ছিন্নমূল মানুষ, প্রতিবন্ধী ও ভিক্ষুকদের প্রতিদিন দুপুরের খাবার দিচ্ছে ‘সেবাতরী ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন। সংগঠনটি ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতামূলক কাজ করা হয়।
মানিকগঞ্জের সন্তান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার দপ্তরের উপ-পুলিশ কমিশনার এনায়েত করিম রাসেলের নিজ হাতে গড়া এই সেবাতরী ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির মাধ্যমে তিনি প্রতিদিন অনাহারী মানুষের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেন। অনাহারী মানুষরা দুপুর হলেই তাদের মেহমানখানায় ছুটে আসেন। একেক দিন দেওয়া হয় একেক ধরনের খাবার। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য যারা এখানে আসতে পারেন না, তাদের খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়। ফাউন্ডেশনের নিজস্ব অর্থায়নে চলে এসব খাবারের আয়োজন।
সেবাতরী ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক ফারাবী রহমান বাঁধন জানান, ‘আমরা আছি আপনার পাশে’- স্লোগানে সেবাতরী ফাউন্ডেশন ২০২০ সালের ২৫ এপ্রিল ১০০ জন ছিন্নমূল মানুষ, প্রতিবন্ধী ও ভিক্ষুকদের ইফতারি বিতরণের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে। দীর্ঘ এক মাস ইফতারি বিতরণের পর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এনায়েত করিম রাসেল উদ্যোগ নেন প্রতিদিন দুপুরে ১০০ জন মানুষকে দুপুরের খাবার খাওয়ানোর। তারপর থেকেই দীর্ঘ পাঁচ মাসের মতো প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন রকমের খাবার রান্না করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এখন মানিকগঞ্জ শহরের শহিদ স্মৃতি স্তম্ভের সামনের ফাঁকা জায়গায় মেহমানখানা বানিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।
স্বেচ্ছাসেবক কবির হোসেন জানান, সেবাতরী ফাউন্ডেশনের মূল উদ্দেশ্য হলো ক্ষুধার্ত মানুষদের দুপুরের খাবার খাওয়ানো। আমরা প্রায় চার বছর ধরে এই কাজ করে আসছি। যেদিন থেকে আমাদের কাজ শুরু হয়েছে তারপর থেকে এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি।
রিকশাচালক হোসেন আলী বলেন, ‘আমরা জোহরের আজান দেওয়ার পরই স্টেডিয়ামের কাছে চলে আসি। সেখানে একেক দিন একেক রকমের খাবার দেয়। কোনো দিন ভাতের সঙ্গে মাংস বা মাছ। আবার কোনো দিন ডিম আর ডাল। পোলাও, বিরিয়ানি কিংবা খিচুড়িও খেতে দেয়। আমি প্রায় তিন বছর ধরে এখানে দুপুরের খাবার খাই। আমার মতো ৪০-৫০ জন দুপুরে সেবাতরীর খাবার খায়।’
পুলিশ কর্মকর্তা এনায়েত করিম রাসেল জানান, তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এক দিন এক টাকা ভাড়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে একজনের সঙ্গে দেখা করতে পুরান ঢাকায় যান। পরিকল্পনা ছিল এক টাকা ভাড়া দিয়ে আবার ক্যাম্পাসে ফিরবেন। দুপুরের খাবার ক্যাম্পাসেই খাবেন। কিন্তু যার কাছে গিয়েছিলেন তিনি তখন ছিলেন না। অপেক্ষা করতে করতে দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছিল। ক্ষুধাও লেগেছিল। এমন সময় তার চোখে পড়ে ‘অন্নছত্র’ নামের এক সংগঠন। তারা দুপুরে ক্ষুধার্ত মানুষদের খাবার দেয়। রাসেল তখন বিনাপয়সায় অন্নছত্রতে গিয়ে দুপুরের খাবার খান।
করোনা ও বন্যায় অনাহারী মানুষদের দেখে তখন অন্নছত্র ফাউন্ডেশনের কথা মনে পড়ে তার। ছিন্নমূল মানুষদের পাশে দাঁড়াতে গঠন করেন ‘সেবাতরী ফাউন্ডেশন’। সংগঠনটির মাধ্যমে প্রতি রমজানে ১০০ জনের ইফতারির আয়োজন করেন। ঈদের দিনও খাবারের আয়োজন করেন। সেই থেকে চলছে এই ফাউন্ডেশনের কাজ।
পুলিশ কর্মকর্তা রাসেল জানান, সেবাতরী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মানিকগঞ্জের ছিন্নমূল মানুষ, প্রতিবন্ধী, ভবঘুরে ও ভিক্ষুকদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নিজেদের অর্থায়নেই এই কাজ করে যাচ্ছি। তবে মাঝে মধ্যে আমাদের মাধ্যমে অন্যরা খাবারের ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া গরিব ও বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জন্য কাফনের কাপড় ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র সাধ্য অনুযায়ী বিনামূল্যে সরবরাহ করার জন্য ‘শেষ ঠিকানা’ নামের একটি কার্যক্রম চালু আছে।