তীব্র গরমের মধ্যে কিশোরগঞ্জে বেড়েছে তরমুজের চাহিদা। তবে তরমুজের পাইকারিমূল্য কম থাকলেও খুচরা বাজারে এর দাম অনেক বেশি। একই শহরে আধা কিলোমিটার দূরে তরমুজের মূল্যের এমন তারতম্য থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তরমুজ ঢাকা থেকে বেশি দামে কিনে এনেছেন তারা। সব খরচ মিলিয়ে তরমুজে তেমন লাভ হয়নি। এক মাস আগে তরমুজ কেনার পর বেশির ভাগ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দাম বেশি রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তে এক দিনের বেশি তরমুজ রাখলে গরমে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই স্বল্প লাভে তরমুজগুলো বিক্রি করতে হচ্ছে।
রবিবার (১৯ মে) বিকেলে স্থানীয় বড় বাজার জাহাঙ্গীর মোড়, পুরান থানা ও কাচারি বাজারের ফলের দোকানগুলোয় গিয়ে দেখা গেছে, মৌসুমি ফলে দোকানগুলো ভরপুর। তবে সব ফলের মধ্যে তরমুজ বেশি। বাজারে একটি বড় সাইজের তরমুজ খুচরা বিক্রি করছেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এ ছাড়া ছোট ছোট ভ্যানগাড়িতে করে ৩০ টাকায় কেনা তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা দরে।
কয়েকজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শেষ সময়ে বাজারে তরমুজের দাম অনেক বেশি। সুযোগ পেলে দাম বাড়িয়ে একটা তরমুজ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকাও বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনকে একটা তরমুজ কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিছু ব্যবসায়ী ইচ্ছা করে দাম বাড়িয়ে দেন। আর বাজারে তো সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। দুর্মূল্যের বাজারে গরমে একটু তরমুজ কিনে খাওয়াও সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। তরমুজসহ অন্য ফলের দামও অনেক বেশি। দাম কমানোর জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
স্টেশন রোডের ফলের আড়তের আনাহিতা এন্টারপ্রাইজের মালিক এ বি এম শফিকুল মবিন বলেন, ‘ছোট সাইজের ১০০ তরমুজ তিন হাজার টাকা বিক্রি করেছি। সে অনুযায়ী একটি ছোট সাইজের তরমুজের ৩০ টাকা দাম পড়েছে। পাইকারি দরে বড় সাইজের ১০০ পিস তরমুজ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা বিক্রি করছি।
নিউটাউন বটতলা স্টেশন রোডে অবস্থিত মেসার্স শাহজালাল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আসাদুল হক বলেন, ‘এটাই হয়তো শেষ চালান। আর হয়তোবা তরমুজের গাড়ি আসবে না। ছোট তরমুজগুলো প্রতি পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে ভ্যানগাড়িতে যারা বিক্রি করেন তারা কিনে নিয়ে যান। বড় তরমুজগুলো বিভিন্ন ফলের দোকানের ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান। বর্তমানে খুলনার তরমুজ আমাদের এলাকায় আসছে। প্রথমদিকে বরিশাল, পটুয়াখালীর তরমুজ এসেছে। তরমুজ প্রতিটি আড়তদারের ঘরেই কমবেশি রয়েছে। তবে শেষ পর্যায়ে। এই কারণেই হয়তো তরমুজের দাম খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
একই স্থানের মেসার্স বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ পাইকারী ব্যবসায়ী মো. মতিউর রহমান রোকন বলেন, ‘সাতক্ষীরা জেলার কিছু কিছু জায়গা থেকে তরমুজ আসছে। আমরা এখন আড়তে আম আনছি উত্তরবঙ্গ থেকে। তরমুজের শেষের দিকে দাম একটু বেশিই থাকে। তবে পাইকাররা দাম বাড়িয়ে দিলে খুচরা ব্যবসায়ীরা কিনতে গড়িমসি করে। যার কারণে আমরা তরমুজসহ সব ফলের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করি।’
এদিকে বড় বাজারের খুচরা ফল ব্যবসায়ী শামীম বলেন, ‘আমাদের আড়ত থেকে ফলগুলো দোকানে আনলে খরচ বেশি হয়। সবগুলো তরমুজের সাইজ কিন্তু এক হয় না। কোনো কোনো তরমুজ ১২০ টাকা অথবা ১৪০ টাকা দিয়ে কিনে আনলেও, তা বিক্রি করতে হয় ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। সাইজের জন্য মানুষ বেশি দামে তরমুজ কিনতে চায় না। আর বড় তরমুজগুলো একেকটা ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের হয়। সেগুলো একটু ভালো দামে বিক্রি করি।’
কাচারি বাজারের খুচরা ফল ব্যবসায়ী বিল্লাল বলেন, ‘একটা বড় সাইজের তরমুজ আমার দোকানে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আমরা স্থানীয় ফলের আড়ত থেকে কিনে আনি নাই। আমরা তরমুজ ঢাকা থেকে কিনে এনেছি। খরচ বেশি, এইজন্য দামও বেশি।’
কাচারি বাজারের ফলের খুচরা ব্যবসায়ী আনোয়ার বলেন, ‘বড় সাইজের ১০০ পিস তরমুজের দাম পাইকাররা ৪০ হাজার টাকা রাখেন। আমাদের পরিবহন খরচ ও শ্রমিকের মজুরি দিয়ে একটা তরমুজ বর্তমানে ৫০০ টাকাও পোষায় না। শেষ সময়ে তরমুজের দাম একটু বেশি হবেই।’
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আলম সারোয়ার টিটু খবরের কাগজকে বলেন, ‘তরমুজসহ সব ফলের দামই অনেক বেশি। গরমের কারণে ব্যবসায়ীরা তরমুজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাজার মনিটরিং করলে হয়তো ব্যবসায়ীরা এত দামে জিনিসপত্র বিক্রি করতে পারতেন না। এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জ শাখার পরিচালককে জানানো হয়েছে।’
বাজার মনিটরিং ও তরমুজের দামের বিষয়ে কিশোরগঞ্জের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিককে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।