![বৃষ্টি হলেই বাড়ে পাহাড়ধসের শঙ্কা](uploads/2024/07/02/rangamati-1719890688.jpg)
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও শুরু হয়েছে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত। এই সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায়ও ভারী বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ধসের সতর্কতা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাঙামাটিতে ২০১৭ সালের ১৩ জুন পাহাড়ধসে ৫ সেনাসদস্যসহ ১২০ জন প্রাণ হারান। পরের বছর ২০১৮ সালে পাহাড়ধসে আরও ১১ জন মারা যান। এরপর থেকেই বর্ষা মৌসুম এলেই শঙ্কা বাড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের। তবে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় প্রাণহানি ও সম্পদের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এর মধ্যেই গত শুক্রবার দুপুর থেকে থেমে থেমে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
ভারী বর্ষণে রাঙামাটিতে পাহাড়ধস ও ভূমিধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জেলা শহরসহ ১০ উপজেলায় পাহাড়ধসের সতর্কতা জানিয়ে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে প্রচার চালাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। এর মধ্যেই জেলায় ২৬৭টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ত্রাণসামগ্রী মজুত রেখেছে জেলা দুর্যোগ কমিটি।
এদিকে শুক্রবার দুপুর থেকে জেলায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। থেমে থেমে চলছে মাঝারি ও ভারী বর্ষণ। তবে গত রবিবার সকাল থেকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। রবিবারও দিনভর করা হয়েছে মাইকিং। ভারী বৃষ্টিপাত দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের পাদদেশে যারা বসবাস করছেন, তাদের স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যেতে বলা হয়েছে। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে কেউ যাননি।
অন্যদিকে জেলা শহরে পাহাড়ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ৩১টি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে শহরের লোকনাথ মন্দির, বেতার এলাকার নতুনপাড়া, শিমুলতলী, টিভি স্টেশন এলাকার রূপনগর, যুব উন্নয়ন এলাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। রাঙামাটিতে কী পরিমাণ মানুষ পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে বাস করছে, সেটার পরিসংখ্যান নেই জেলা প্রশাসনের কাছে। তথ্য বলছে, প্রায় প্রতিদিনই বসতি বাড়ছে ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায়। স্বল্প আয়ের মানুষ কম মূল্যে এসব জমি পেয়ে বসতি গড়ছে। তবে জেলা প্রশাসনের পুরোনো তথ্যমতে, জেলায় ৫ হাজার পরিবারের ২০ হাজার মানুষ ঝুঁকিতে বাস করছে।
জেলা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক ক্যাচিংনু মারমা জানান, জেলায় ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি আরও বাড়তে পারে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রবিবার বিকেলে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। এতে পাহাড়ধসে করণীয় সম্পর্কে প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা হয়। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত, প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন ও পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়দের নিরাপদে আশ্রয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘জেলায় এখনো ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি। ইতোমধ্যে জেলায় ২৬৭টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা দুর্যোগ কমিটির কাছে ১৬৫ টন চাল, নগদ এক লাখ টাকা, ২০০ বান্ডিল ঢেউটিন, ৩০০ কম্বল ও ২০০ তাঁবু মজুত রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তবে পাহাড়ধসের ক্ষয়ক্ষতি রোধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আমরা সচেতন করছি। মাইকিং করা হচ্ছে। প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগগুলো প্রস্তুত আছে। কুইক রেসপন্স টিম ও স্বেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুত আছে। উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওদের প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’