![বায়ুদূষণের ২৫ শতাংশ আসে সীমান্ত পেরিয়ে](uploads/2024/06/05/Air-pollution-(1)-1717570623.jpg)
পরিবেশ দূষণে স্থানীয় ইস্যুর পাশাপাশি বর্তমানে আঞ্চলিক ইস্যুও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। আন্তসীমান্ত কারণে বায়ুদূষণ, ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে আগাম বন্যা এবং পানির সঙ্গে আসা রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশের জন্য আগামীতে বড় হুমকিতে পরিণত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই দ্রুত এ বিষয়ে ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর এবং টেকসই সমাধানে যাওয়ার পরামর্শ তাদের।
এমন বাস্তবতায় বুধবার (৫ জুন) বিশ্বের অন্য সব দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ ২০২৪। এবারের প্রতিপাদ্য ‘করব ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখব মরুময়তা; অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’।
পরিবেশের আসন্ন বিপর্যয়ের সমাধান প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, এটা টেকনিক্যাল ইস্যু। পানি এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাচ্ছে। কতটুক যাবে, এটার একটা হিসাব আছে। যদি পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট না থাকে, তাহলে কিন্তু হাজার হিসাব-নিকাশ করেও কোনো লাভ হবে না। সলিউশানটা ডিপ্লোম্যাটিক বা পলিটিক্যাল। বৈশ্বিক আইন দিয়ে নেগোসিয়েশন করতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি দেশ যদি কার্বন নিঃসরণ কমায়, একই সঙ্গে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কারখানা না করে, তাহলে প্রতিবেশী দেশগুলোর ঝুঁকি কম থাকে। উভয় দেশের বিজ্ঞানীদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে। তখন পরস্পরের ভোগান্তিটা বুঝতে পারবে।
বায়ুর মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম। তিনি রাজধানী ঢাকার ৪০টি স্থানের বায়ুর মান মনিটরিং করেন সার্বক্ষণিকভাবে। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দশটি স্থানের তথ্য গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণের জন্য দায়ী লোকাল বা স্থানীয় কারণ ৭৫ ভাগ আর আঞ্চলিক কারণ ২৫ ভাগ।
গবেষণা সম্পর্কে অধ্যাপক আবদুস সালাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের একটা প্রজেক্ট আছে সেটার অধীনে আমরা গবেষণা করে পেয়েছি বায়ুদূষণে আঞ্চলিক কারণ ২৫ ভাগ। আবার কেউ কেউ বলেন, এটা অনেক সময় ৪০ ভাগও হয়ে যায়। আমাদের নিজস্ব দূষণ যেমন কমাতে হবে, তেমনিভাবে আঞ্চলিক সম্পৃক্ততাও দরকার।’
সিলেট অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত আর ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে গত ২৯ মে থেকে। এক সপ্তাহ পার হলেও এখনো স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি। অনেক এলাকা এখনো পানিবন্দি। ভারতের চেরাপুঞ্জি (মেঘালয়), কৈলাশহর (ত্রিপুরা), গোয়ালপাড়া (আসাম), ধুবড়ি (আসাম), গ্যাংটক (সিকিম) ও জলপাইগুড়িতে (পশ্চিমবঙ্গ) আসন্ন বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর। ফলে ভারী বর্ষণের পানি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে আবারও বন্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশকে আগাম বন্যার ভিকটিম হিসাবে দাবি করে থাকেন। একই সঙ্গে পানির সঙ্গে দুষিত পদার্থ এসে পরিবেশের বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। ২০১৭ সালে আসা পানিতে রাসায়নিক পদার্থ থাকায় হাওর এলাকার অনেক মাছ মরে গিয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বায়ুদূষণের মাত্রা বছর বছর বাড়ছে। এটা অব্যাহত থাকবে। এ জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া না হলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরির মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। একই সঙ্গে উঁচু স্তর থেকে পানি নিচের দিকে প্রবাহিত হওয়ায় বাংলাদেশে যখন পানি আসে, তখন দূষিত পদার্থসহ চলে আসে। বাংলাদেশ থেকে সেভাবে দূষিত পানি যাওয়ার সুযোগ নেই। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোসহ নানা কারণে বাংলাদেশের অনেক নদী নাব্য হারাচ্ছে। তাই পরিবেশের সার্বিক বিষয়গুলোতে আন্তসীমান্ত কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী গত সোমবার এক সেমিনারে বলেছেন, বায়ুদূষণ কোনো একটি দেশের সমস্যা নয়, এটি একটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। তাই এ সমস্যা মোকাবিলায় ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দক্ষিণ এশীয় পর্যায়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং সমন্বয় প্রয়োজন। কারণ এক দেশের বায়ুদূষণের প্রভাব পড়ছে অন্য দেশের ওপর। বায়ুদূষণ রোধে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি সব পক্ষের সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রের আলবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কলেজ অব ন্যানোটেকনোলজি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সাসটেইনেবল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আইনুল বারী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আন্তসীমান্ত কারণগুলো নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। দূষণের উৎস, শহরভিত্তিক ও বিভাগভিত্তিক উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করতে হবে। তবে শীতকালে গ্রীষ্মকালের চেয়ে বাতাসে পিএম ২.৫ (ক্ষুদ্র কণা) দ্বিগুণ হয়ে যায়। এখানে আন্তসীমান্ত ইস্যু অনেক প্রভাব ফেলে।