![লা মাসিয়ায় ‘নতুন মেসি’](uploads/2024/05/05/New-Messi-1714889212.jpg)
মর্নিং শোজ দ্য ডে; বহুল ব্যবহৃত বাক্য। যার অর্থ, একটি সকাল বলে দেয় গোটা দিনের পূর্বাভাস। বাগধারার ঢঙে বললে, উঠন্তি মূলা পত্তনেই চেনা যায়। যেমনটা চেনা গিয়েছিল লিওনেল মেসিকে। যখন তার বয়স মাত্র ১০ বা তারও কম। ছোট্ট দুটি পায়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন আর্জেন্টিনার নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ ক্লাব। সেখান থেকে বার্সেলোনার সঙ্গে ঐতিহাসিক ন্যাপকিন চুক্তি, লা মাসিয়ায় মেসির যাত্রা-বাকি ইতিহাস সবারই জানা।
খেলোয়াড় তৈরির খামার বাড়ি খ্যাত বার্সেলোনার লা মাসিয়া এখনো বিদ্যমান। যেখানে প্রতিনিয়তই দেখা মেলে ক্ষুদে ফুটবলারদের নজরকাড়া সব পারফরম্যান্স। সাম্প্রতিক সময়ে এই লা মাসিয়ার অধীনে থাকা এক ক্ষুদে ফুটবলার তুমুল আলোচনায়। যার ফুটবলশৈলী দেখে অবাক সবাই। ১০ বছর বয়সী এই ফুটবলারকে ডাকা হচ্ছে নতুন মেসি বলে।
নাম তার পেদ্রো জুয়ারেজ। সবাই ডাকে পেদ্রিতো বলে। মেসির মতো এই কিশোরের বাড়িও আর্জেন্টিনার সাল্টা শহরে। ২০১৪ সালে জন্ম। তার বয়স যখন দুই বছর তখন পরিবারের সঙ্গে চলে যায় ক্যালিফোর্নিয়ায়। এরপর ২০২০ সাল থেকে বার্সেলোনায় বসবাস শুরু। এরপরই তার দিকে নজর পড়ে বার্সেলোনার কর্তৃপক্ষের। বার্সার স্কাউটস টিম দ্রুতই পেদ্রোকে প্রস্তাব করে তাদের হয়ে খেলতে। তারই জের ধরে ক্ষুদে পেদ্রো এখন লা মাসিয়ার অন্যতম সদস্য। খেলছে বার্সার ইয়ুথ টিমেও।
স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কা পেদ্রো নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে কয়েকটি ভিডিও। যা দেখে চক্ষু চরখগাছ অনেকেরই। ফুটবল নিয়ে তার কসরত মুগ্ধ করার মতো। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, টেনিস বলে তার দক্ষতা। মিনিট খানেকের ভিডিওতে দেখা যায়, টেনিস বল নিয়ে দুই পায়ে অসাধারণ কারিকুরি। পা থেকে কখনো মাথায়, কখনোবা সামনের দেয়ালের সঙ্গেও দারুণ সমন্বয়ে দেখিয়েছে দক্ষতা।
শুধু ব্যক্তিগত কসরত বা ড্রিবলিং নয়, মাঠের খেলাতেও পেদ্রো সিদ্ধহস্ত। অনেকটা লিওনেল মেসির মতোই। এক ভিডিওতে দেখা যায়, ম্যাচ কিক অফের পর বল নিয়ে চোখের নিমিষেই চার-পাঁচজনকে ড্রিবল করে গোল করছে ছোট্ট পেদ্রো। মেসির সঙ্গে পার্থক্য একটা জায়গায়, বাঁ-পায়ে বেশি গোল করেন মেসি, পেদ্রো করেন ডান পায়ে।
পেদ্রোকে নিয়ে শুরু হয়েছে আর্জেন্টিনা ও স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের টানাটানি। দুই ফেডারেশনের লক্ষ্য তাদের হয়ে যেন খেলা শুরু করে পেদ্রো। তবে কিশোর পেদ্রো আপাতত কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি। তার লক্ষ্য আপাতত খেলা চালিয়ে যাওয়া। জাতীয় দলের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৫ পর্যায় থেকে শুরু করতে চায় সে। আর সেটা হোক আর্জেন্টিনা কিংবা স্পেন। সিদ্ধান্ত নেবে পরিবার।
কেমন খেলে পেদ্রো এক সাক্ষাৎকারে তা জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার ধারাভাষ্যকর হোর্হে ডি আলেসান্দ্রো। তিনি আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশনকে আগাম জানিয়ে রেখেছেন, পেদ্রো নামের এই রত্নকে যেন চোখে চোখে রাখে। পেদ্রোর স্কিল, গতি, ড্রিবলিং নিয়ে আলেসান্দ্রো বলেছেন, ‘তার প্রতিভা ঐশ্বরিক। তার বল রিসিভ, পাস, ড্রিবলিং সত্যিই মনমুগ্ধকর। যত্নে রাখতে পারলে ভবিষ্যতের মেসিও হতে পারে।’
কাতালান ইয়ুথ লিগে খেলা পেদ্রোর সবচেয়ে বড় গুণ হলো একক প্রচেষ্টায় গোল করা। অনেকটাই আজকের মেসির মতো। একটি পরিসংখ্যানে বুঝা যাবে এর মাহাত্ম্য। চলতি মৌসুমে কাতালানদের হয়ে পেদ্রো ২৬ ম্যাচে করেছে ৩৮ গোল। এমন পারফরম্যান্সে তার ধারের কাছে নেই কেউ।
মেসির সঙ্গে পেদ্রোর তুলনাটা তাই কেউ অতিরঞ্জিত ভাবছে না। ছোট্ট মেসিকে নিয়ে তাই আশায় বুক বাঁধছে দুই দেশ আর্জেন্টিনা ও স্পেন। কারা নিজেদের করে নিতে পারবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে পেদ্রো যে ভবিষ্যতের একজন তারকা, তার প্রমাণ বিশ্ব খ্যাত ক্রীড়া সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নাইকির সঙ্গে তার স্পন্সরশিপ চুক্তি। ভাবা যায়?