![শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন অদম্য রাব্বির](uploads/2024/05/13/Rabbi-1715571057.jpg)
পা দিয়ে লিখে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে রফিকুল ইসলাম রাব্বি। তার এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত সহপাঠী থেকে শুরু করে শিক্ষক, শিক্ষিকা, পরিবার-পরিজন এবং এলাকাবাসী। খুশিতে আত্মহারা সবাই।
রাব্বির বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। তার বাবা বজলুর রহমান জানান, জন্মগতভাবে রাব্বি সুস্থ এবং স্বাভাবিক ছিল। ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয় রাব্বি। পরে চিকিৎসক তার দুই হাত কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। তার হাত দুটি কেটে ফেলার পর সবাই ভেবেছিল রাব্বির শিক্ষাজীবন শেষ। কিন্তু অদম্য রাব্বি নিজেকে হারিয়ে যেতে দেয়নি। চালিয়ে গেছে লেখাপড়া। ছিল পরিবার এবং শিক্ষকদের উৎসাহ। গড়ে তুলে পায়ে লেখার অভ্যাস। সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম। যার ফল পেল জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায়।
অধ্যবসায়, ধৈর্য এবং একাগ্রতার কারণে কোনো বাধাই তার সামনে দাঁড়াতে পারেনি। সব বাধা পেরিয়ে হাজী তোবারক আলী উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সে অংশগ্রহণ করে। সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। একই বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৩ দশমিক ১১ পয়েন্ট পেয়ে পাস করেছে তার ছোট বোন রুকাইয়া আকতারও।
এখন সীতাকুণ্ডজুড়ে প্রশংসায় ভাসছে রাব্বি। ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সহপাঠীরা তাকে মিষ্টিমুখ করায়।
রাব্বি বলে, ‘নিজেকে কখনো শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে ভাবিনি। ওদের হাত আছে আমার নেই। ওরা হাত দিয়ে লিখেছে, আমি পা দিয়ে লিখেছি। আমার মনোবল সব সময় শক্ত ছিল। যার কারণে ভালো ফল পেয়েছি। ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চাই।’
ছেলের ভালো ফলাফলে আনন্দে আত্মহারা রাব্বির বাবা-মা। পা দিয়ে লিখে তাদের ছেলে এমন ভালো ফলাফল করবে তা কল্পনাও করেননি তারা। তবে রাব্বি যেভাবে দিনরাত পরিশ্রম করে পড়ালেখা করেছে তাতে তাদের বিশ্বাস ছিল ছেলে অন্তত পাস করবে।
বজলুর রহমান বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। এটা আমার ছেলের নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের ফল। অগণিত মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা আমার ছেলের সঙ্গে আছে। রাব্বি নিজে পড়ার পাশাপাশি তার ছোট বোন রুকাইয়াকেও গাইড করেছে। যে কারণে এবার তার বোন রুকাইয়াও পাস করেছে।
পেশায় দিনমজুর বজলুর রহমান জানান, যে দিন যে কাজ পান তা করে সংসার চালান। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। ছোট ছেলেকে হেফজখানায় দিয়েছেন। সন্তানরা যত বড় হচ্ছে লেখাপড়ার খরচ তত বাড়ছে। বাড়তি খরচ জোগাতে তাদের মা রোজি আকতারও দিনমজুর হিসেবে খেতে কাজ করেন। ছেলেমেয়েরা যতটুকু পড়তে চায় তাদের পড়াবেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দুর্ঘটনার পর ক্ষতিপূরণ পাননি। এমনকি মামলা করে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার চেষ্টা করার সাহসও করেননি। কারণ মামলা চালানোর মতো সামর্থ্য তার নেই। তবে যে ব্রিজ নির্মাণের সময় দুর্ঘটনায় রাব্বির হাত পুড়ে গেছে সেই ঠিকাদার স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল। এ ছাড়া স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অন্যরা মিলে আরও এক লাখ টাকা দিয়েছিল। এই দেড় লাখ টাকা হাসপাতালের ১৫ দিনের খরচও হয়নি।
ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী উচ্চবিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য বলেন, আমরা মুগ্ধ যে রাব্বি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও অন্যান্য শিক্ষার্থীর চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে। আমি আশা করি সে জীবনে অনেক বড় হবে। রাব্বির মনোবল দেখে মনে হয়নি যে সে শারীরিকভাবে অক্ষম ছিল। আমি বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ করব রাব্বির পড়াশোনায় সহায়তায় যেন এগিয়ে আসেন।