মৌলভীবাজারে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো চা জনগোষ্ঠীর আন্তর্জাতিক ভাষা ও সংস্কৃতি উৎসব। গতকাল রবিবার দুপুরে জেলার রাজনগর চা বাগান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী নানা আয়োজনে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
উৎসবে বাংলাদেশ চা জনগোষ্ঠী উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক সীতারাম বীনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও নেপাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা-সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক, প্রতিনিধিসহ দেশবরেণ্য কবি-সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ ভাষা ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। চা জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি উৎসব কমিটির আয়োজনে এই অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
উৎসব পরিচালনা কমিটির সভাপতি মহেশ যাদব জানান, দেশে ১৬৭ চা বাগানে প্রায় ১০৯ জনগোষ্ঠীর বসবাস। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। এসব জনগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে এমন আয়োজন করেছেন তারা। এবারের উৎসবে প্রায় অর্ধশত জনগোষ্ঠীর সদস্য অংশ নেন।
বাংলাদেশ চা জনগোষ্ঠী উন্নয়ন ফোরামের সদস্য সচিব সঞ্জু গোস্বামী বলেন, ‘চা জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষাগুলো আজ মৃতপ্রায়। নিজ মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার জন্য রফিক-জব্বার-সালাম নিজের প্রাণ উৎসর্গ করে গেছেন। অন্যদিকে আমরা নিজেরাই অতি আধুনিকতার ছোঁয়া গায়ে লাগাতে চা বাগানের নিজ মাতৃভাষাগুলো গলাটিপে হত্যা করছি প্রতিনিয়তই। তাই চা বাগানের এই বিলুপ্তপ্রায় মাতৃভাষাগুলো রক্ষার জন্য বিভিন্ন চা বাগানের ভাষা-সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।’
দিনব্যাপী আয়োজনে বিভিন্ন চা বাগানের প্রতিনিধিরা ঝুমুরনৃত্য, লাটিখেলা, ভজনা, হাড়িনৃত্য, টুসুগান, সহরগান, চড়াইয়ানৃত্য, হোলিগীতসহ নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপনা করেন। এই অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন চা বাগান থেকে হাজারো চা শ্রমিক যোগ দেন।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী চা শ্রমিকদের মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত করতে চা বাগানের নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষা করা জরুরি। এতে চা জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা পাবে।
জানা গেছে, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, রাজনগর, বড়লেখাসহ ৭টি উপজেলায় ৯২টি চা বাগানে প্রায় অর্ধশতাধিক গোষ্ঠী রয়েছে। তার মধ্যে হাজরা, নায়েক, বাউরি, তেলেগু, তাঁতি, কৈরী, দেশওয়ারা, বর্মা, কানু, মুণ্ডা, সাঁওতাল, ওঁড়াও, মাহালি, সবর, পাসি, রবিদাস, পানিকা, কুর্মী, চাষা, অলমিক, মোদি, তেলি, পাত্র, মাঝি, রাজবংশী, মোদক, বাড়াইক, ভূমিজসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর কয়েক হাজার মানুষ বসবাস করেন।