![ইউরোপীয় উড়ন্ত গাড়ির প্রযুক্তি কিনে নিল চীন](uploads/2024/03/28/1711615495.eu.jpg)
ইউরোপে তৈরি এবং পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে সফল হয়েছে- এমন একটি উড়ন্ত গাড়ির প্রযুক্তি কিনে নিল চীনা কোম্পানি। ‘এয়ারকার’ নামের এই উড়ন্ত গাড়িটি বিএমডব্লিউ ইঞ্জিন ও স্বাভাবিক জ্বালানি দ্বারা চালিত। ২০২১ সালে স্লোভাকিয়ার দুটি বিমানবন্দরের মধ্যে ৩৫ মিনিটের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে উড়েছিল এয়ারকারটি। ওড়া ও অবতরণের জন্য রানওয়ে ব্যবহার করেছিল উড়ন্ত গাড়িটি। খবর বিবিসির।
ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, একটি গাড়ি থেকে বিমানে রূপান্তরিত হতে এয়ারকারটির মাত্র দুই মিনিট থেকে কিছু বেশি সময় লেগেছে।
এখন উড়ন্ত গাড়িগুলো চীনের একটি ‘নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে’ ব্যবহার করা হবে। হেবেই জিয়ানসিন ফ্লাইং কার টেকনোলজি কোম্পানি এয়ারকার এয়ারক্রাফট তৈরি এবং ব্যবহার করার জন্য একটি অপ্রকাশিত এলাকা কিনে নিয়েছে। হেবেই জিয়ানসিন ফ্লাইং কার টেকনোলজি কোম্পানির সদর দপ্তর চীনের কাংঝোতে অবস্থিত।
এয়ারকার তৈরিকারক কোম্পানি ক্লেইনভিশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা অ্যান্টন জাজ্যাক বলেছেন, এয়ারকার অন্য একটি স্লোভাক বিমান প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে কোম্পানি অধিগ্রহণের পরে নিজস্ব বিমানবন্দর এবং ফ্লাইট স্কুল তৈরি করেছে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) বিপ্লবের বিকাশের পথে নেতৃত্ব দেওয়ার পরে, চীন এখন সক্রিয়ভাবে উড়ন্ত পরিবহনের বিকাশে কাজ করছে।
গত মাসে অটোফ্লাইট নামে একটি প্রতিষ্ঠান শেনজেন এবং ঝুহাই শহরের মধ্যে যাত্রী বহনকারী ড্রোনের একটি পরীক্ষামূলক ফ্লাইট চালিয়েছিল। যেখানে গাড়িতে করে তিন ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে এই যাত্রাটি ২০ মিনিটে শেষ হয়েছিল। তবে কোম্পানিটি বলছে, এয়ারক্রাফটিতে কোনো যাত্রী ছিল না।
বিবিসি জানায়, ২০২৩ সালে চীনা প্রতিষ্ঠান ‘ইহ্যাং’ তাদের বৈদ্যুতিক উড়ন্ত ট্যাক্সির জন্য চীনের সরকারের পক্ষ থেকে একটি নিরাপত্তা প্রশংসাপত্র পেয়েছিল। যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, উড়ন্ত ট্যাক্সিগুলো ২০২৮ সালের মধ্যে আকাশের একটি নিয়মিত বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠতে পারে।
কিন্তু এই ড্রোনসদৃশ যাত্রীবাহী বিমানের মতো এয়ারকারের এয়ারক্রাফটগুলো উল্লম্বভাবে উড্ডয়ন বা অবতরণ করে না। তবে এগুলোর জন্য রানওয়ের প্রয়োজন হয়।
বিবিসি জানায়, উড়ন্ত গাড়ির এই প্রযুক্তিটি কত দামে বিক্রি করেছে তা বলতে অস্বীকার করেছে ক্লেইনভিশন। এয়ারকারকে ২০২২ সালে স্লোভাক ট্রান্সপোর্ট অথরিটি কর্তৃক এয়ারওয়ার্থিনেসের একটি প্রশংসাপত্র দেওয়া হয় এবং চলতি বছরের শুরুতে ইউটিউবার মিস্টার বিস্টের দ্বারা প্রকাশিত একটি ভিডিওতে তাদের কর্মকাণ্ড প্রদর্শিত হয়েছিল। প্রসঙ্গত, এয়ারওয়ার্থিনেস বলতে বোঝায় একটি বিমান নিরাপদে উড্ডয়ন, অবতরণ ও পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় সব মানদণ্ড পূরণ করে কি না। এই মানদণ্ডগুলো বিমানের নকশা, নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার সঙ্গে সম্পর্কিত।
বিবিসির মতে, অবকাঠামো, নিয়ন্ত্রণ ও জনসাধারণের কাছে প্রযুক্তিটির গ্রহণযোগ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে এই ধরনের পরিবহনের ক্ষেত্রে এখনো যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
বিমান চলাচল পরামর্শদাতা স্টিভ রাইট বলেন, ব্যক্তিগত যাতায়াতের এই সাহসী নতুন জগৎটি একটি বড় সমতাবিধানকারী হয়ে উঠতে কাজ করছে। খাতটিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা চলছে এবং প্রত্যেকে একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রশ্ন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, (খাতের বিকাশের জন্য) যেই প্রশ্নটি আসলেই জিজ্ঞাসা করা দরকার।
রাইট আরও বলেন, এই ক্ষেত্রে পশ্চিমের ঐতিহ্য হলো, তারা কখনো কখনো নতুন জিনিসগুলোকে ধীর করে দিতে পারে। কারণ এই নতুন প্রযুক্তিগুলোকে পুরোনো জিনিস দিয়ে চেপে রাখার জন্য কিছুটা প্রবণতা রয়েছে তাদের। তবে চীন এটিকে তাদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখতে পারে।
একই ধরনের উদ্বেগ একবার বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয়েছে, যেই শিল্পে চীন বিশ্ব বাজারের নেতা হয়ে উঠেছে।
বিবিসি বলছে, স্লোভাকিয়ান এয়ারকারের বিক্রির ফলে চীন উড়ন্ত গাড়ির বাজারে প্রবেশ করতে পারে কি না- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
রাইট বলেন, এয়ারকারের মতো প্রোটোটাইপগুলো যদিও মজার ছিল, তবে বাস্তবতা হতাশাজনক হতে পারে। কারণ লাইন, ব্যাগেজ চেক এবং আরও অনেক কিছুর মোকাবিলা করতে হবে।