![এখনো পানিবন্দি ১৭ লাখ মানুষ](uploads/2024/06/23/Sylhet_Bonna-1719154578.jpg)
ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও নেত্রকোনায় বন্যা দেখা দিয়েছে। তবে এসব জেলার বন্যাকবলিত এলাকা থেকে ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করেছে। তার মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজারের কোনো কোনো এলাকার মানুষ বসতবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। তবে ওই তিন জেলায় এখনো পানিবন্দি রয়েছে ১৭ লাখ মানুষ।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ব্যুরো ও জেলা প্রতিনিধিরা জানান-
ঢাকা: আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
রবিবার (২৩ জুন) নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানির স্তর হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুশিয়ারা ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা নদীর পানির স্তর সময়বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে।
সিলেটে ফেঞ্চুগঞ্জের পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি
সিলেটের প্রায় সব উপজেলাতেই নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু ব্যতিক্রম সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায়। সারা সিলেটে যখন পানি নামছে, তখন ফেঞ্চুগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এই উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে ৫টি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের হাজারও মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বাড়িঘর পানিতে ডুবে থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। এদিকে সিলেট জেলায় এখনো পানিবন্দি রয়েছে সাড়ে ৮ লাখ মানুষ।
রবিবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিলেটে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৭ জন বন্যাকবলিত। এর মধ্যে মহানগরে ১৫ হাজার মানুষ। বর্তমানে মহানগরের ৮টি ওয়ার্ড জেলার ১০৭টি ইউনিয়নে বন্যার পানি রয়েছে। সিলেটে বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে আছে ১৯ হাজার ৭৩৮ জন মানুষ। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। পৌঁছানো হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধপত্র।
এদিকে একটানা তিন দিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সিলেট মহানগরেরও বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামছে। তবে নিচু এলাকা এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে। সুরমা নদীর পানি কমলেও নগরীর পানি নামছে ধীরগতিতে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বসতবাড়িতে ফিরছেন বাসিন্দারা। তবে যারা বাড়ি ফিরেছেন তারা পোহাচ্ছেন নানা ভোগান্তি। বন্যার্তরা জানিয়েছেন, পানি কমার সঙ্গে দুর্ভোগও বাড়ছে।
এদিকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর পাড়ে পূর্ব পিটাইটিকর নয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. লুকুস মিয়া বলেন, ‘ঈদের আগের দিন পানি ওঠে আমাদের বাড়িতে। এখনো পানিবন্দি আছি আমরা। এখন পর্যন্তু কেউ এসে আমাদের কোনো খোঁজ-খবর নেননি। চেয়ারম্যান, মেম্বার, এমপি অনেক হর্তাকর্তা আছেন। কিন্তু আমাদের কেউ একটু সাহায্য করেননি। আমার বাচ্চা-কাচ্চা, গরু-বাছুর নিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি। পানি যেদিন ঢুকেছে সেদিন ঘরের অর্ধেক মালামাল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন দুয়েকটি কাঁথা-বালিশ আছে। এগুলোতেই পরিবার নিয়ে কোনোভাবে বসবাস করছি।’
মৌলভীবাজারে দুর্ভোগে হাওর পাড়ের বাসিন্দারা
উজানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌলভীবাজার সদরের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও হাওরাঞ্চলে অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে দুর্ভোগে রয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে মনু ও ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে বন্যাকবলিত এলাকার প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে বাড়ছে ভিড়। বন্যায় দুর্ভোগে সবচেয়ে বেশি পড়েছে জুড়ী, বড়লেখা ও কুলাউড়ার মানুষ। জেলার ৭ উপজেলার ৪৯টি ইউনিয়নের ৪৭৪টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি রয়েছে।
রবিবার সকালে জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওর পাড়ের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে পরিপূর্ণ হাকালুকির হাওরাঞ্চল। ছোট-বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে হাওরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।
জেলা প্রশাসক ড. ঊর্মি বিনতে সালাম জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে রয়েছে। পানিবন্দি এলাকার মানুষকে শুকনো খাবার ও চাল দেওয়া হচ্ছে।
সুনামগঞ্জে সব পর্যটন স্পট খুলে দেওয়া হয়েছে
সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় রবিবার দুপুরে টাঙ্গুয়ার হাওরসহ তাহিরপুরের সব পর্যটন স্পট আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখনো পানিবন্দি রয়েছে প্রায় ৫ লাখ মানুষ।
তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভীন বলেন, গত কয়েক দিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তাই আজকে (রবিবার) থেকে আবারও তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরসহ সব পর্যটন স্পট খুলে দেওয়া হয়েছে।
নেত্রকোনায় কমেনি মানুষের দুর্ভোগ
নেত্রকোনায় প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। এর ফলে বন্যা প্লাবিত বসতবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে কলমাকান্দা উপজেলার উব্দাখালী নদীর পানি এখনো ৩৯ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে গুতুরা বাজার থেকে বড়খাপন সড়ক এখনো অনেকটাই পানির নিচে ডুবে আছে। এই সড়ক দিকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।
জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ জানান, বন্যার্তদের সেবায় ৮৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।