![পরিত্যক্ত অ্যাম্বুলেন্সই তার ঘর](uploads/2024/01/16/1705384719.Sherpur-Ruma-Pic-1.jpg)
কখনো গাছতলায়, কখনো রাস্তার পাশে; আবার কখনো পরিত্যক্ত কোনো ভবনের কোণে। আর বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে চলে যান শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছনে থাকা পরিত্যক্ত একটি অ্যাম্বুলেন্সে। ওই অ্যাম্বুলেন্সে প্রায় ছয় মাস ধরে রাত কাটাচ্ছেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী। স্থানীয়রা জানান, ওই নারীর বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছর। নিজের নাম বলেন ‘রুমা’। আবার বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে বলেন- ‘আদালত’।
হাসপাতালের আশপাশে থাকা স্থানীয়রা জানান, ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর ঝিনাইগাতী হাসপাতাল চত্বরে পরিত্যক্ত একটি অ্যাম্বুলেন্সে রাত্রি যাপন শুরু করেন ওই নারী। তীব্র শীতের সারাদিন পুরোনো কাপড় পরে এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করেন।
তার হাঁটাচলা অন্য সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা। তিনি খুব দ্রুত হাঁটেন। তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি রেগে অন্যত্র চলে যান। আর বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেই চলে আসেন তার গন্তব্য অ্যামুলেন্সে। হাসপাতালের সামনে নির্দিষ্ট একটি চায়ের দোকানে প্রতিদিন চা-বিস্কিট আর দুবেলা ভাত খান তিনি। সম্প্রতি স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই নারীকে খাবার ও শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই নারীর পরিচয় জানতে পোস্ট দিলে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে।
হাসপাতালের সামনে ওই নারীকে দুবেলা ভাত খাওয়ান চা দোকানি হেদায়েত মিয়া। তিনি জানান, ওই নারীর নাম রুমা, বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে বলেন- আদালত। হেদায়েত মিয়া আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রী প্রতিদিন মানসিক ওই মেয়ের জন্য রান্না করে ভাত-তরকারি বাটিতে ভরে দেন। এভাবে প্রতিদিন ভাত-তরকারি এনে তাকে খাওয়াচ্ছি। আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছি। আপনারা তার পরিবারের খোঁজ পেলে জানাবেন।’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভয়েস অব ঝিনাইগাতীর সভাপতি জাহিদুল হক মনির বলেন, ‘আমরা ওই নারীর খোঁজ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ইতোমধ্যে তাকে শুকনো খাবার ও শীতবস্ত্র দিয়েছি।’
মানবাধিকার সংস্থা ও এনজিও সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সহকারী পরিচালক নাঈম ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এক প্রতিনিধি দল ঝিনাইগাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকা ওই ভারসাম্যহীন নারীর খোঁজখবর নিয়েছে। বিভিন্নভাবে ওই নারীর স্বজনদের খোঁজখবর পেতে চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই নারীর আসল পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তবে ওই নারী রুমা নাম ছাড়া আর কিছু বলতে পারে না। আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রুমার ছবিসহ পরিচয় জানতে পোস্ট দিয়েছেন। আমরা আশা করছি, দ্রুত সময়ে তার পরিবারের খোঁজ পাব এবং তার পরিবারের কাছে তুলে দেব।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী খাদিজাতুল জান্নাত বলেন, ‘ওই নারী মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনি অনেক কিছু মনে রাখতে পারেন না। সকালে কথা বললে বিকেলে ভুলে যান। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।’
চিকিৎসক আল আমিন বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে অ্যাম্বুলেন্স থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই নারী। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও তার প্রয়োজন মানসিক চিকিৎসা, যা এই হাসপাতালে সম্ভব নয়।’
শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেলের (ওসিসি) জেলা কর্মকর্তা অমিত শাহরিয়ার বাপ্পী বলেন, ‘ওই নারী মানসিক প্রতিবন্ধী বলে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন। যেহেতু আমরা অসহায় নারীদের নিয়ে কাজ করি, এ কারণে ওই নারীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব। তবে শেরপুরে যেহেতু সেইফ হোম নেই, তাই তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল বলেন, ওই নারীর প্রকৃত নাম, পরিচয় ও ঠিকানা খোঁজা হচ্ছে। পরিচয় পাওয়ামাত্রই তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’