ঢাকা ২১ আষাঢ় ১৪৩১, শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪

দরুদ শরিফ কাকে বলে?

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৭ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:০৮ এএম
দরুদ শরিফ কাকে বলে?
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত দরুদ শরিফ আঁকা ক্যালিগ্রাফি

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আমরা নিজেরা যেমন দরুদ পাঠ করি, অন্যকেও তেমন দরুদ পাঠে উৎসাহ প্রদান করি। শ্রদ্ধাভরে উচ্চারণ করি, ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’। কারণ কমবেশি সবারই এ কথা জানা, দরুদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন একটি আমল। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয়ভাজন হওয়া বা নৈকট্য লাভ করার অন্যতম মাধ্যম এই দরুদ। দরুদ পাঠের অনেক উপকারিতা ও ফজিলত রয়েছে। কিন্তু আমরা কয়জন জানি, দরুদ কাকে বলে? দরুদ শরিফ মূলত কী? এবং কখন বা কেন দরুদ পাঠ করতে হয়?

 

‘দরুদ’ শব্দটি ফার্সি। বাংলাদেশি মুসলমানদের মুখে ও লেখনীতে এ শব্দটির ব্যাপক প্রচলন লক্ষ করা যায়। তবে ঠিক করে জানা যায় না, কবে এবং কীভাবে এ পরিভাষাটির এতটা ব্যাপক প্রচলন ঘটেছে। আর দরুদের সঙ্গে ‘শরিফ’ শব্দটি যুক্ত হয়েছে এর সম্মানার্থে। শরিফ আরবি শব্দ। এর অর্থ সম্মানিত, অভিজাত, ভদ্র ও মর্যাদাপূর্ণ। দরুদের প্রতি মুসলমানদের ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা-সম্মান প্রকাশার্থে ‘শরিফ’ শব্দটি যুক্ত হয়েছে।

 

দরুদের আরবি পরিভাষা হলো ‘সালাত’। একবচন। এর বহুবচন হলো ‘সালাওয়াত’। যার অর্থ অনেক ব্যাপক। সালাতের বহু অর্থ রয়েছে। মূলত দরুদ অর্থে সালাতের অর্থ হলো প্রার্থনা বা অভিবাদন। ইসলামী পরিভাষা মতে, ‘সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্ততির প্রতি আল্লাহতায়ালার দয়া ও শান্তিবর্ষণের জন্য প্রার্থনা করে যে বাক্য পাঠ করা হয়, তাকেই দরুদ বা সালাত বলা হয়।’ (স্যালুটেশনস অন আওয়ার ডিয়ার প্রফেট, খাজা মোহাম্মাদ জুবায়ের, খালিজ টাইমস, ০১ জুন ২০১৭)

 

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অসংখ্য স্থানে ‘সালাত’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় ‘সালাত’ শব্দটি মোট দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ১. সালাত দ্বারা নামাজ উদ্দেশ্য। ২. সালাত মানে সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা। (রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত, মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ, মাসিক আত-তাহরীক, ডিসেম্বর ২০১৮ সংখ্যা)

 

বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার আবুল আলিয়া (রহ.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার ক্ষেত্রে সালাত মানে ফেরেশতাদের সামেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রশংসাজ্ঞাপন। আর ফেরেশতাদের ক্ষেত্রে সালাত মানে দোয়া।’ (বুখারি, হাদিস নং-৪৭৯৭)

 

ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি সালাত মানে তাঁর রহমত, সন্তুষ্টি এবং ফেরেশতাদের সামনে প্রশংসা। ফেরেশতাদের থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি সালাত মানে আল্লাহর কাছে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা এবং উম্মতের পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি সালাত মানে আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া, শান্তি ও ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং সম্মান প্রদর্শন করা।’ (তাফসিরে কুরতুবি, ইমাম কুরতুবি, খণ্ড : ১৪, পৃষ্ঠা : ২৩২; আল-মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ, খণ্ড : ২৭, পৃষ্ঠা : ২৩৪)

 

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের জন্য আবশ্যকভাবে পালনীয় একটি আমল। মর্যাদাপূর্ণ একটি ইবাদত। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা নবীর ওপর দরুদ (রহমত নাজিল) পাঠ করেন এবং ফেরেশতারা তাঁর জন্য দরুদ (রহমতের দোয়া) পাঠ করেন। সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর (নবীর) প্রতি ‘দরুদ’ পড়ো এবং অধিক পরিমাণে ‘সালাম’ পাঠাও। (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৬)

 

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছিতিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ (দোয়া, শান্তি ও ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং সম্মান প্রদর্শন করা) পাঠ করবে; আল্লাহতায়ালা এর প্রতিদানস্বরূপ তার ওপর ১০ বার দরুদ (রহমত) পাঠ করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৮৪; তিরমিজি, হাদিস : ৩৬১৪; নাসায়ি, হাদিস : ৬৭৮; আবু দাউদ, হাদিস : ৫২৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৫৩২)

 

সুতরাং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ‘দরুদ’ পাঠ করা মানে তাঁর জন্য ‘সালাত’ পেশ করা অর্থাৎ তাঁর জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া, শান্তি ও ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। অধিকাংশ মুসলমান রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠের উদ্দেশ্যে ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বাক্যটি উচ্চারণ করে থাকেন অথবা লিখেন। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থ আল্লাহতায়ালা তাঁর (মুহাম্মাদ) ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ বা নাজিল করুন। এটি একটি দরুদ। তবে এটি-ই একমাত্র দরুদ নয়। আরও অনেক ছোট ও বড় দরুদ রয়েছে।

 

লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

ভ্রমণ পরিচিতি ও বিধান

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
ভ্রমণ পরিচিতি ও বিধান
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত বিমান থেকে তোলা ছবি

ইসলামে ভ্রমণ বা সফর একটি উৎসাহিত বিষয়। বরং আল্লাহর সৃষ্টির বৈচিত্র্য দেখে ঈমানের দৃঢ়তা সৃষ্টি করতে এবং  অবিশ্বাসীদের করুণ পরিণতি দেখে শিক্ষাগ্রহণের জন্য ভ্রমণ অন্যতম ইবাদতও বটে। এ ছাড়াও নানা প্রয়োজনে ভ্রমণ করতে হয়। মানবজীবনের সঙ্গে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শব্দগতভাবে সব ধরনের ভ্রমণকে সফর বলা হলেও ইসলামি শরিয়তে নির্দিষ্ট দূরত্বের ও নির্ধারিত সময়ের সফরকারীকে মুসাফির বলা হয়। এমন মুসাফিরই শুধু সফরকালে ইসলামি বিধান পালনের ক্ষেত্রে ছাড় পেয়ে থাকে। যেমন—নামাজের ক্ষেত্রে কসর, রোজার ক্ষেত্রে কাজা আদায়ের সুযোগ। এ ছাড়া আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ, যা সফরকে সহজ করে। 

সফর পরিচিতি

সফর আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো ভ্রমণ করা, যাত্রা বা প্রস্থান। যিনি সফর করেন তাকে বলা হয় মুসাফির। শরয়ি কসরের দূরত্ব পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি পথ অতিক্রম করার জন্য বের হওয়াকে ইসলামি পরিভাষায় সফর বলে। ইসলামের দৃষ্টিতে সফর মোট ৫ প্রকার। ১. হারাম বা নিষিদ্ধ সফর। ২. মাকরুহ বা অপছন্দনীয় সফর। ৩. মুবাহ বা জায়েজ সফর। ৪. মুস্তাহাব বা পছন্দনীয় সফর। এবং ৫. ওয়াজিব বা আবশ্যকীয় সফর। (শারহুল মুমতে আলা জাদিল মুসতাকনি, ৪/৩৪৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.) গোটা জীবদ্দশায় মোট পাঁচ ধরনের সফর করেছেন। সেগুলো হলো—১. বাণিজ্য সফর, ২. হিজরতের সফর, ৩. জিহাদের সফর, ৪. ওমরার সফর এবং ৫. হজের সফর। (জাদুল মাআদ, ১/৪৪৪)  

মুসাফির কে?

মুসাফির অর্থ সফরকারী বা ভ্রমণকারী। ইসলামি শরিয়তে মুসাফির এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে ৪৮ মাইল (৭৮ কিলোমিটার প্রায়) বা তার বেশি দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকা ত্যাগ করে এবং গন্তব্যে পৌঁছে ১৫ দিনের কম অবস্থান করে। কাজেই যে নিজ এলাকায় অবস্থান করছে বা ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে সফর করেছে সে মুসাফির নয়; বরং সে মুকিম। আবার ৭৮ কিলোমিটার কিংবা তার চেয়ে বেশি দূরত্বে সফর করলে পথিমধ্যে মুসাফির হলেও কোনো এক গ্রাম বা এক শহরে ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময় অবস্থানের নিয়ত করলে ওই স্থানে সে মুকিম।

নামাজের বিধান

মুসাফির ব্যক্তি চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত (কসর) পড়বেন। আর ফজর, মাগরিব ও বিতর নামাজ পুরো আদায় করবেন। সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজগুলো মুকিম অবস্থার মতো আবশ্যক থাকে না। তবে সময়-সুযোগ থাকলে পড়ে নেওয়া উত্তম। সুন্নত নামাজের কসর হয় না। তাই সুন্নত আদায় করলে পুরোই আদায় করতে হবে। 
আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যখন জমিনে সফর করবে, তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর করাতে কোনো আপত্তি নেই।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০১) 
হাদিসে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জবানিতে মুসাফিরের নামাজ দুই রাকাত, মুকিম বা বাড়িতে অবস্থানকারীর নামাজ চার রাকাত এবং ভীতিকর অবস্থায় নামাজ এক রাকাত ফরজ করেছেন। (মুসলিম, হাদিস: ৬৮৭)

কসর বাধ্যতামূলক

মুসাফির ব্যক্তি সফর অবস্থায় ইচ্ছাকৃত চার রাকাত নামাজ পূর্ণ করলে আল্লাহর অনুগ্রহ উপেক্ষা করার কারণে গুনাহগার হবে। তবে মুকিম ইমামের পেছনে হলে জামাতের স্বার্থে চার রাকাত পুরো করবে। মুসা ইবনু সালামা আল হুজালি (রহ.) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি মক্কায় অবস্থানকালে যদি ইমামের পেছনে নামাজ আদায় না করি, তা হলে কীভাবে নামাজ আদায় করব? তিনি বললেন, দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। এটি আবুল কাসিম (সা.)-এর সুন্নত।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৮৮)

রোজার বিধান

মুসাফিরের জন্য সফরকালীন রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে পরে কাজা আদায় করতে হবে। উত্তম হলো—যদি কষ্ট কম হয় তা হলে রোজা পালন করা। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। আর কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূর্ণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান এবং যা তোমাদের জন্য কষ্টকর, তা চান না। এ জন্য যে, তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

কোরবানির বিধান

মুসাফিরের জন্য কোরবানিও আবশ্যক নয়। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য মুকিম হওয়া শর্ত। কোরবানির (১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত) সময়ের মধ্যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক, মুকিম তথা মুসাফির নয় এমন স্বাধীন মুসলমানের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। তবে মুসাফিরের জন্যও অবকাশ থাকলে কোরবানি করা উত্তম। সাওরি হাম্মাদ থেকে তিনি ইবরাহিম থেকে বর্ণনা করেন, ইবরাহিম (রহ.) বলেন, হাজি ও মুসাফিরের জন্য কোরবানির ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হয়েছে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজজাক, হাদিস: ৮১৪২)
পরিশেষে বলা যায়, ইসলাম ধর্ম নানাবিধ বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। এসবের অন্যতম হলো সহজসাধ্যতা। সবার জন্য উপযোগী ও উপকারী করেই ইসলামের আবির্ভাব হয়েছে। এ দ্বীন অনুশীলনের মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ জীবন লাভ নিশ্চিত করা সম্ভব। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

অজুর ফরজ কয়টি

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪২ পিএম
অজুর ফরজ কয়টি
অজু করছেন এক মুসল্লি। ছবি : ইন্টারনেট

আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২২)

ইসলামে পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম অজু। নামাজের জন্য অজু করা আবশ্যক। অজু করা ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা, যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াও, তখন তোমাদের মুখ হাত কনুই পর্যন্ত ধোবে ও তোমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে নেবে, আর গিট পর্যন্ত ধোবে। যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। যদি তোমরা অসুস্থ থাকো বা সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসো কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গত হও, আর পানি না পাও, তবে তাইয়াম্মুম করবে। পরিষ্কার মাটি দিয়ে এবং তা মুখে ও হাতে বুলিয়ে নেবে। আল্লাহ্ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না এবং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের ওপর তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান- যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জানাতে পারো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬)

অজুর ফরজ
অজুতে চারটি ফরজ কাজ রয়েছে। কেউ যদি তা পরিপূর্ণভাবে পালন না করে, তা হলে তার অজু সঠিক হবে না। অজুর চার ফরজ হলো—

  • সমস্ত মুখমণ্ডল ধৌত করা।
  • দুই হাতের কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।
  • মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা।
  • দুই পা টাখনুসহ ধৌত করা।

অজুর ফজিলত
নুআইম মুজমির (রহ.) বলেন, ‘আমি আবু হুরায়রা (রা.)-এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। অতঃপর তিনি অজু করে বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে, যে অজুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৩৬)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

 

‌আত্তাহিয়াতু কি, কখন পড়তে হয়?

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৫ এএম
‌আত্তাহিয়াতু কি, কখন পড়তে হয়?
নামাজের বৈঠকে দোয়া পড়ছেন মুসল্লি। ছবি: ইন্টারনেট

তাশাহুদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়া, যা নামাজের প্রত্যেক বৈঠকে পড়তে হয়। তাশাহুদকে অনেকে আত্তাহিয়াতু বলেন। আত্তাহিয়াতু হচ্ছে আল্লাহতায়ালা এবং মুহাম্মাদ (সা.)-এর একটি কথোপকথন। নামাজের ভেতরে যেসব কাজ ফরজ তার একটি নামাজে বৈঠকে বসা। আর বৈঠকে আত্তাহিয়াতু বা তাশাহুদ পড়া ওয়াজিব (আবশ্যক)।

তাশাহুদের আরবি

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

বাংলা উচ্চারণ: আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস সালা ওয়াতু, ওয়াত তাইয়িবাতু, আসসালামু আলাইকা আইয়ু হান নাবিইয়ু, ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

বাংলা অর্থ: সমস্ত মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবি, আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত নাজিল হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের প্রতি। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল।

তিন বা চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের দুই রাকাতের পর বৈঠক করা ওয়াজিব। (বুখারি, ১/১১৪) এবং প্রথম ও শেষ উভয় বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া আবশ্যক। (বুখারি ১/১১৫: ৮৩০, ৮৩১)

লেখক: আলেম ও অনুবাদক

 

ঘুম থেকে ওঠার দোয়া

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:১০ পিএম
ঘুম থেকে ওঠার দোয়া
শিল্পীর তুলিতে আঁকা ঘুমন্ত বালকের ছবি। ফ্রিপিক

ঘুম আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত ও অনুগ্রহ। মানুষ চাইলেই ঘুমাতে পারে না। কেউ কেউ সামান্য একটু শান্তির ঘুমের জন্য হাজারো টাকার ওষুধ খায়। আবার কেউ কেউ ঘুম দূর করার জন্যও ওষুধ খায়। তবে পরিমিত ঘুম মানবদেহের জন্য উপকারী। মানুষের ক্লান্তি-অবসাদ দূর করতে ঘুমের অবদান অসামান্য। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ঘুম বা নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। রাতকে করেছি আবরণ। দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়।’ (সুরা নাবা, আয়াত: ৯-১১) 

একজন মুসলমানের কোনো কাজ যখন আল্লাহর হুকুম ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাত অনুযায়ী হয়, তখন তা ইবাদতে পরিণত হয়। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ঘুম থেকে জেগে আবার ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত পূর্ণ সময়ই ইসলামি বিধিবিধান রয়েছে। এ বিধানগুলো পালনে আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে অগণিত সওয়াব।  

ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার দোয়া
হুজাইফা (রা.) বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন ঘুম থেকে উঠে বলতেন, 

الحمدُ لله الذي أحيَانَا بَعْدَ مَا أماتَنَا وإليه النُّشُوْر

বাংলা উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লা হিল্লাজি আহইয়া না বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর। 

বাংলা অর্থ: প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি (নিদ্রারূপ) মৃত্যুর পর আমাদের জীবিত করলেন, আর তারই কাছেই সবার পুনরুত্থান। (মুসলিম, হাদিস: ২৭১১)

মানুষ যখন আল্লাহর নেয়ামত পেয়ে নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে, আল্লাহ নেয়ামতকে বৃদ্ধি করে দেন। তার থেকে দূর করবেন ক্লান্তিভাব। সে শরীরে ফিরে পাবে এক নতুন উদ্যমতা।

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৬ এএম
বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া
নামাজরত এক ব্যক্তির ছবি। ইন্টারনেট

ইশার নামাজের পর থেকে শেষ রাতের আগপর্যন্ত যেকোনো সময় বিতর নামাজ পড়া যায়। বিতর নামাজ তিন রাকাত। অন্যান্য ফরজ নামাজের মতো দুই রাকাত নামাজ পড়ে প্রথম বৈঠকে বসে তাশাহহুদ পড়া। তারপর তৃতীয় রাকাত পড়ার জন্য উঠে সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য কোনো সুরা বা আয়াত মেলানো। কিরাত (সুরা বা অন্য আয়াত মেলানোর পর) শেষ করার পর তাকবির বলে দুহাত কান পর্যন্ত উঠাবে এবং তাকবিরে তাহরিমার মতো হাত বাঁধবে। তারপর নিঃশব্দে (অনুচ্চ স্বরে) দোয়া কুনুত পড়বে। দোয়া কুনুত পড়ে আগের মতো রুকু-সিজদা করবে। তারপর শেষ তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে।

দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা, ওয়ানুমিনু বিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা, ওয়া নুসনি আলাইকাল খাইর। ওয়া নাসকুরুকা ওয়ালা নাক ফুরুকা, ওয়া নাখলাউ উয়ানাত রুকু মাইয়াফ জুরুকা। আল্লাহুম্মা ইইয়াকানা বুদু ওয়ালাকা নুসল্লি, ওয়ানাস জুদু ওয়া ইলাইকা নাসয়া; ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আজাবাকা; ইন্না আজাবাকা বিলকুফফারি মুলহিক।


দোয়া কুনুতের বাংলা অর্থ
হে আল্লাহ, আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই কাছে ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ইমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সব মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ, আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামাজ পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আজাবকে ভয় করি। আর তোমার আজাব তো কাফেরদের জন্যই নির্ধারিত।

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক