![দরুদ শরিফ কাকে বলে?](uploads/2023/10/26/1698300437.durood-ok.jpg)
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আমরা নিজেরা যেমন দরুদ পাঠ করি, অন্যকেও তেমন দরুদ পাঠে উৎসাহ প্রদান করি। শ্রদ্ধাভরে উচ্চারণ করি, ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’। কারণ কমবেশি সবারই এ কথা জানা, দরুদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন একটি আমল। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয়ভাজন হওয়া বা নৈকট্য লাভ করার অন্যতম মাধ্যম এই দরুদ। দরুদ পাঠের অনেক উপকারিতা ও ফজিলত রয়েছে। কিন্তু আমরা কয়জন জানি, দরুদ কাকে বলে? দরুদ শরিফ মূলত কী? এবং কখন বা কেন দরুদ পাঠ করতে হয়?
‘দরুদ’ শব্দটি ফার্সি। বাংলাদেশি মুসলমানদের মুখে ও লেখনীতে এ শব্দটির ব্যাপক প্রচলন লক্ষ করা যায়। তবে ঠিক করে জানা যায় না, কবে এবং কীভাবে এ পরিভাষাটির এতটা ব্যাপক প্রচলন ঘটেছে। আর দরুদের সঙ্গে ‘শরিফ’ শব্দটি যুক্ত হয়েছে এর সম্মানার্থে। শরিফ আরবি শব্দ। এর অর্থ সম্মানিত, অভিজাত, ভদ্র ও মর্যাদাপূর্ণ। দরুদের প্রতি মুসলমানদের ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা-সম্মান প্রকাশার্থে ‘শরিফ’ শব্দটি যুক্ত হয়েছে।
দরুদের আরবি পরিভাষা হলো ‘সালাত’। একবচন। এর বহুবচন হলো ‘সালাওয়াত’। যার অর্থ অনেক ব্যাপক। সালাতের বহু অর্থ রয়েছে। মূলত দরুদ অর্থে সালাতের অর্থ হলো প্রার্থনা বা অভিবাদন। ইসলামী পরিভাষা মতে, ‘সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্ততির প্রতি আল্লাহতায়ালার দয়া ও শান্তিবর্ষণের জন্য প্রার্থনা করে যে বাক্য পাঠ করা হয়, তাকেই দরুদ বা সালাত বলা হয়।’ (স্যালুটেশনস অন আওয়ার ডিয়ার প্রফেট, খাজা মোহাম্মাদ জুবায়ের, খালিজ টাইমস, ০১ জুন ২০১৭)
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অসংখ্য স্থানে ‘সালাত’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় ‘সালাত’ শব্দটি মোট দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ১. সালাত দ্বারা নামাজ উদ্দেশ্য। ২. সালাত মানে সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা। (রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত, মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ, মাসিক আত-তাহরীক, ডিসেম্বর ২০১৮ সংখ্যা)
বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার আবুল আলিয়া (রহ.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার ক্ষেত্রে সালাত মানে ফেরেশতাদের সামেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রশংসাজ্ঞাপন। আর ফেরেশতাদের ক্ষেত্রে সালাত মানে দোয়া।’ (বুখারি, হাদিস নং-৪৭৯৭)
ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি সালাত মানে তাঁর রহমত, সন্তুষ্টি এবং ফেরেশতাদের সামনে প্রশংসা। ফেরেশতাদের থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি সালাত মানে আল্লাহর কাছে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা এবং উম্মতের পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি সালাত মানে আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া, শান্তি ও ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং সম্মান প্রদর্শন করা।’ (তাফসিরে কুরতুবি, ইমাম কুরতুবি, খণ্ড : ১৪, পৃষ্ঠা : ২৩২; আল-মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ, খণ্ড : ২৭, পৃষ্ঠা : ২৩৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের জন্য আবশ্যকভাবে পালনীয় একটি আমল। মর্যাদাপূর্ণ একটি ইবাদত। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা নবীর ওপর দরুদ (রহমত নাজিল) পাঠ করেন এবং ফেরেশতারা তাঁর জন্য দরুদ (রহমতের দোয়া) পাঠ করেন। সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর (নবীর) প্রতি ‘দরুদ’ পড়ো এবং অধিক পরিমাণে ‘সালাম’ পাঠাও।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৬)
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি—তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ (দোয়া, শান্তি ও ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং সম্মান প্রদর্শন করা) পাঠ করবে; আল্লাহতায়ালা এর প্রতিদানস্বরূপ তার ওপর ১০ বার দরুদ (রহমত) পাঠ করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৮৪; তিরমিজি, হাদিস : ৩৬১৪; নাসায়ি, হাদিস : ৬৭৮; আবু দাউদ, হাদিস : ৫২৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৫৩২)
সুতরাং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ‘দরুদ’ পাঠ করা মানে তাঁর জন্য ‘সালাত’ পেশ করা অর্থাৎ তাঁর জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া, শান্তি ও ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। অধিকাংশ মুসলমান রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠের উদ্দেশ্যে ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বাক্যটি উচ্চারণ করে থাকেন অথবা লিখেন। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থ আল্লাহতায়ালা তাঁর (মুহাম্মাদ) ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ বা নাজিল করুন। এটি একটি দরুদ। তবে এটি-ই একমাত্র দরুদ নয়। আরও অনেক ছোট ও বড় দরুদ রয়েছে।
লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক