![৫৩ বছরেও হয়নি বঙ্গবন্ধুর নামে অবকাঠামো](uploads/2024/02/11/1707623744.Sherpur.jpg)
স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছরেও শেরপুরে বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অবকাঠামোর নামকরণ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকার পরও জেলায় বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো স্থাপনা বা অবকাঠামো না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক ও লজ্জার। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। স্থানীয় সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, অতি দ্রুত তিনি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।
শহরের মাধবপুর এলাকার বাসিন্দা হাফিজা মুনমুন। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার টানা ক্ষমতায় থাকলেও আমাদের শেরপুর জেলাতে বঙ্গবন্ধু কিংবা প্রধানমন্ত্রীর নামে কোনো স্থাপনা নেই। অথচ পাশের জেলাগুলোতে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর নামে রাস্তাঘাট, স্থাপনা আছে। আমি মনে করি, এটা শেরপুরবাসীর জন্য লজ্জার।’
দিঘারপাড়া এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মী মো. লিটন বলেন, ‘আমাদের শেরপুর সদর আসনে টানা ২৫ বছর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। তারপরও আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে কোনো স্থাপনা বা অবকাঠামো জাতির পিতার নামে করা হয়নি। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার। আমি চাই, বঙ্গবন্ধুর নামে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নামকরণ করা হোক।’
যুব মহিলা লীগের সাবেক আহ্বায়ক ফারহানা পারভীন মুন্নী বলেন, ‘আমি চাই, শেরপুরে একটি মেডিকেল কলেজ, একটি রেলওয়ে স্টেশন ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে বঙ্গবন্ধু কিংবা প্রধানমন্ত্রীর নামে নামকরণ করা হোক। এ ছাড়া আরও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোও বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করা যেতে পারে।’
মহিলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ও নারী নেত্রী সাবিহা জামান শাপলা বলেন, ‘সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর নামে স্থাপনা আছে। কিন্তু আমাদের জেলায় নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
শেরপুর-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ছানুয়ার হোসেন ছানু খবরের কাগজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় অথচ এ জেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে কোনো স্থাপনা নির্মাণ হয়নি। সত্যিই এটা দুঃখজনক। এ জেলায় বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠানও বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করা হয়নি। আমি এবার জয়ী হয়েছি। অল্প কিছুদিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর নামকরণে উদ্যোগ নেব।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলে এ অঞ্চলটির নাম ছিল শেরপুর সার্কেল। জমিদারি আমলে ১৮৬৯ সালে শেরপুর পৌরসভা স্থাপিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেরপুরকে ৬১তম জেলা ঘোষণা করেন। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে এ সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৭৯ সালে শেরপুরকে মহকুমা, ১৯৮৪ সালে শেরপুরকে জেলায় উন্নীত করে জেলার ৫টি থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। এর মধ্যে শেরপুর সদর উপজেলা, নকলা উপজেলা, নালিতাবাড়ী উপজেলা, ঝিনাইগাতী উপজেলা ও শ্রীবরদী উপজেলা।
এ জেলায় বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। যেখানে তিনটি সংসদীয় আসন রয়েছে। শেরপুর সদর নিয়ে গঠিত শেরপুর-১ আসন, নকলা-নালিতাবাড়ী নিয়ে গঠিত শেরপুর-২ আসন ও শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী নিয়ে গঠিত শেরপুর-৩ আসন। এই তিনটি আসনে মোট ভোটার ১২ লাখ ২২ হাজার ৩৯৩ জন। শেরপুর-১ (সদর) আসনে টানা পাঁচবারের সংসদ সদস্য ও দুবারের হুইপ আতিউর রহমান আতিক ক্ষমতায় ছিলেন। এবারই (২০২৪ সালে) অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন তিনি।