বাঙালির অন্যতম ঐহিত্য হালখাতা। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই উৎসব পালনে আড়ম্বরতায় ভাটা পড়েছে বটে, তবে তা টিকে আছে সমহিমায়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সারা বছরে পড়ে থাকা বাকি টাকা তুলতে ব্যবসায়ীরা বছরে একবার আয়োজন করেন হালখাতার। থাকে নানা পদের খাবার। সাজানো হয় প্রতিষ্ঠান।
তবে এবার কুড়িগ্রামে হয়ে গেল অন্যরকম এক হালখাতা। বন্ধুদের দেওয়া ধারের টাকা তুলতে হালখাতা করেছেন আব্দুল আউয়াল নামের এক স্কুল শিক্ষক। কিন্তু তার পরও অনেকে ধারের টাকা ফেরত দিতে আসেননি। ক্ষুব্ধ হয়ে ওই শিক্ষক আবারও হালখাতা করার মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এবার চিঠির পাশাপাশি মাইকিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আন্ধারীঝাড় বাজারের ‘সিঙ্গাড়া হটস্পট’ নামে একটি চায়ের দোকান রয়েছে। এর সামনের অংশ সাজানো হয়। টেবিল চেয়ার নিয়ে সেখানে বসেছিলেন আব্দুল আউয়াল। প্রচলিত হালখাতার মতো ছিল আয়োজন। চেয়ার, টেবিল ক্যাশ বাক্স সাজানো। সাঁটানো হয় শুভ হালখাতার ব্যানার। টাকা পরিশোধ করতে আসা ব্যক্তিদের জন্য ছিল বিরিয়ানী।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় এমএএম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল আউয়াল গত শুক্রবার বিকেলে এমন হালখাতার আয়োজন করেন। যাদের কাছে ধারের টাকা পান; তাদের আগেই চিঠি দিয়ে জানান হালখাতার দিনক্ষণ।
হালখাতায় আমন্ত্রিত ছিলেন শিক্ষক আব্দুল আউয়ালের বন্ধুরা। সবাই তার কাছ থেকে টাকা ধার করেছিলেন। অনেকেই এসেছেন টাকা পরিশোধ করতে। টাকা পরিশোধ করলেই দেওয়া হয় মাংস বিরিয়ানীর প্যাকেট। কেউ সেখানে বসে খেয়ে যান। কেউ আবার খাবারের প্যাকেট সঙ্গে নিয়ে যান। হালখাতা দেখতে উৎসুক জনতার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে অনেকে দেখতে আসেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সোলাইমান হোসেন এসেছেন টাকা পরিশোধ করতে। অনেক লোকজনের মাঝে ধারের টাকা দিতে আসতে লজ্জাবোধ করেছিলেন। কিন্তু উপায় ছিল না। তিনি জানান, বেশ কিছুদিন আগে শিক্ষক আউয়ালের কাছ থেকে হাজার টাকা ধার নিয়েছেন। সেটি দেওয়া হয়নি। হালখাতার চিঠি পাওয়ার পর হতভম্ব হয়েছেন। এ কেমন হালখাতা! কিন্তু টাকা পরিশোধ করতে হবে। সে কারণে এসেছেন।
সোলাইমান বলেন, ‘বিরিয়ানি খেয়ে ধারের টাকা পরিশোধ করলাম। ঋণ পরিশোধ করতে পেরে ভালো লাগছে।’ টাকা দিতে আসা আরেকজনের নাম জব্বার মিয়া। তিনি বলেন, ‘ছয় হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম। হালখাতায় এসে পরিশোধ করলাম।’
স্থানীয়রা জানান, শিক্ষক আব্দুল আউয়াল খুবই সরল প্রকৃতির মানুষ। কেউ তার কাছে টাকা ধার চাইলে মানা করতে পারেন না। কিন্তু অনেকেই ধার নিয়ে ফেরত দেননি। সে কারণে হালখাতার আয়োজন করেছেন তিনি।
শিক্ষক আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘মানুষের উপকারে মানুষ আসবে এটাই স্বাভাবিক। কেউ বিপদে না পড়ে টাকা ধার নিতে আসে না। কারও পাশে দাঁড়াতে পাড়লে ভালো লাগে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অনেকে ধার নিয়ে ফেরত দিচ্ছিলেন না। এ জন্য হালখাতার আয়োজন করেছি। চিঠি পেয়ে অনেকে আগেই টাকা পরিশোধ করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘হালখাতায় অনেকে টাকা পরিশোধ করেছেন। অনেকে আসেননি। ৩৯ জনকে চিঠি দিয়েছিলাম। এর মধ্যে ১৯ জন এসেছেন। দেড় লাখ টাকা উঠেছে। আরও দুই লাখের মতো টাকা পাব। টাকা না উঠলে আবারও হালখাতার আয়োজন করব। তখন মাইকে ঘোষণা করা হবে।’