ঢাকা ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

এমপি আনার হত্যাকাণ্ড: নজরদারিতে ৬ নায়িকা

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৪, ১১:০৪ এএম
আপডেট: ১২ জুন ২০২৪, ১১:০৪ এএম
এমপি আনার হত্যাকাণ্ড: নজরদারিতে ৬ নায়িকা

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় নজরদারিতে রয়েছেন ছয় চিত্রনায়িকা। তাদের শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।

কলকাতার পুলিশের কাছে দেশের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, বাংলাদেশের ছয়জন নায়িকা ও মডেলকে কলকাতার পঞ্চলা ও গৌরবতীর ফ্ল্যাটে শাহীন নিয়ে গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে আনার এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে সময়ও কাটিয়েছিলেন। ওই নায়িকা কলকাতার একাধিক ছবিতে অভিনয় করে সুনামও কুড়িয়েছেন। বয়স ৩০ এর কোটায় বাংলাদেশি ওই নায়িকা চলনে-বলনে স্মার্ট বলে পরিচিত। 

আনার হত্যার ঘটনায় এই ছয় মডেল ও নায়িকাকে খুব শিগগরি জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্র জানিয়েছে।

আটক মিন্টু
গতকাল মঙ্গলবার (১১ জুন) বিকেলে এমপি আনার হত্যার ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঢাকার ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। 

আনার হত্যার ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল গিয়াস আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু গ্রেপ্তার হওয়ার পর এ খুনের সঙ্গে জেলার ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের জড়িত হওয়ার বিষয়টি সামনে আসতে শুরু করে। এরপরই গোয়েন্দারা জেলার নেতাদের নজরদারিতে রাখা শুরু করেন। খুনের মোটিভ জানতে সংগ্রহ করে সবার বায়োডাটা। এ হত্যাকাণ্ডের মাঠপর্যায়ে তদন্তের শুরুতে ঝিনাইদহ জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর সম্পৃক্ততার নাম আসে।
 
তখন মাঠপর্যায়ে আরও তদন্ত করে ডিবি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা বিষয়টি হাই কমান্ডকে অবহিত করে। তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গ্রিন সিগনাল পাওয়ার পর গতকাল তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার গ্যাস বাবু পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিন্টুর নাম বলেছিলেন। 

এ ছাড়াও রিমান্ডে এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি তানভীর ভুঁইয়া ডিবি পুলিশকে জানিয়েছিলেন যে, আনার হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে মিন্টুর সখ্য ছিল। গোটা জেলার ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক অঙ্গনে দুজন মিন্টুর লোক বলে পরিচিত ছিলেন। এ কারণে তাদের সবাই সমীহ করতেন। আর জেলার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন এমপি আনার। 

ঝিনাইদহ জেলার আওয়ামী লীগের পরবর্তী কাউন্সিলে তিনি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে পারেন বলে একটি গুঞ্জন ছিল। প্রার্থী হতে তিনি জেলার অধিকাংশ কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলাদা-আলাদা যোগাযোগ শুরু করেছিলেন। তৈরি করেছিলেন আলাদা বলয়। বিষয়টি টের পেয়ে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় মাঠ থেকে আনারকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন মিন্টু- এমন তথ্য গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। 

তারা আরও জানতে পেরেছেন, এ খুনের পরিকল্পনা গত দুই মাস আগে থেকেই জানতেন মিন্টু। মিশন সফল করতে নানা পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অর্থও দিয়েছিলেন। আনার নিখোঁজ হওয়ার আগে শাহীনকে ৩০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে কলকতায় গিয়েছিল। পরে শাহীন ওই টাকা রিসিভ করেছিলেন। 

এদিকে, হত্যাকাণ্ডের পরই ডিবির একটি দল কলকাতায় গিয়েছিলেন। সেখানকার পুলিশ ও সিআইডিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলাদা আলাদা করে বৈঠক করেছেন। 

নৃশংস এই খুনের অন্যতম হোতা সিয়াম এখন ভারতের সিআইডির হেফাজতে রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি বাংলাদেশের ডিবি পুলিশকে কিছু তথ্য দিয়েছেন। সেই তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই কারা হচ্ছে। 

গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম। ২২ মে আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ এ মামলায় গ্রেপ্তার করেন শিলাস্তি, আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ও তানভীর ভূঁইয়া ওরফে ফয়সাল সাজিকে। পরে আদালত শিলাস্তিসহ মোট তিনজনকে আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

প্রথম দফায় রিমান্ডে কিছু তথ্যের ঘাটতি থাকার কারণে ডিবি পুলিশ গত ৩১ মে পুনরায় আদালতে আসামিদের হাজির করে আবার রিমান্ডের আবেদন করে। 

শিমুল ভূঁইয়া তার জবানবন্দিতে গ্যাস বাবুর কথা বলেন। গ্যাস বাবু আবার ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর এ খুনের জড়িত হওয়ার কথা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের জানান। 

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়ারী বিভাগের ডিসি আব্দুল আহাদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আনার হত্যাকাণ্ডে যারাই জড়িত হোক না কেন সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা তদন্ত অব্যাহত রেখেছি।’

আনার হত্যাকাণ্ড মামলার তদন্তের সঙ্গে জড়িত একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, আনার হত্যাকাণ্ডে আগে যে কয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের কাছে মিন্টুর নাম জানা যায়নি। তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। তবে মাঠপর্যায়ে ডিবি তদন্ত অব্যাহত রাখেন। আনার হত্যাকাণ্ডের পর মিন্টুর গতিবিধি ভালো ছিল না। প্রযুক্তির মাধ্যমে তাকে ডিবি ট্র্যাকিং করা শুরু করলে তিনি ঢাকা, ঝিনাইদহ, খুলনায় অবস্থান করা শুরু করেন। এ মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের নেতা গ্যাস বাবু গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার নাম উঠে এলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সূত্র জানায়, মিন্টুর রাজনৈতিক অতীত কর্মকাণ্ড ভালো ছিল না। তার নামে চারটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও ঝিনাইদহের বাসস্ট্যান্ড, ট্রাকস্ট্যান্ড, মাছের আড়ত, অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার গ্যারেজ থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাং লালনের অভিযোগও রয়েছে।

সূত্র জানায়, ঝিনাইদহ জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপুর আলাদা একটি বলয় ছিল। সেই বলয়ে এমপি আনার ছিলেন। এ কারণে মিন্টু আনারকে তার জেলার রাজনীতিতে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেছিলেন। জেলার বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দুই গ্রুপের মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছিল। এতে মিন্টু আনারের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। 

ডিবি জানিয়েছে, এ মামলায় মিন্টুকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে। 

এদিকে, গতকাল রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে হাইওয়ে পুলিশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তা আমরা কখনোই বলিনি। আমরা সব সময় বলে আসছি এমপির ওই এলাকা সন্ত্রাসপূর্ণ একটি এলাকা। ওখানে আসলে কী হয়েছে সেটা আমাদের জানতে হবে। আমরা তদন্ত করছি, তদন্তের পরে আপনাদের সব কিছু জানাব।

এমপি আনারের মেয়ে ডরিন সন্দেহভাজনদের নাম বলেছেন। কাদের নাম বলেছেন তিনি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন তদন্ত চলে তখন আমাদের মন্ত্রী, আইজিপি কিংবা তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে তদন্ত না করে কোনো কিছু বলা সম্ভব না। আমরা মনে করি তদন্ত শেষ হলে এগুলো নিয়ে কথা বলব।

এ ছাড়াও গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবির কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, এমপি আনারের হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা কার কার কাছে বিষয়টি শেয়ার করেছেন সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে। 

তিনি আরও বলেন, সকল তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে মনে করেছি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ জন্য তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে এনেছি। তার রিমান্ড চলছে, তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। ঘটনা ডিবি ওয়ারী বিভাগ তদন্ত করছে।

হারুন আরও বলেন, বাংলাদেশে ও ভারতে গ্রেপ্তার আসামিদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল ঘাতক আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়াসহ অন্যরাও আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডটি ভারতে সংঘটিত হয়েছে এবং সব আসামি বাংলাদেশি। হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় সব আসামি বাংলাদেশে চলে আসেন।

হত্যাকাণ্ডের পর দুই কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে হারুন বলেন, এগুলো আমরাও শুনেছি, সবকিছু তদন্ত করছি। হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন বাংলাদেশ থেকে দিল্লির পর কাঠমান্ডু, এরপর দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। তাকে আমরা ধরতে না পারলেও মোটামুটি বাকি সব আসামিদের বিষয়ে জানতে পেরেছি। আসামিদের অনেককেই গ্রেপ্তার করেছি, ভারতে জিহাদ গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়া কাঠমান্ডু থেকে গ্রেপ্তার সিয়ামকে ভারতে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রয়োজন মনে করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যাব। 

শিলাস্তির জামিন নামঞ্জুর 
এমপি আনারকে হত্যার উদ্দেশে অপহরণের মামলায় শিলাস্তি রহমানের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম গতকাল তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। জামিন আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন আদালত। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা (আদালতে দায়িত্বরত) উপ-পরিদর্শক জালাল উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন।

কলকাতা থেকে আমাদের প্রতিনিধি দীপঙ্কর দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, গত মাসে কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সঞ্জিবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া মাংস খণ্ড এবং ভাঙড়ের বাগজোলা খাল থেকে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড় একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ মানুষের। ফরেনসিক বিভাগের প্রাথমিক এই পর্যবেক্ষণ হাতে পাওয়ার পর এবার ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি।

সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী জানিয়েছেন, ওই মাংস এবং হাড়ের টুকরো বাংলাদেশের এমপি আনারের কি না তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। 

সিআইডি সূত্রের খবর, ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি পাওয়া গেলে এমপি আনারের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক থাকা কোনো আত্মীয়কে ডেকে পাঠানোর জন্য ফের আদালতে আবেদন জানাবে সিআইডি।

৬ থেকে ১০ বছরেও শেষ হচ্ছে না ৩৫৭ প্রকল্প

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০৩:২৩ পিএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ০৩:২৩ পিএম
৬ থেকে ১০ বছরেও শেষ হচ্ছে না ৩৫৭ প্রকল্প
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১০ সালে। এ প্রকল্পটির বয়স ১৫ বছর পেরিয়েছে। কিন্তু এখনো পুরো কাজ শেষ হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের এটি একটি উদাহরণ মাত্র। কমপক্ষে ৩৫৭টি প্রকল্প ৬ থেকে ১০ বছরের মধ্যেও শেষ হয়নি। প্রকল্প গ্রহণ ও পরিচালনায় দূরদর্শিতার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির এই দুর্বলতার কারণে সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনা বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।

সরকারের ফাস্ট ট্র্যাকের অন্তর্ভুক্ত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পও এমন দীর্ঘ সময় ধরে বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এসব ভারী প্রকল্পের পাশাপাশি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে শেওলা, ভোমরা ও রামগড় স্থলবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নয়নের মতো ছোট প্রকল্পও দীর্ঘদিনে বাস্তবায়ন হয়নি। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটেও এসব প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, ৩৫৭টি প্রকল্পের বয়স ৬ থেকে ১০ বছর। আগামী এডিপিতে স্থান পেয়েছে ৫৭টি নতুন প্রকল্প। আগের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প আছে ১ হাজার ১৮৯টি। এর মধ্যে ১০ বছরের বেশি বয়স হয়েছে, এমন প্রকল্পের সংখ্যা ৩৬ এবং ৫ বছরের বেশি সময় ধরে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ৭৪৫টি। মোট প্রকল্প ১ হাজার ২৪৬টি।

এবারের এডিপিতে নতুন প্রকল্প রয়েছে ৫৭টি। পূর্ববর্তী অর্থবছরে অনুমোদন পেয়েছে, কিন্তু বরাদ্দ পায়নি এমন আরও ৫১ প্রকল্পও আগামী অর্থবছরের এডিপিতে স্থান পেয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সিপিডির বিশ্লেষণে বলা হয়, এডিপির প্রকল্পসমূহের ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রকল্প চারবার সংশোধিত হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বারবার বর্ধিত মেয়াদ পাওয়া এসব প্রকল্পের সংখ্যা ৫১৮।

দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আলোচিত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক পাল্টেছে একে একে ছয়জন। বছরের পর বছর চলে গেলেও প্রকল্প এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমান প্রকল্প পরিচালক মো. সবুক্তগীন খবরের কাগজকে বলেন, ‘পুরো প্রকল্প থেকে রামু-ঘুমধুম অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অবকাঠামো নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরও দুই মাস লাগবে। এরপর টেস্টিং ও কমিশনিং শেষে পুরোপুরি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। বর্তমানে সীমিত আকারে রেলপথটি চালু করে যাত্রী চলাচল করা হচ্ছে।’

আইএমইডির পরিচালক ড. মো. তায়েবুর রহমান এক গবেষণাপত্রে বলেছেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও বিলম্বের একটি বড় কারণ হলো পর্যাপ্ত সম্ভাব্যতা যাচাই ও অংশীজনের মতামতের অভাব।’ 

তার মতে, ‘দ্বিতীয় বড় কারণ দুর্বল প্রকল্প ডকুমেন্ট এবং তৃতীয় কারণ হলো ডিপিপিতে (ড্রাফট প্রজেক্ট প্রপোজাল) কোনো এক্সিট প্ল্যান না থাকা। এসব কারণে প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বারবার সমস্যার সম্মুখীন হয়। এতে বারবার সংশোধন ও সময় বাড়ানো প্রয়োজন হয়।’

সিপিডি জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটের এডিপিতে সাধারণ ও বিনিয়োগ প্রকল্পের বেশির ভাগই নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়নি। বছরের পর বছর ধরে বারবার একই প্রকল্প এডিপিতে স্থান পায়। মেয়াদ শেষ হয়, কিন্তু প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজ শেষ হয় না।

কোনো কোনো প্রকল্প কোনো অর্থবছরে নামমাত্র বরাদ্দ পেয়ে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে প্রকল্পের পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। ফলে জনগণ কিংবা রাষ্ট্র এসব প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবছর এ ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় নানা রকম চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা বা বিলম্ব আমাদের সক্ষমতার ঘাটতির নির্দেশনা দেয়। এ নিয়ে অতীতেও অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু কোনো উন্নতি আমরা দেখিনি। সমস্যা হলো, একটি বিনিয়োগ প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে না পারলে ব্যয় বাড়ে এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রিটার্ন পাওয়া যায় না। এটি তাৎক্ষণিক না হলেও দীর্ঘমেয়াদে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সাধারণ উন্নয়ন প্রকল্প যদি সময়মতো সম্পন্ন না হয়, তা হলে রাষ্ট্রের কষ্টার্জিত অর্থের অপচয় হয় এবং জনগণ প্রত্যাশিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পের একটি বড় অংশ বিদেশি ঋণে বাস্তবায়ন করা হয়। সুতরাং এসব প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন না হলে ঋণের দায় ও ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ে। এটি মূল্যস্ফীতির উচ্চহার সৃষ্টি ও আমদানি-রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।’ 

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি যে আগামী বাজেটে ঋণ পরিশোধে সরকার ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার মতো বরাদ্দ রেখেছে। সুতরাং ঋণের দায় ও চাপ আগামীতে আরও বাড়লে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ আরও ঘনীভূত হবে। ঋণের বিকল্প হলো সরকারের রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি। কিন্তু সেটি তো সরকার করতে পারছে না।’ 

গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি সংসদে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন। আগামী ৩০ জুন এ বাজেট পাস হওয়ার কথা রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এর সিংহভাগ সরকারের পরিচালন ব্যয়। এর মধ্যে এডিপিতে বরাদ্দ ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। অবশিষ্ট ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার জোগান হবে দেশি-বিদেশি ঋণ থেকে।

কানেকটিভিটিতে প্রাধান্য

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০২:৩২ পিএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ০২:৩২ পিএম
কানেকটিভিটিতে প্রাধান্য
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বাংলাদেশের ভেতর ভারতের ট্রেন যাবে। আবার ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল যাবে বাংলাদেশের ট্রেন। সম্প্রতি এমন সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে। ২০১০ সাল থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বহুমুখী সংযোগ শুরু হয়। ঢাকা বলছে, ১৯৬৫ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া সংযোগ পুনরায় চালু করা হচ্ছে। এ অবস্থায় কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের বড় একটি অংশ জুড়ে আছে কানেকটিভিটি বা সংযোগ। 

দুই দেশই সংযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এতে উভয় দেশই লাভবান হবে বলে কর্মকর্তারা বলছেন। উভয় দেশই বিপুল পরিমাণে ট্রানজিট শুল্ক পাবে। এ ছাড়া বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে সংযোগকে একটি বাস্তবতা বলে মনে করা হয়।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ভারতের নির্বাচনি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সংযোগ যত বাড়বে, ততই উন্নতি হবে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ শুরু হয়ে গেছে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা অবধি মিতালী এক্সপ্রেস চলছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মিলে আমরা রাধিকাপুর স্টেশনের সঙ্গে কানেকটিভিটি বাড়াচ্ছি।’

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। ভারত-বাংলাদেশ সংযোগ নিয়ে সম্প্রতি ভারতীয় নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় নিবন্ধ লেখেন তিনি। ‘সংযোগ উভয় দেশের জন্যই আশীর্বাদ’ শিরোনামে লেখা ওই নিবন্ধে তিনি বলেছেন, ‘সংযোগ এবং জ্বালানি নিরাপত্তা গত দুই দশক ধরে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কেন্দ্র-মঞ্চ দখল করেছে।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ এ প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিশ্বায়নের যুগে কানেকটিভিটি বা সংযোগ একটি বাস্তবতা। কানেকটিভিটির প্রসঙ্গ এলে এর বিপরীতে নিরাপত্তার প্রসঙ্গ চলে আসে, অবাঞ্ছিত শক্তির অনুপ্রবেশের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। আজকের প্রেক্ষাপটে এমন ভাবনা একেবারেই অমূলক। বর্তমান বিশ্বে শুধু মানুষে মানুষে নয়, এখন মানুষ যুক্ত হচ্ছে আইটি, তথ্য, জ্বালানি দেওয়া-নেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে।’

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যান। ওই সফরেও হাসিনা-মোদির যৌথ বিবৃতিতে দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক রেল, সড়ক ও অন্যান্য যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। উভয় পক্ষই টঙ্গী-আখাউড়া লাইনের ডুয়েল গেজে রূপান্তর, রেলওয়ে রোলিং স্টক সরবরাহ, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নত সেবার জন্য আইটি সহযোগিতার মতো চলমান দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।

দুই প্রধানমন্ত্রী কাউনিয়া-লালমনিরহাট-মোগলঘাট-নিউ গীতালদাহা সংযোগ, হিলি ও বিরামপুরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন, ট্র্যাক ও সিগন্যালিং সিস্টেমের আপগ্রেডেশন এবং বেনাপোল-যশোর লাইন বরাবর রেলস্টেশন, বুড়িমারী ও চ্যাংড়াবান্ধার মধ্যে সংযোগ পুনঃস্থাপনের মতো নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানান। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়ও সংযোগের বিষয়টি দুই পক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করে।

২০২৩ সালের ১ নভেম্বর দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভার্চুয়ালি উদ্বোধন হওয়া এই দুটি সংযোগ হলো আখাউড়া-আগরতলা ক্রস বর্ডার রেললিংক এবং খুলনা-মোংলা রেললাইন। 

হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আখাউড়া-আগরতলা আন্তসীমান্ত রেল সংযোগ প্রথমবারের মতো ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বাংলাদেশের সঙ্গে রেলপথে সংযুক্ত করবে। এটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে আরও ভালো সংযোগের সুবিধা দেবে এবং বাণিজ্য ও পর্যটনকে বাড়িয়ে তুলবে।’

দুই দেশের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সংযোগ পাকিস্তান আমলে ছিল। কিন্তু ১৯৬৫ সালের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। সেগুলোই নতুন করে চালু করছে ঢাকা-দিল্লি। 

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর সঙ্গে ভারতের নানা অঞ্চলের যোগাযোগ বহুদিন ধরে। ১৯৬৫ সালের পর অনেক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেগুলো আবার চালু করা হচ্ছে।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বায়নের যুগে কোনো দেশই একা একা চলতে পারে না। ইউরোপের দেশগুলোর উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। পুরো ইউরোপে সেই অর্থে কোনো সীমান্ত নেই। আর বাংলাদেশের তো তিন দিকে ভারত বেষ্টন করে আছে। কাজেই সংযোগ এখন সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম স্থলসীমান্ত। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ২ হাজার ২১৭ কিলোমিটার, আসামের সঙ্গে ২৬২ কিলোমিটার, মেঘালয়ের সঙ্গে ৪৪৩ কিলোমিটার, ত্রিপুরার সঙ্গে ৮৫৬ কিলোমিটার এবং মিজোরামের সঙ্গে ৩১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এ ছাড়া উভয় পাশে প্রায় ২০০টি ছিটমহল ছিল, যেগুলো দুই দেশের মধ্যে বিনিময় হয়েছে। 

শুধু যে রেল বা স্থল সংযোগের ওপর দুই দেশ গুরুত্ব দিচ্ছে তা নয়। গুরুত্ব দিচ্ছে মেরিটাইম কানেকটিভিটি বা সমুদ্র সংযোগেও। এর ফলে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। 

ভারতের বিখ্যাত গবেষণা সংস্থা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের সফল পরীক্ষায় ভারত-বাংলাদেশ সামুদ্রিক যোগাযোগকে একটি বড় উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ১৮ জুলাই এমভি শেজ্যোতি ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম থেকে এবং চারটি কনটেইনার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ার শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করে। চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ভারতের ল্যান্ডলকড উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার এটিই প্রথম ট্রায়াল ছিল বলে যাত্রাটি ছিল ঐতিহাসিক। এই পদক্ষেপটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কও জোরদার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

আগামীকাল পড়ুন: বাংলাদেশ-ভারত সংযোগ: কার কী লাভ (শেষ)

২ বছরের কাজ ৮ বছরে করেছেন ১০ প্রকল্প পরিচালক

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০২:০০ পিএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ০২:০০ পিএম
২ বছরের কাজ ৮ বছরে করেছেন ১০ প্রকল্প পরিচালক
ছবি: সংগৃহীত

একজন নয়, দুজন নয়, পাঁচজন নয়, ১০ জন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কেউ পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেননি। এর ফলে দুই বছরের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সময় লেগেছে আট বছর। শুধু তা-ই নয়, প্রকল্পের নিজস্ব কোনো লোকবল না থাকায় মনিটরিংও হয়নি। খরচ ১৮১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৭ কোটি টাকায়। কাজের গুণগত মান নিশ্চিতে ও যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য ২৪টি ‘প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি’র (পিএসসি) সভা করার কথা। কিন্তু আট বছরে একটিও আলোর মুখ দেখেনি। একইভাবে ২৪টির মধ্যে মাত্র একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভা হয়েছে। 

এটি যেনতেন প্রকল্প নয়, দেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগরের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের জন্য ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়ক উন্নীতকরণ প্রকল্পের বাস্তব চিত্র। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রভাব মূল্যায়ন খসড়া প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘসূত্রতায় উন্নয়নকাজে অর্থের অপচয় হচ্ছে। অর্থনীতিতেও পুরো সুফল পাওয়া যায় না। জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘উন্নয়নের এই চিত্র গোটা বাংলাদেশের। প্রায় প্রকল্পে বিভিন্ন অজুহাতে সময় বাড়ছে। অর্থের অপচয় হচ্ছে। প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। আইএমইডি কিছু মাপকাঠি ঠিক করেছে। ঘন ঘন পিডি পরিবর্তন করা যাবে না। ঠিকাদার যেন মানসম্পন্ন কাজ করে, তার নজরদারি বাড়াতে হবে, ক্ষেত্রবিশেষে জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ বাড়াতে হবে। অনেক প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে না। ঐতিহাসিক মুজিবনগর সড়কের একই চিত্র। পিডিরা নিজেদের দায়িত্ব অবহেলা করেছেন। ফলে ঠিকমতো হয়নি কাজ। বিনিয়োগেও বিলম্ব হয়েছে। ফলে অর্থনীতিতে সুফল পাওয়া যায় না।’      

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’ তারা তো এখন দায়িত্বে নেই। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তখন তো আমিও কোনো দায়িত্বে ছিলাম না। এখন তো সেই প্রকল্প শেষ হয়ে গেছে।’ ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তখন যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা বলতে পারবেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘কাগজ আমার হাতে নেই। এটা অনেক আগের প্রকল্প। কে কে দায়িত্বে ছিলেন তা দেখতে হবে। না দেখে কিছু বলা যাবে না।’  

এ ব্যাপারে মেহেরপুর চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল আনাম বকুল বলেন, ‘বর্তমানে আমরা দ্রুত ঢাকা ও খুলনা যেতে পারি। এলাকায় অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’ 

বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগরের সঙ্গে দেশের অন্য অঞ্চলসহ ঢাকার সংযোগ স্থাপন করার উদ্যোগ নেয় সরকার। কারণ সড়কটি চওড়া ছিল ৫ দশমিক ৫ মিটার। তা ৭ দশমিক ৩০ মিটার চওড়া করে ৭৬ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি নির্মাণে ২০১১ সালের ১১ মার্চ একনেকে পাস হয়। তখন ব্যয় ধরা হয় ১৮১ কোটি টাকা। পিডি নিয়োগ দেওয়া হলেও কাজে গতি বাড়েনি। খরচ বেড়ে ২৮৭ কোটি টাকায় ঠেকেছে, বেড়েছে ১০৬ কোটি টাকা বা ৫৯ শতাংশ। ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর সংশোধন করে এই খরচ বাড়ানো হয়েছে। দীর্ঘ সময়ে প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৯৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ ও আর্থিক অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।  

প্রকল্পের প্রধান প্রধান কাজ ধরা হয়- সড়ক বাঁধ প্রশস্তকরণ ৩ লাখ ঘনমিটার, পেভমেন্ট প্রশস্তকরণ ৭৬ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার, হার্ড শোল্ডার ৭৬ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার, আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ ১১ দশমিক ৮০ কিলোমিটার, আরসিসি রোড ডিভাইডার নির্মাণ ধরা হয় ৭৬০ মিটার। একই সঙ্গে সাইন, সিগনাল, রোড মার্কিং স্থাপনের কাজও ধরা হয়। ১৭টি প্যাকেজে এসব কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি প্যাকেজের মেয়াদ এক বছর ধরা হলেও নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করা হয়নি। কোনো প্যাকেজে কাজে তিন বছরও লেগেছে। প্রায় প্যাকেজের মেয়াদ পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী হলেও ঝিনাইদহ অংশের দু-একটি প্যাকেজের মেয়াদ বৃদ্ধি যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি। যা অডিট আপত্তিতে উঠে আসে। 

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে হয়েছে নানা অনিয়ম। পরিবহনের শৃঙ্খলা রাখতে সাইন, সিগনাল, রোড মার্কিং খাতে ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও খরচ করা হয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। খরচ কম করা হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘ সময়ে ১০ জন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এম মো. শরিফ উল ইসলাম মাত্র ২২ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর মো. আব্দুল কুদ্দুস ২৮ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। এভাবে অন্য পিডিরা আসতে না আসতে চলে গেছেন দায়িত্ব ছেড়ে। ফলে মনিটরিং ও সুপারভিশন মোটেই হয়নি। বারবার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তনের ফলে প্রকল্পের কাজে মনোনিবেশ করতে পারেননি কেউ। এর ফলে ১৬৭ শতাংশ মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

আইএমইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দিক হলো, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই মহাসড়কটি আগের মতো জরাজীর্ণ হয়ে যাবে। ঝিনাইদহ থেকে মেহেরপুর সড়কের পেভমেন্টের ভেতরে বড় বড় গাছ থেকে গেছে। এতে যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটে। মহাসড়কে ইজিবাইক, ভ্যানগাড়িসহ ছোট ছোট যানবাহন চলাচল নিষেধ থাকলেও এসব দেদার চলছে।   

আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমলেও বেড়েছে খাতুনগঞ্জে

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০১:১১ পিএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ০১:১১ পিএম
আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমলেও বেড়েছে খাতুনগঞ্জে
ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমতির দিকে। তবে তার প্রভাব পড়েনি চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে। উল্টো সেখানে প্রতি মণে (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ৮০ টাকা দাম বেড়েছে। এক মাস আগে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ গমের দাম ছিল ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩২০ টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ গম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৮০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমতির দিকে রয়েছে। তবে এক ডলারের মূল্য ১১৭ টাকা নির্ধারণ করায় দেশে গমের দাম বেড়েছে। 

খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ডলার রেটের কারণে গম আনতে গিয়ে খরচ বেশি পড়ছে। তাই পাইকারি থেকে খুচরা সব জায়গায় এর প্রভাব পড়েছে। তবে বেচাবিক্রি কম। তাই সামনে গমের দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
 
এদিকে বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে গম আমদানি অব্যাহত রেখেছে সরকার। চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দরে গত ৩ এপ্রিল রাশিয়া থেকে সাড়ে ৫২ হাজার টন, ৯ এপ্রিল লাটভিয়া থেকে ৫০ হাজার ৭১০ টন এবং ৯ মে রাশিয়া থেকে সাড়ে ৫৩ হাজার টন গম নিয়ে জাহাজ আসে। 

বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে প্রতি টন গমে বুকিং রেট ছিল ৪২২ ডলার। ওই বছরের ডিসেম্বরে প্রতি টন গমে বুকিং রেট ছিল ৩৮৬ ডলার। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন গম বিক্রি হয় ৩৪৫ ডলারে। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি টন গমে বুকিং রেট পড়ে ৩৯৪ ডলার। এরপর ২০২৩ সালের মার্চে প্রতি টন বিক্রি হয় ৩৬৯ ডলারে। ওই বছরের এপ্রিলে প্রতি টন গমে বুকিং রেট ছিল ৩৭৮ ডলারে। এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতি টন গম কিনতে আমদানিকারকের খরচ পড়ে ২৮৩ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে কমে ২৭৮ ডলার, মার্চে ২৭৪ ডলার এবং এপ্রিল মাসে প্রতি টন গমে বুকিং রেট পড়ে ২৭২ ডলার। অর্থাৎ বিশ্ববাজারের চিত্রে গমের দাম কমতির দিকে। 

তবে খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক এবং বিএসএম গ্রুপের স্বত্বাধিকারী আবুল বশর বলেন, খাতুনগঞ্জে গমের বেচাকেনা তেমন নেই। তাই আমরা প্রতি মণ গম ১ হাজার ৩৩০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছি। 

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে পেঁয়াজের কেজি শত টাকা ছুঁয়েছে। ডিমের দামও আকাশছোঁয়া। গমের তৈরি বিভিন্ন পণ্য আমরা প্রতিনিয়ত খাচ্ছি। তাই সব সময় গমের চাহিদা থাকে। 

আর এ চাহিদাকে পুঁজি করে সব সময় কোনো না কোনো ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আমরা সব সময় বলে আসছি, আমদানিকারক থেকে শুরু করে পাইকার, সবার ক্রয়-বিক্রয় রশিদ যাচাই করতে হবে। খুচরা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তা হলে ভোক্তারা এর সুফল পাবে।’ 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আমরা বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করছি। ডিমের দাম কেন বেড়েছে তা যাচাই করতে আজ (বৃহস্পতিবার) আমরা পাহাড়তলি বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছি। এভাবে আমরা সাধ্যমতো বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করছি। জনস্বার্থে তা অব্যাহত থাকবে।’

প্রসঙ্গত, দেশে দৈনিক খাদ্যতালিকায় ভাতের পরই সবচেয়ে বেশি গম দিয়ে বিভিন্ন খাবার তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে ১২ লাখ ৬ হাজার টন গম উৎপাদন হয়। বাকি চাহিদা মেটাতে রাশিয়া, ইউক্রেন ও ভারত থেকে গম আমদানি করা হয়। 

রাজস্ব আয় : লক্ষ্যমাত্রায় লাগবে ৮৫ হাজার ৬২২ কোটি টাকা

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০১:০৯ পিএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ০২:২৯ পিএম
রাজস্ব আয় : লক্ষ্যমাত্রায় লাগবে ৮৫ হাজার ৬২২ কোটি টাকা
ছবি : সংগৃহীত

মে মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২ হাজার ৯৭২ টাকা কোটি টাকা বেশি আদায় করলেও চলতি অর্থবছরের মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের সংশোধিত ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে এনবিআরকে আরও ৮৫ হাজার ৬২২ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। 

অর্থনীতির বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, অর্থবছরের শেষ (জুন) মাসের হিসাব ছাড়াই বড় অঙ্কের ঘাটতি দেখা দিল। শেষ মাসে কত আর আদায় হবে! এত টাকা জুন মাসের শেষ পর্যন্ত আদায় করা এনবিআরের পক্ষে সম্ভব হবে না। এর ফলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

চলতি অর্থবছরের শুরুতে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ লক্ষ্যমাত্রা  থেকে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে পিছিয়ে আছে ১ লাখ ৫ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। শুরু থেকেই লক্ষ্য অর্জনে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিলে অর্থবছরের মাঝামাঝি কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। 

এনবিআর সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের গত ১১ মাস (জুলাই-এপ্রিল) পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩ লাখ ২৪  হাজার ৩৭৮ কোটি ২০ লাখ টাকার শুল্ক-কর-ভ্যাট আদায় হয়েছে। এই সময় সংস্থাটির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩ লাখ ২৫ হাজার ৭৪০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। মে মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ২৯ কোটি  টাকা। এই এক মাসে আদায় হয়েছে ৩৫ হাজার ১ কোটি টাকা। এই এক মাসে বেশি আদায় হয়েছে ২ হাজার ৯৭২ টাকা। 

এনবিআরসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জন্য আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। গত ১১ মাসে এ খাতের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৫৫ কোটি টাকা। এ সময়ে আদায় হয় ৯১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে ৮ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। 

ভ্যাটে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। মে মাস পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। আদায় হয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। এ সময়ে ঘাটতি ৪ হাজার ৯৯২ টাকা। 

আয়করে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। গত মে মাস পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২ হাজার ৬২৮ টাকা। এ সময় পর্যন্ত আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। বেশি আদায় হয়েছে ১২ হাজার ৪২৫ কোটি  টাকা। 

লক্ষ্যমাত্রা পূরণ থেকে অনেক পিছিয়ে থাকলেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪.৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। এর মধ্যে আয়কর আদায়ে সর্বোচ্চ ১৮.০৯ শতাংশ, ভ্যাটে ১৬.৩৫ শতাংশ ও আমদানি পর্যায়ে ৯.৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।

অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের যে সংশোধিত লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল, তার চেয়ে ২৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা কম আদায় হয়। যা মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা কম ছিল। 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া ঋণের শর্ত হিসেবে এবার বাড়তি রাজস্ব আদায়ের শর্তও পূরণ করতে হবে সংস্থাটিকে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, রাজস্ব খাতে সংস্কারের পাশাপাশি প্রতিবছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ০.৫ শতাংশ হারে বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিল আইএমএফ। অর্থ বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হলেও এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অতিরিক্ত ২৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করতে হতো। এর মধ্যে আয়কর খাতে ৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা, ভ্যাট থেকে ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা ও ১১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা কাস্টমস খাতে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ডলারসংকটের কারণে এনবিআর রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে পড়েছে। এতে আইএমএফের কাছ থেকে চাপ বাড়লেও অর্থবছরের আর এক মাসের হিসাব যোগ করা হলেও এবারের মোট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়।