![মানিকগঞ্জে ঈদের আগে খোঁড়াখুঁড়ি শহরজুড়ে ভোগান্তি](uploads/2024/04/05/1712288823.Manikganj-Road.jpg)
মানিকগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক তিনটি। এর মধ্যে শহিদ রফিক সড়কটি প্রধান রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অপ্রশস্ত সড়ক, ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য আর যানবাহনের যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে যানজট যেন এক শহরের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী।
আর ঈদ এলে এই যানজটের পরিমাণ বাড়ে কয়েক গুণ। তার ওপর কোনো ঘোষণা ছাড়াই ঈদের আগে গঙ্গাধরপট্টি সড়কে খোঁড়াখুঁড়িতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী, পথচারীরা। ব্যবসায়ীদের দাবি, ঈদের আগে এভাবে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করায় তাদের বেচাকেনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
পৌর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সিটি রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট (সিআরডিপি) প্রকল্পের আওতায় শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খাল খনন, দক্ষিণ পাশে ওয়াকওয়ে (হাঁটার রাস্তা), সৌন্দর্যবর্ধন এবং স্যুয়ারেজ ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ করছে অ্যাপেক্স এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের সামনে গঙ্গাধরপট্টি সড়কে স্যুয়ারেজ ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। এক্সকাভেটর দিয়ে রাস্তার মূল সড়কের মাটি অপসারণ করে বসানো হচ্ছে বড় বড় সিমেন্টের চাক। যার কারণে এই সড়কটিতে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল। এই সড়ক দিয়ে চলাচলরত সব যানবাহনের চাপ পড়েছে অন্য দুই সড়কে। সড়কের দুই পাশের বাসিন্দা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের লোকজন ভোগান্তিতে পড়েছেন।
পৌর বাসিন্দা আনোয়ার চৌধুরী বলেন, ‘মানিকগঞ্জ শহরটি খুবই ছোট। শহরের উত্তর দিকে গঙ্গাধরপট্টি সড়ক, মাঝখানে শহিদ রফিক সড়ক ও দক্ষিণে গার্লস স্কুল সড়ক। শহিদ রফিক সড়ক অপ্রশস্ত হওয়ায় গঙ্গাধরপট্টি সড়ক ও গার্লস স্কুল সড়ক দিয়ে যানবাহনগুলো সুবিধামতো চলাচল করে। কিন্তু দুই সপ্তাহ ধরে গঙ্গাধরপট্টি সড়কে ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় বাকি দুই সড়কে প্রচুর যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। কাজটা ঈদের পর শুরু করলে এমন ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।’
শহিদ রফিক সড়কের কাপড় ব্যবসায়ী অনুপ সাহা বলেন, ‘এ সড়কে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এমনিতেই যানজট লেগে থাকে। আর ঈদ উপলক্ষে শহরে যাত্রী, পথচারী ও যানবাহনের চাপ বাড়ে কয়েক গুণ। হঠাৎ করে গঙ্গাধরপট্টি সড়কটি খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বন্ধ থাকায় শহিদ রফিক সড়কে বাড়তি চাপ পড়েছে। তা ছাড়া যারা দূরদূরান্ত থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে শহরে কেনাকাটা করতে আসেন তারাও এবার বিপাকে পড়েছেন। তারাও যানবাহনের চাপের কারণে দোকানের সামনে মোটরসাইকেল রেখে কেনাকাটা করতে পারছেন না। এতে আমাদের বিক্রি কমে গেছে।’
গঙ্গাধরপট্টি সড়কের ব্যবসায়ী সুমন শিকদার বলেন, ‘প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আমাদের এই সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। পুরো রাস্তা খোঁড়ার জন্য দোকানে ক্রেতারাও আসতে পারেন না। যার কারণে দোকানপাট খোলা রাখলেও আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। ঈদের আগে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে তা ভাবিনি। আমাদের অনেক লোকসান হয়ে গেল।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি লাবলু মিয়া বলেন, ‘সিআরডিপি প্রকল্পের আওতায় শহরের খাল খনন, ওয়াকওয়ে, সৌন্দর্যবর্ধন এবং স্যুয়ারেজ ড্রেন নির্মাণের কাজ করছি আমরা। ওয়াকওয়ের কাজ চলমান আছে। শহিদ রফিক সড়কের স্যুয়ারেজ ড্রেনের কাজ শেষে আমরা গঙ্গাধরপট্টি সড়কে দুই সপ্তাহ আগে কাজ শুরু করেছি। এ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ থাকায় ঈদের আগে সড়কটি খুঁড়ে স্যুয়ারেজ ড্রেনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শহরবাসীকে সাময়িক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সেটা সত্য। কাজটি দ্রুতই শেষ করা হবে।’
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম গিয়াস উদ্দিন খবরের কাগজকে জানান, চলতি বছরের জুনের মধ্যে এ কাজটি শেষ করার কথা রয়েছে। এ কারণেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঈদের আগেই তাদের কাজ শুরু করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে ঈদের আগেই ওই কাজ শুরু করা হয়েছে, এ জন্য শহরে চলাচলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।