![শ্রীবরদীতে নামেই অডিটোরিয়াম, কাজে নেই!](uploads/2024/03/17/1710651688.3.-Sherpur-Auditorium.jpg)
অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ‘শহীদ শাহ্ মো. মুতাসিম বিল্লাহ খুররম বীর বিক্রম স্মৃতি অডিটোরিয়াম।’ শুরুর দিকে বেশ জমজমাট থাকলেও সংস্কারের অভাবে বর্তমানে পড়ে আছে বেহাল অবস্থায়। একটু বৃষ্টি হলেই ভেতরে পানি জমে যায়। অধিকাংশ চেয়ারগুলো ভাঙা। সিলিং খুলে পড়ে গেছে, ফ্যান ও বাতিগুলোও অচল। স্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা বলছেন, যে উদ্দেশ্যে এই অডিটোরিয়ামটি চালু করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন হয়নি। উপজেলায় খেলার মাঠের অভাব দীর্ঘদিনের। এর মধ্যে সাংস্কৃতিক চর্চাও বন্ধ হওয়ার পথে। সংকট সমাধানে তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। যদিও জেলা পরিষদ থেকে বলা হয়েছে, বরাদ্দ না থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১ কোটি ১৭ লাখ ৬৯ হাজার ৬৫১ টাকা ব্যয়ে ৫০০ আসন বিশিষ্ট শ্রীবরদী অডিটোরিয়াম কাম-কমিউনিটি সেন্টারটির কাজ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে সেটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন সংসদ সদস্য প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক। ২০১১ সালে অডিটোরিয়ামটির নামকরণ করা হয় ‘শহীদ শাহ্ মো. মুতাসিম বিল্লাহ খুররম বীর বিক্রম স্মৃতি অডিটোরিয়াম।’ কিন্তু যে উদ্দেশ্যে অডিটোরিয়ামটি নির্মাণ করা হয় তা ভেস্তে গেছে। শুরুর দিকে নির্মাণে ত্রুটি, সাউন্ড সিস্টেমে জটিলতাসহ নানা সমস্যা নিয়ে কিছুদিন চললেও এখন একেবারে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বৃষ্টি হলেই ভেতরে পানি জমে থাকে। নষ্ট হয়ে গেছে দেয়ালের পলেস্তারা। বৃষ্টির পানি পড়ায় দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় শেওলা পড়েছে। সাউন্ড সিস্টেমসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ চেয়ার ভাঙা। ভেতরের চারদিকের গ্লাসগুলোও অক্ষত নেই। চারদিকে আবর্জনায় ভরপুর নোংরা পরিবেশ। অব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু তদারকির অভাবে জায়গাটি জরাজীর্ণ হয়ে ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীরা জানান, যে উদ্দেশ্যে এই অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে তার বাস্তবায়ন হয়নি। সঠিক সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার না করায় শব্দের প্রতিধ্বনি হতো। এ কারণে সভা-সমাবেশসহ কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান এখানে আয়োজন করা যেত না। এখন তো এটি বন্ধই পড়ে আছে। ফলে ঝিমিয়ে পড়েছে শ্রীবরদীর সাংস্কৃতিক অঙ্গন। তাই দাবি উঠেছে, জনস্বার্থে ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় অডিটোরিয়ামটি দ্রুত সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করার।
সাংস্কৃতিক কর্মী সুন্দর আলী বলেন, শ্রীবরদীতে সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য কোনো জায়গা নেই। অডিটোরিয়াম চালু থাকলে সাংস্কৃতিক অঙ্গন অনেক চাঙা থাকত। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় সেটির কোনো সুফলও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অডিটোরিয়ামটি সংস্কার করে শ্রীবরদীর সাংস্কৃতিক অঙ্গন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি করেন তিনি।
কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অডিটোরিয়ামটি ব্যবহারের অনুপযোগী থাকায় সাংস্কৃতিক চর্চা ব্যাহত হচ্ছে। এতে তরুণরা সাংস্কৃতিক কার্যক্রম থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। দিন দিন তারা মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অন্যায় কাজে লিপ্ত হচ্ছেন। আমি চাই, দ্রুত সময়ের মধ্যে অডিটোরিয়ামটি সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবহারের উপযোগী করা হোক।’
সামাজিক সংগঠন ‘লোকাল বয়েজ’-এর প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এ জেড রুমান বলেন, ‘অডিটোরিয়ামটিতে শুরু থেকেই সঠিক সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার না করায় শব্দের প্রতিধ্বনি হতো, এটা বড় সমস্যা হিসেবে আমরা দেখেছি। আর বর্তমান অবস্থার কথা কী বলব, দেখলে মনে হবে এটা কোনো ভূতুড়ে ঘর।’
অডিটোরিয়াম না থাকায় শ্রীবরদীর সাংস্কৃতিক অঙ্গন একেবারে ঝিমিয়ে গেছে জানিয়ে এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘এটা চাঙা করা প্রয়োজন। উপজেলায় একদিকে খেলার মাঠ নেই, অন্যদিকে সাংস্কৃতিক চর্চার জন্যও ভালো পরিবেশ নেই। তাই আমরা সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে অডিটোরিয়ামটি সংস্কারের দাবি জানাই।’
শেরপুর জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুন নাহার শাম্মী বলেন, ‘বরাদ্দ না থাকায় শ্রীবরদীর অডিটোরিয়ামটি সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বরাদ্দ পেলে দ্রুতই সংস্কার করা হবে। এটি আবারও জাঁকজমকভাবে শুরু হবে।’
শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সংসদ সদস্য এ ডি এম শহিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘অডিটোরিয়ামটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে ইতোমধ্যে জেলা পরিষদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছে আধুনিকায়নের মাধ্যমে অডিটোরিয়ামটি সংস্কার করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আমি আশা করছি, শিগগিরই এটির সংস্কার, আধুনিকায়ন এবং সাউন্ড সিস্টেম জটিলতা নিরসনের কাজ শুরু হবে।’