![মাদারীপুরে দুই ব্যবসায়ীর কবজায় ডিমের বাজার](uploads/2024/05/19/Madaripur-egg-1716101956.jpg)
মাদারীপুরে ডিমের পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বাড়ানো হচ্ছে ডিমের দাম। জেলার দুজন বড় ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি ডিমের বাজার। এতে ক্ষুব্ধ ক্রেতা। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, আমদানি কম হওয়ায় বেড়েছে ডিমের দাম।
জানা গেছে, মাদারীপুর শহরের বিসিক শিল্পনগরীর ভেতরে হিমাগারে পর্যাপ্ত জায়গা খালি থাকায় মার্চ থেকে ডিম মজুত শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা। গত দুই সপ্তাহে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে, সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম হালিতে বাড়ানো হয়েছে ১২-১৫ টাকা।
অভিযোগ উঠেছে, শহিদুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর কাজী দুই ব্যবসায়ীই পুরো ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছেন। হিমাগারে ডিম মজুত রেখে সিন্ডিকেট করে বাড়িয়েছেন দাম। হঠাৎ ডিমের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতা। বিপাকে খুচরা ব্যবসায়ীরাও। এদিকে ডিমের সংকট থাকায় এবং জেলায় কোনো ফার্ম না থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের।
এদিকে হিমাগার কর্তৃপক্ষ জানান, রমজান মাসে ডিমের দাম কম থাকায়, তখন থেকেই মজুত শুরু করে ব্যবসায়ীরা। পরে সুবিধামতো আস্তে আস্তে বাজারে ডিম ছাড়েন তারা। অসাধু ডিম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদারীপুর হিমাগারে বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ ডিম মজুত রয়েছে। এক হালি ফার্মের ডিম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা। যা খুচরা পর্যায়ে পৌঁছে ৫৫-৬০ টাকায়। এ ছাড়া দেশি মুরগি ও হাঁসের ডিমের দেখা নেই বাজারে।
মো. মহিউদ্দিন নামে শহরের কুলপদ্দি থেকে আসা এক ক্রেতা বলেন, ‘হঠাৎ ডিমের দাম বৃদ্ধি হয়। কারণ জিজ্ঞাসা করলে বিক্রেতারা বলেন বাজারে ডিম নেই। মাছ-মাংসের দাম বেশি, এখন ডিমেরও বেশি দাম হলে না খেয়ে থাকতে হবে। এই ডিমের বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া উচিত। প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করছি।’
আরেক ক্রেতা তানবির বলেন, ‘মাদারীপুরে ডিমের বাজার চড়া। হঠাৎ ডিমের হালি ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমরা সাধারণ মানুষ কীভাবে ডিম কিনে খাব। এমনিতে বাজারে তরকারিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বেশি।’
শহরের পুরান বাজারের খুচরা ডিম ব্যবসায়ী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘ডিমের বাজারে সিন্ডিকেট চলছে। বড় বড় ব্যবসায়ী হিমাগারে ডিম মজুত রেখেছেন। ক্রেতাদের সঙ্গে ডিমের দাম নিয়ে প্রতিনিয়ই ঝগড়া হচ্ছে। আমরাও চাই ডিমের দাম স্বাভাবিক থাকুক।’
আরেক খুচরা ব্যবসায়ী কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘চাহিদামতো ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিম পাওয়া খুবই কষ্ট, দুই থেকে তিন দিন পরপর এক গাড়ি ডিম আসে। তাতে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।’
এদিকে ডিম ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জেলার কোথাও ডিমের ফার্ম নেই। এই ডিম অন্য জেলা থেকে কিনে আনতে হয়। সেক্ষেত্রে খরচ বেশি এবং দামও বেশি পড়ে যায়। বর্তমানে ডিমের চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম। তাই একটু দাম বেড়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত ডিম পাওয়া গেলে, এই সংকট থাকবে না।’
মাদারীপুর কোল্ডস্টোরেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘দুই ব্যবসায়ীর প্রায় ছয় লাখ ডিম হিমাগারে মজুত রয়েছে। তারা মার্চ মাস থেকে ডিম মজুত রেখেছেন। সুবিধামতো তারা আস্তে আস্তে ডিম বাজারে ছাড়েন। ডিম তিন থেকে সাড়ে তিন মাস হিমাগারে ভালো থাকে। এর বেশি দিন হলে ডিম পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’
মাদারীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুবোদ কুমার দাস বলেন, ‘জেলায় প্রতিদিন দেড় লাখ ডিমের চাহিদা রয়েছে। কখনো আবার চাহিদা বাড়ে, গরমের সময় ডিম বেশি দিন হিমাগারে রাখা ঠিক নয়। এতে ডিমের গুণাগুণ নষ্ট হয়।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তরের মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘মাদারীপুরে ডিম মজুত করে রাখার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে। দুদিন আগে দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেক ব্যবসায়ীকে সতর্কও করা হয়েছে। অবৈধভাবে মজুত রেখে ডিমের দাম বাড়ানোটা অযৌক্তিক। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনস্বার্থে আমরা নিয়মিত বাজারে অভিযান পরিচালনা করি। যারা আইন না মেনে ব্যবসা করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’