![কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ঢল](uploads/2024/04/12/1712926708.coxbazar-photo.jpg)
সকাল থেকে তপ্ত রোদ। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস জনজীবনে। তাতেই পা ফেলা দায় কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়িতে। তবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নীল জলরাশি গরমের অস্বস্তি ভুলিয়ে দিচ্ছে পর্যটকদের।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) ঈদুল ফিতরের পরের দিন দর্শনার্থীদের পদচারণায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে পর্যটন নগরী। দীর্ঘ একমাস পর স্বস্তি ফিরেছে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদেরও।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, পুরো রমজান মাস কক্সবাজার অনেকটা পর্যটকশূন্য ছিল। দর্শনার্থীর সেই খরা কেটেছে। ঈদের দিনেই ঢল নেমেছে ভ্রমণপিপাসুদের।
দেশের অধিকাংশ মানুষের বেড়ানোর জায়গা হিসেবে পছন্দের শীর্ষে থাকে কক্সবাজারে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। বিশেষ দিন ও টানা ছুটিতে এখানে পাহাড়-সমুদ্র, নদী ও ঝর্ণা দেখতে ভিড় করেন পর্যটকেরা। প্রতিবছরের মতো এবারও দীর্ঘ ছুটিতে ঈদের দিনই কক্সবাজারমুখী হয়েছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
এর আগে ঈদকে সামনে রেখে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে রমজান মাসজুড়ে হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টগুলো নান্দনিক সাজে সজ্জিত করা হয়। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের দিন থেকে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁর পাশাপাশি অধিকাংশ দোকানপাটও খুলেছে।
শুক্রবার সকাল থেকে সমুদ্রসৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবনী পয়েন্টে পর্যটকরা নামতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। সকাল থেকে কলাতলী থেকে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতে অন্তত লাখো দর্শনার্থী নামেন বলে জানিয়েছেন সৈকতে দায়িত্বরত কর্মীরা।
বিকেলে সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সের মানুষ সাগরের নোনাজলে গোসলে নেমেছেন। কেউ সৈকতে ঘোড়ায় চড়ে সমুদ্র দর্শন করছেন, কেউ আবার ওয়াটার বাইক ও বিচ বাইকে সৈকত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কিটকটে (চেয়ার-ছাতা) গা এলিয়ে দিগন্ত ছোঁয়া নীল জলরাশিতে মজেছেন। কেউ কেউ বালুচরে দাঁড়িয়ে প্রিয়জনদের এসব আনন্দঘন মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করে রাখছেন।
শহরের বাইরেও পর্যটকরা কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সৈকতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এই সড়কে সৈকত ছাড়াও আছে পাহাড়-ঝর্ণা, প্রাকৃতিক গুহাসহ নানা দর্শনীয় স্থান।
এ ছাড়া সাগরদ্বীপ মহেশখালী ও সোনাদিয়া, রামু বৌদ্ধ বিহার, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেও পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। সেন্টমার্টিন ভ্রমণে পর্যটকদের প্রবল আগ্রহ থাকলেও নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় সেখানে যেতে পারছেন না দর্শনার্থীরা।
রাজধানীর গাবতলীর ব্যবসায়ী আব্দুর আউয়াল সাগরে নেমেছেন স্ত্রী ও স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে। কোমড় সমান পানিতে ভাসছেন টিউবে। আধা ঘণ্টা পর বালুচরে উঠে বসেন চেয়ার-ছাতা কিটকটে।
হারুন নামের আরেক পর্যটক বলেন, নোনাজলে শরীর ভেজাতেই কক্সবাজারে ছুটে আসা।
সৈকতে দায়িত্বরত বিচকর্মী বেলাল উদ্দিন ও মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘স্থানীয়দের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পর্যটকরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। শুধু ঈদের দিনেই অন্তত ৪০ হাজার পর্যটক সৈকতে নেমেছেন। শুক্রবার থেকে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে।’
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির পাশা পল্লব বলেন, ‘পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে কক্সবাজারকে। হোটেল-মোটেল ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। পর্যটকরা এবার ভিন্ন কক্সবাজারকে দেখতে পাবেন আশা করা হচ্ছে।’
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ‘ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে এবার পাঁচ লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটবে কক্সবাজারে। ইতোমধ্যে চার শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউসের ৯০ শতাংশ কক্ষ ভাড়া হয়ে গেছে।’
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে খাবারের অতিরিক্ত মূল্য আদায় হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খাবার টেবিলে মূল্যতালিকা রাখা থাকে। পর্যটকরা তালিকা দেখেই যেন খাবারের চাহিদা দেন।’
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঈদের দিন ও পরের দিন সৈকতে নেমেছেন অন্তত এক লাখের বেশি পর্যটক। সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারাও আছেন। শুক্রবার ঈদের দ্বিতীয় দিনে সৈকতে নামতে পারেন দেড় থেকে দুই লাখ পর্যটক। বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই শতাধিক ট্যুরিস্ট পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরপরও ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান বলেন, ‘হোটেলেকক্ষ ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। অতিরিক্ত ভাড়া যেন আদায় না হয়, সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পৃথক কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন। হোটেলেকক্ষ ভাড়ার বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মুহিববুল্লাহ মুহিব/জোবাইদা/অমিয়/