বদলি হজ কী ও কেন?
দৈহিক ও আর্থিক সক্ষমতার পরও যদি কেউ হজ না করে মারা যায় কিংবা হজ করার সক্ষমতা চিরতরে হারিয়ে ফেলে, তার পরিবর্তে অন্য কাউকে দিয়ে যে হজ করানো হয়, তাই বদলি হজ। বদলি হজ করানো বা বদলি হজ করানোর জন্য উত্তরাধিকারীদের অসিয়ত করে যাওয়া ফরজ। বদলি হজ করানোর মাধ্যমে হজ না করার দায় থেকে মুক্ত হওয়া যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘ফজল (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাহনে তাঁর পেছনে বসা ছিলেন। এ সময় খাসয়াম গোত্রের এক নারী এসে বলল, বৃদ্ধ অবস্থায় আমার পিতার ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন সময় হজ ফরজ হয়েছে, যখন তিনি বাহনের ওপর বসে থাকতে পারছেন না। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ আদায় করতে পারব? তিনি বললেন, হ্যাঁ।’ (বুখারি, ১৮৫৫)
আরেক হাদিসে আছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘এক নারী রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমার মা হজ করার মান্নত করেছিলেন। হজ করার আগেই তিনি মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তার পক্ষ থেকে হজ করো...।’ (বুখারি, ৭৩১৫)
ইহরাম অবস্থায় কী কী কাজ করা নিষেধ?
ইহরাম অবস্থায় বেশ কিছু কাজ করা নিষেধ। যেমন, এক. সুগন্ধি ব্যবহার করা। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ১৪৮৩৩)। দুই. নখ কাটা, চুল বা পশম মুণ্ডন করা কিংবা উপড়ানো। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ১৩৬০৪)। তিন. সহবাস করা বা যৌনকর্মে উদ্বুদ্ধ করে এমন অশালীন কথা বলা ও কাজ করা কিংবা ঝগড়া-ফ্যাসাদ করা নিষেধ। (সুরা বাকারা, ১৯৭)। চার. পুরুষের জন্য সেলাইকৃত কাপড় তথা পাঞ্জাবি, পায়জামা, জুব্বা, শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, কোট, সোয়েটার ও মোজা প্রভৃতি পরা। (মুসলিম, ২৬৮১)। পাঁচ. পুরুষের জন্য মাথা ও মুখমণ্ডল আবৃত করা। তবে কান, ঘাড় ও পা ঢাকা যাবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য একান্ত প্রয়োজনে মাস্ক পরা যাবে। (মানাসিক, ১২৩) । ছয়. কোনো বন্যজন্তু শিকার করা বা শিকার করার পরামর্শ দেওয়া। (সুরা মায়েদা, ৯৬)। সাত. চুল আঁচড়ানো ও সাজসজ্জা করা। (তিরমিজি, ২৯৯৮)
হজের সঙ্গে ওমরা কীভাবে আদায় করতে হয়?
চারটি কাজ করার মাধ্যমে ওমরা সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে দুটি কাজ তথা ইহরাম বাঁধা ও বায়তুল্লাহ শরিফের তাওয়াফ করা ফরজ। আর সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ করা এবং চুল মুণ্ডন বা কর্তন করা ওয়াজিব। ওমরাকারী মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধবেন। এর আগে গোসল বা অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে ওমরার নিয়ত করবেন। এরপর তালবিয়া পাঠ করে ইহরাম পরবেন। কাবা ঘর সাতবার তাওয়াফ করবেন। সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাতবার সাঈ করবেন। সাঈ সম্পন্ন করার পর চুল মুণ্ডন বা কর্তন করে ইহরামমুক্ত হয়ে যাবেন। তামাত্তু হজের ক্ষেত্রে মিকাত অতিক্রম করার আগে শুধু ওমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কা মুকাররামায় পৌঁছে ওমরার কাজ শেষ করে চুল কেটে ইহরামমুক্ত হয়ে যাবেন। কিরান হজ পালন করতে চাইলে মিকাত অতিক্রমের আগে একই সঙ্গে ওমরা ও হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে এই ইহরামে ওমরা ও হজ সম্পন্ন করবেন।
হজের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি ও কী কী?
হজের ফরজ তিনটি। যথা–১. ইহরাম বাঁধা। (সুনানে কুবরা, ৯১৯০)। ২. জিলহজ মাসের ৯ তারিখে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে পরবর্তী রাতের সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার আগে যেকোনো সময় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। (তিরমিজি, ৮১৪)। ৩. তাওয়াফে জিয়ারত। ১০ জিলহজ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগেই এ তাওয়াফ সম্পন্ন করা।
হজের ওয়াজিব ছয়টি। যথা–১. ১০ জিলহজ সুবেহ সাদিকের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সামান্য সময় মুজদালিফায় অবস্থান করা। (তিরমিজি, ৮১৫)। ২. সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করা। (মুসলিম, ২১৩৭) । ৩. নির্দিষ্ট দিনগুলোতে জামরাতে পাথর নিক্ষেপ করা। (মুসলিম, ২২৮৬)। ৪. তামাত্তু ও কিরান হজকারীরা কোরবানি করা। ৫. মাথার চুল মুণ্ডন করা বা কাটা। (বুখারি, ১৬১৩)। ৬. মক্কাবাসী ছাড়া অন্যদের বিদায়ী তাওয়াফ করা। (মুসলিম, ২৩৫০)
ফরজ বা ওয়াজিব ছুটে গেলে করণীয় কী?
হজের ফরজ থেকে কোনো ফরজ যদি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ছুটে যায়, তা হলে হজ বাতিল হয়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে এই হজ পুনরায় আদায় করতে হবে। হজের কোনো ওয়াজিব ভুলক্রমে ছুটে গেলে হজ আদায় হয়ে যাবে। তবে দম বা কোরবানির মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার