![পিরোজপুরে ৪০ বছরের অনাবাদি জমিতে ফসল চাষ](uploads/2024/03/11/1710147828.pirojpur.jpg)
পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম দেউলবাড়ী। উপজেলা শহর থেকে সরাসরি দেউলবাড়ী গ্রামে যেতে নেই কোনো সড়কপথ। এ গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র সহজ মাধ্যম নৌকা। গ্রামটির চারপাশে নদী-খাল বেষ্টিত হওয়ায় এখানকার বেশির ভাগ কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা লেগে থাকত। তবে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে গ্রামের ১০০ জন কৃষক গঠন করেন গ্রাম সমিতি। নিজেদের অর্থায়নে প্রায় ৫০০ বিঘা অনাবাদি জমির চারপাশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে ধান চাষের আওতায় আনেন। মাত্র দুই বছরের সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন তারা। বেড়িবাঁধটি নির্মাণ হওয়ায় পাল্টে গেছে গ্রামটির অর্থনৈতিক দৃশ্যপট।
দেউলবাড়ী গ্রামের কৃষকরা এখন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মে মাসে বোরো ধানের ফলন ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। তবে ৫ বছর আগেও এই স্বপ্ন ছিল অবাস্তব। যে জমিতে কৃষকরা বর্তমানে দিনরাত পরিশ্রম করছেন, সেই জমি ছিল বিল অঞ্চল। প্রায় সারা বছরই পানিতে তলিয়ে থাকত জায়গাটি। গত ৩০ থেকে ৪০ বছর এই জমিতে কোনো ফসল ফলানো না গেলেও এখন চাষ হচ্ছে ধান, শাক-সবজিসহ নানা শস্য।
কৃষক মামুন হোসেন জানান, এ গ্রামে সব সময় খাদ্য সংকট দেখা দিত। বিস্তৃত জমিতে ধান উৎপাদন না হওয়ায় গ্রামের সবাইকে বাহির থেকে চড়া দামে চাল কিনতে হতো। বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অনুন্নত জীবনমান এ গ্রামের দীর্ঘদিনের সাথি। এদিকে ছিল খাদ্যসংকট অন্যদিকে ছেলেমেয়েরা ছিল শিক্ষায় পিছিয়ে। সব মিলিয়ে অবহেলিত গ্রাম হিসেবে পরিচিত দেউলবাড়ী গ্রামটি। জনপ্রতিনিধিদের কাছে মাত্র সাড়ে ৩ কিলোমিটার একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি ছিল। তবে বছরের পর বছর পার হলেও সেই দাবি কখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তাই গ্রামের কৃষকরা নিজেরাই পুরো সাড়ে ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেন। বেড়িবাঁধ নির্মাণ হওয়ায় জমির দাম কয়েকগুণ বেড়েছে, সেই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় নৌকা ছাড়াই ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়া-আসা করছে।
দেউলবাড়ী গ্রামের অনেক কৃষকই অন্য গ্রামে গিয়ে কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন নিজ গ্রাম ও নিজ জমিতেই চাষাবাদ করতে পারছেন।
দেউলবাড়ী কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি দেউলবাড়ী ইব্রাহিম গাজী বলেন, ‘এ গ্রামে পড়ে থাকা প্রায় ৫০০ বিঘা অনাবাদি জমিকে কীভাবে চাষের আওতায় আনা যায় সেটিই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা কয়েকজন কৃষক চিন্তা করি কীভাবে এই গ্রামের প্রায় ৫০০ বিঘা অনাবাদি জমিতে ধান চাষ করা যায়। পরে সবার আলোচনায় গ্রামের ১০০ জন কৃষক সম্মিলিত উদ্যোগে গ্রাম সমিতি গঠন করে নিজ অর্থায়নে প্রায় ৫০০ বিঘা অনাবাদি জমির চারপাশে মাটি দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে ধান চাষের আওতায় আনি। আমরা সফল হয়েছি, জমিটা কাজে লাগানো হয়েছে। এখন এই অনাবাদি ৫০০ বিঘা জমিতে ধান, শাক-সবজিসহ নানান কৃষি উৎপাদন করা হয়। এখনো অনেকটা জমি জলাবদ্ধ আছে সেটিও কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বেড়িবাঁধটি নির্মাণের ফলে একদিকে যেমন কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে তেমনি যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও পাল্টে যাচ্ছে আমাদের গ্রামের অর্থনৈতিক চিত্র।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সিকদার বলেন, দেউলবাড়ী গ্রামের কৃষকদের উদ্যোগটি দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। কৃষি উদ্যোক্তাদের সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। গত দুই বছরে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি চাষের আওতায় এসেছে। জেলায় মোট কৃষি জমি রয়েছে ৮৯ হাজার ৩৪৫ হেক্টর। আর এই জমিতে ১ লাখ ৮১ হাজার ৮১০টি কৃষক পরিবার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।