নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে একাধিক বহুতল ভবনে গড়ে ওঠা শতাধিক রেস্টুরেন্টে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এর মধ্যে অনেক ভবনে ওঠা-নামার জন্য লিফট ছাড়া বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। এতে দুর্ঘটনার সময় বিদ্যুৎ বন্ধ হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন ভবনগুলোতে আসা দর্শনার্থীরা।
প্রভাবশালীদের ছাড়ায় থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এসব রেস্টুরেন্টকে ‘মৃত্যুকূপ’ দাবি করে স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি প্রত্যাশা করেছেন। আর অভিযোগের তির যাচ্ছে যাদের দিকে তারা দিয়েছেন ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস, সঙ্গে রেখেছেন খবর প্রকাশ না করার অনুরোধ। অন্যদিকে বিষয়টি নজরে আছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৫টি রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, পর্যায়ক্রমে বাকিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার বিকেলে শহরের প্রধান সড়কের সেন্টারপয়েন্ট ভবনে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচজনের ধারণক্ষমতার একটি ছোট লিফটই ওঠানামার একমাত্র ভরসা। এ ভবনে নিচের তিনতলা কাপড়ের শোরুম, পাঁচতলায় পার্টিসেন্টার এবং সাত, আট ও নয় তলায় স্কাইভিউ রুফটপ রেস্টুরেন্ট। ওঠানামার সরু সিঁড়িটি শোরুমের ভেতরে আটকা এবং উপরের দিকে বড় বড় গ্যাস সিলিন্ডার ও খাবার রেখে বন্ধ রাখা হয়েছে।
সেন্টারপয়েন্টে এ প্রতিবেদক অবস্থান করার সময়ই স্কাইভিউ রেস্টুরেন্টের একমাত্র লিফটটি এক ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ থাকতে দেখা যায়। তখন কেউ উপর-নিচে ওঠানামা করতে পারেননি। ওই সময় রুফটপ রেস্টুরেন্টে (সপ্তম থেকে নবম তলা) আটকে পড়া আতঙ্কিত অনেকে খবরের কাগজকে বলেন, এটি একটি ‘মৃত্যুফাঁদ’। এভাবে কোনো ভবনের কার্যক্রম চলতে পারে না।
এ ছাড়াও শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট। যাদের ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদসহ কোনো অনুমোদন নেই। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চলছে এসব রেস্টুরেন্ট। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব ‘মৃত্যুকূপ’ গড়ে উঠছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্কাইভিউ রেস্টুরেন্টে আসা জেলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় মাহবুবুল ইসলাম হিমু খবরের কাগজকে বলেন, ‘পরিবার নিয়ে সবাই এসব রেস্টুরেন্টে খেতে আসেন। কিন্তু এগুলোতে পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। প্রশাসনকে এসব বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।’
সামছুদ্দিন আহমেদ শাওন নামে আরেকজন বলেন, ‘প্রশাসনের তদারকির অভাবে শহরে রেস্টুরেন্ট নামের এসব মৃত্যুকূপগুলো গড়ে উঠছে। বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ছাড়া দপ্তরগুলো তৎপর হয় না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’
স্কাইভিউ রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন পারভেজ বলেন, ‘সাময়িক সময়ের জন্য লিফটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। পরে মিস্ত্রি ডেকে ঠিক করা হয়েছে। রেস্টুরেন্টে অগ্নিনির্বাপণে কিছু ব্যবস্থা আছে। বাকি ব্যবস্থার জন্য মালিকপক্ষকে বলা হয়েছে।’
স্কাইভিউর মালিক দাবি করে সৌদি আরব থেকে সোহাগ আহছান নামে একজন বলেন, ‘ত্রুটিগুলো আমাদেরও নজরে এসেছে। আমরা অচিরেই এসব সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা নেব। নিউজটি না করার অনুরোধ রইল।’
নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সুজিত বড়ুয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবনের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা সাততলা পর্যন্ত অনুমোদন দেই। এর বাইরে বহুতল ভবনের বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’
ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন মাস্টার কবির হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। নোয়াখালী সুপার মার্কেট, আমানিয়া, টোকিও কাবাবসহ অন্তত ১৫টি রেস্টুরেন্টকে এরই মধ্যে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো রেস্টুরেন্ট মালিককে নোটিশ পাঠানো হবে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের নোয়াখালী কার্যালয়ের উপপরিচালক মিহির লাল সরদার বলেন, ‘কিছু রেস্টুরেন্ট পরিবেশ সনদের জন্য আবেদন করেছে। জনবল সংকটে অনেক সময় অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। তার পরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক দেওয়া মাহবুবুর রহমান ঢাকায় ডিসি সম্মেলনে রয়েছেন। তার নম্বরে ফোন দিলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না মাহমুদ বলেন, ‘এ বিষয়ে স্যারের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযান চালানো হবে।’