![দর কষাকষি করে ঘুষ নেন তারা](uploads/2024/06/22/Engineers-hush-money-viral--1719030728.jpg)
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ কার্যালয়ে এক ঠিকাদারের কাছ থেকে প্রকাশ্যে দুই প্রকৌশলীর ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের মধ্যে ঘুষ নিয়ে দর-কষাকষি চলছে। পরিষদের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আগেও নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল।
ভিডিওতে থাকা মো. জহির জেলা পরিষদের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার। দুই প্রকৌশলীর একজন হলেন জেলা পরিষদের বর্তমান উপসহকারী প্রকৌশলী কাঞ্চন কুমার পালিত এবং অন্যজন সাবেক সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কুদ্দুস। জেলা পরিষদে সহকারী প্রকৌশলীর পদটি গত কয়েক মাস ধরে খালি থাকায় কাঞ্চন কুমার এ পদেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা পাঁচ মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ঠিকাদার জহির ঘুষ নিয়ে প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং টাকা গুনে তাদের দিচ্ছেন। দুই প্রকৌশলী জহিরের কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। জহির ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। পরে জহির পকেট থেকে টাকা বের করে গুনে প্রকৌশলীদের হাতে দেন।
ভিডিওতে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের আলাপে শোনা যায়, এই ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ভাগ করে নেবেন কাঞ্চন ও কুদ্দুস। জহিরকে বলতে শোনা যায়, ঘুষের আরও কিছু টাকা জেলা পরিষদের অ্যাকাউন্স অফিসার গোপাল বোসকেও দিতে হবে। ‘স্যারও পাবেন’ বলে আলাপচারিতায় উল্লেখ করা হয়। তবে এ স্যার কাকে সম্বোধন করা হয়েছে, তার নাম কেউ সে সময় বলেননি।
ঘুষ নেওয়ার ভিডিও বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী কাঞ্চন কুমার পালিত বলেন, ‘এই ভিডিওটি এক বছর আগের। জহির নামের ওই ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের কোনো ঠিকাদার না। জেলা পরিষদের একটি জরুরি মেরামত কাজের বিলের টাকা দেওয়ার সময় গোপনে এই ভিডিও ধারণ করা হয়। সে সময় আরেক ঠিকাদার থেকে সাব কন্টাক্টে একটি কাজের টাকা নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়েছিল। আর সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কুদ্দুস ৭ মাস আগে এখান থেকে বদলি হয়ে গেছেন। এই ভিডিও দিয়ে জহির আমাকে ও তাকে প্রায় সময় হুমকি দিতেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা পরিষদের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার মো. জহির। তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীলের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। জেলা পরিষদের অর্থায়নে একটি কাজ পেতে ঘুষ দেওয়ার এ ঘটনা ঈদুল আজহার কয়েক দিন আগের। গত বৃহস্পতিবার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ভিডিওতে থাকা প্রকৌশলীদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করা জহিরের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীল বলেন, ‘ভিডিওটি আমি দেখেছি। উপ-সহকারী প্রকৌশলী কাঞ্চন পালিতের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। তাকে বদলির জন্য মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটারও দেওয়া হয়েছে। আর সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কুদ্দুস আর এখানে কর্মরত নেই। তিনি বদলি হয়ে গেছেন।’
ঠিকাদার জহিরের বিষয়ে চন্দন শীল বলেন, ‘জহির একসময় আমার সঙ্গেই থাকত। কিন্তু সে একটা বাটপার, আমার নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্ম করার চেষ্টা করত। আমি জানতে পেরে তার পরিষদে ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছি। এখানে দেখা যাচ্ছে, জহির নিজেই ভিডিওটি করছে। কেন করছে জানার চেষ্টা করব। এই কার্যালয়ে আমি কারও কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি বা অপকর্ম সহ্য করব না।’
প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভিডিওতে থাকা সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কুদ্দুস বদলি হয়ে গেছেন। উপসহকারী প্রকৌশলী কাঞ্চন কুমার পালিতের বিরুদ্ধে সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের সময়কাল থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। পাশাপাশি ঘুষ নেওয়ার ভিডিও সরকারের উচ্চ পর্যায়েও পাঠানো হবে।