![পুঁজিবাজারে তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন](uploads/2024/03/29/1711693306.Capital_Market.jpg)
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদহার বাড়ার কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সুদের হার বেড়েছে। এতে দেশের পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সূচক সামান্য বাড়লেও লেনদেন তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এতে করে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ছেড়ে ব্যাংকমুখী হচ্ছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, তফসিলি ব্যাংকগুলোতে উচ্চ সুদহারের কারণে পুঁজিবাজারে নগদ অর্থের প্রবাহ কমে গেছে। ফলে বাজার অব্যাহত পতনের সম্মুখীন হচ্ছে। একই সঙ্গে লেনদেনেও নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, টানা তিন কার্যদিবস দরপতনের পর বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারের সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে লেনদেন নেমেছে তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। সূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়েছে। দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে ৪১১ কোটি টাকা। এর আগে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারিতে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৩৪৪ কোটি টাকা।
গতকাল ডিএসইতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে প্রধান মূল্যসূচক। তবে অপর শেয়ারবাজার সিএসইতে সূচক কমেছে। চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে মাত্র এক কার্যদিবসে সূচক বেড়েছে। বাকি তিন দিন ধারাবাহিক পতন ঘটেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে কারেকশন হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যাংকে সুদের হার বেড়ে সাড়ে ১১ শতাংশ হয়েছে। এখন মানুষ চিন্তা করছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে কত টাকা লভ্যাংশ পাব। আর ব্যাংকে রাখলে কত টাকা পাব।’ দেশে অনেক বড় বিনিয়োগকারী, মার্চেন্ট ব্যাংকার, অ্যাসেট ম্যানেজার এখন টাকা, বন্ড ও এফডিআরে বিনিয়োগ করছে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন ‘আইসিবির কোনো টাকা নেই। আইসিবির নেওয়া ঋণ পরিশোধের সময় চলছে এখন। এতে তারা তাদের হাতে থাকা শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে। এখন তাদের ভাণ্ডার খালি। পুঁজিবাজারে তারল্যসংকটের এটাই মূল কারণ। শেয়ারের পেছনে টাকার সরবরাহ কমে গেছে। এতে পুঁজিবাজার অব্যাহত দরপতনের সম্মুখীন হচ্ছে।’
অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘কিছু শেয়ার তো জুয়াড়িরা নিয়ে নিয়েছে। এসব টাকা বাজারে নেই। শেয়ার বিক্রির এসব টাকা বাজার থেকে বের করে নিয়েছে। এখানে তো নতুন কেউ বিনিয়োগ করছে না। ব্যাংক আগে যা বিনিয়োগ করেছে, এখন সেগুলো বিক্রি করছে। আইসিবি নিজেও বিক্রেতা। আইসিবির কোনো টাকা নেই। এটা এখন একটা দেউলিয়া প্রতিষ্ঠান।’
গতকাল পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হতেই বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। কিন্তু মাঝে একশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা বিক্রির চাপ বাড়ানোর কারণে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে যায়। ফলে সূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। এতে আবারও পতনের শঙ্কা পেয়ে বসে বিনিয়োগকারীদের। তবে লেনদেনের শেষ দিকে এসে বাজারে বিক্রির চাপ কমে যায়। ফলে দরপতন থেকে বেরিয়ে আসে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এতে একদিকে দাম বাড়ার তালিকা বড় হয়, অন্যদিকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিনতার দেখা পান বিনিয়োগকারীরা।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২২১টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ১২০টির। এ ছাড়া ৫৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৭৭৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ৯৮ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে প্রধান মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪১১ কোটি ৮ লাখ টাকার। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৩৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকার। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১২৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা।