবনা দেখা গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকার নিশ্চয়ই কঠোর হস্তে তা দমন করবে। একই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ ছাত্ররা যে নিরাপত্তাহীনতার কথা বারংবার প্রকাশ করছে, সে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বুয়েট অ্যালামনাই বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছে।
বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির দাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি চালুর দাবি জানিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতারা। গতকাল শুক্রবার সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ সাম্প্রতিক সময়ে বুয়েটে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চালুর যৌক্তিকতা দেখিয়ে তারা বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের জন্য ক্ষমতাসীন দল ও সংগঠন যে উদ্যোগ নিচ্ছে সেটা ছাত্ররাজনীতি বন্ধ রাখার মাধ্যমে ঠেকানো যাবে না। তথাকথিত রাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসে প্রশাসনের একতরফা কর্তৃত্ব ছাত্র অধিকারকে মারাত্মকভাবে সংকুচিত করে। লুটপাট ও দুর্নীতি অনিয়ন্ত্রিত হয়।’
বুয়েটের আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তারা বলেন, ‘অপরাজনীতিকে সঠিক রাজনীতির মধ্য দিয়ে মোকাবিলা না করে রাজনীতির ওপরই পুরো দায় চাপিয়ে দিলে, তাতে অপরাজনীতির লাভই হয়।’
ছাত্রলীগ বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ শক্তি রাজত্ব করছে বলে যে আশঙ্কার কথা উল্লেখ করছে, তা ছাত্রলীগের ‘দখলদারিত্বের রাজনীতির একটি কৌশল’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতারা বলেন, ‘এই ছাত্রলীগ যখন প্রতিক্রিয়াশীল, অন্ধকারের শক্তিকে রুখে দেয়ার কথা বলে- এটাকে রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।’