![‘প্রকল্পের জন্য’ নদীর মাটি বিক্রি!](uploads/2024/03/11/1710141871.Manikganj-Isamoti-Nodi.jpg)
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নে প্রকল্পের দোহাই দিয়ে ইছামতি নদী থেকে মাটি কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে উঠেছে এ অভিযোগ। এ ছাড়া প্রভাব খাটিয়ে ভেকু মেশিন (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবলীগ নেতা ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে। রাতভর মাটি আনা-নেওয়ার কারণে ধুলোবালিতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা মুখ বুঝে সহ্য করছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিযান চালিয়ে নদী থেকে মাটি কাটা বন্ধ করা হবে।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার উথলী ইউনিয়নের কাতরাসিন গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদীর দুই প্রান্ত থেকে ইউপি সদস্য মান্নান ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা ফারুক রাতের আঁধারে মাটি কেটে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বিশেষ কোটায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাবিখা প্রকল্পের আওতায় উথলী বালিকা বিদ্যালয়সংলগ্ন রতিনের বাড়ি থেকে ড. মীর ফেরদৌস হোসেনের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণের জন্য ১৪ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে শ্রমিকের বদলে নদী থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা ভরাটের কাজ করা হচ্ছে। অবৈধভাবে নদী থেকে রাতভর মাটি কেটে আনা-নেওয়া করায় ধুলোবালিতে মসজিদ, বাড়িঘর, দোকানপাট ও রাস্তাঘাটসহ আশপাশের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। যারা মাটি কাটছেন তারা প্রভাবশালী হওয়ায় বিষয়টি নীরবে সহ্য করে যাচ্ছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক খান বলেন, ‘২০২২ সালে ইছামতি নদীতে খনন প্রকল্পে কাজ করার সময় আমার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বার্থে চাঁদা তুলে নদীতে যাওয়ার পথে মাটি ভরাট করে একটি সড়ক তৈরি করি। গত বছর মান্নান মেম্বার নদী থেকে মাটি কেটে রাস্তা নষ্ট করেন। এবারও রাস্তাটি মাটি ফেলে ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে একটি প্রকল্পে মাটি ফেলার জন্য সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাতের আঁধারে নদী থেকে মাটি কাটছেন।’
স্থানীয় মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘যুবলীগ নেতা ফারুক ও মান্নান মেম্বার নদী থেকে মাটি কেটে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই। নদী থেকে মাটি কাটার সময় তারা এলাকাবাসীকে বলছেন, নদীতে গোসল করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। নদী থেকে ভেকু দিয়ে অবৈধভাবে মাটি কাটার ফলে আবাদি জমিসহ বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়বে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি মেম্বারের কাছ থেকে মাটি কিনেছি। তবে কত টাকা দিয়ে কিনছি তা বলা যাবে না।’
ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, ‘চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রকল্পের রাস্তায় নদী থেকে মাটি ফেলা হচ্ছে। অন্য কোথাও বা কোনো বাড়িতে মাটি বিক্রি করিনি। ভাড়াদিয়া থেকে উথলী পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার নদীর কোথাও পানি নেই। তাই এলাকাবাসীর গোসলের সুবিধার্থে ওই জায়গা থেকে মাটি কাটছি।’ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে নদী থেকে মাটি কাটছেন কি না প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘চেয়ারম্যানের নির্দেশ ছাড়া কোনো বক্তব্য দেব না। প্রশাসনের কোনো অনুমতি আছে কি না তা উনি ভালো জানেন।’
মাটি কাটার বিষয়ে যুবলীগ নেতা ফারুক বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কোনো বক্তব্য দেব না। আমি শুধু মাটি কাটি আর বিক্রি করি।’ প্রকল্পের সভাপতি আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, ‘আমি বয়স্ক মানুষ। আমাকে সভাপতি করা হয়েছে। আপনি এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের সঙ্গে কথা বলেন।’
উথলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্বাস আলি বলেন, ‘আমি মাটি কাটা বা বিক্রির সঙ্গে জড়িত নই। প্রকল্পের রাস্তার জন্য মাটি এনে ভরাট করছি। কে নদী কাটছে সে ব্যাপারে আমি অবগত নই।’
শিবালয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুদেব কৃষ্ণ বলেন, ‘কাতরাশিন এলাকায় কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ২২-২৩ অর্থবছরের যে কাজটি করার কথা ছিল তা মাটির অভাবে সম্ভব হয়নি। সেই কাজটি দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে শেষ করার কথা বলা হয়েছে। আমি আজই সরেজমিনে ঘুরে বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, ‘নদী থেকে মাটি কাটার কোনো সুযোগ নেই। যেকোনো প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য সরকার টাকা দেয়। এমনটা করার কোনো সুযোগ নেই। শিগগিরই অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ কাজ বন্ধ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’