ঢাকা ১০ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

ধাপে ধাপে তামাত্তু হজ

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪, ১১:১৫ এএম
ধাপে ধাপে তামাত্তু হজ
ছাড়া হাতে হেঁটে চলছেন হাজিরা

হজ তিন প্রকার—ইফরাদ, কিরান ও তামাত্তু। অধিকাংশ হাজি তামাত্তু হজ পালন করেন। এটি পালন করা সুবিধাজনক ও অপেক্ষাকৃত কম কষ্টসাধ্য। এক ইহরামে ওমরা শেষ করে আলাদা ইহরামে হজ করা তামাত্তু হজ। তামাত্তু হজ পালনের ধারাবাহিক পদ্ধতি তুলে ধরা হলো

ধাপ-১ ওমরার ইহরাম (ফরজ): ইহরাম পড়ার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সেরে অজু-গোসল করে নিতে হবে। যারা সরাসরি মক্কায় যাবেন, পুরুষরা ঘর কিংবা হজক্যাম্প থেকে সেলাইবিহীন একটি সাদা কাপড় পরুন, অন্যটি গায়ে জড়িয়ে নিন। নারীরা তাদের ইহরামের পোশাক পরে নিন। ইহরামের নিয়তে দুই রাকাত নামাজ পড়ুন। শুধু ওমরার নিয়ত করে (নিয়তের শব্দ মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়; অন্তরের ইচ্ছাই যথেষ্ট) এক বা তিনবার তালবিয়া (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক...) পড়ুন। 

ধাপ-২ ওমরার তাওয়াফ (ফরজ): অজুর সঙ্গে ইজতিবাসহ সাতবার কাবাঘর তাওয়াফ করুন। ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নিচে রেখে চাদরের দুই মাথাকে বাম কাঁধের সামনে ও পেছনে ফেলে রাখা হলো ইজতিবা। হাজরে আসওয়াদ সামনে রেখে তার বরাবর ডান পাশে দাঁড়িয়ে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে তাওয়াফ শুরু করুন। সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদে চুমু দিন বা স্পর্শ করুন। সম্ভব হলে রুকনে ইয়ামেনি হাত দিয়ে স্পর্শ করুন। রুকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদের মাঝখানে ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া কিনা আজাবান্নার, ওয়াদ খিলনাল জান্নাতা মাআল আবরার, ইয়া আজিজু ইয়া গাফফার, ইয়া রাব্বাল আলামিন’ দোয়াটি পড়ুন। হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত এসে চক্কর পুরো করুন। এরপর হাজরে আসওয়াদ বরাবর দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে দ্বিতীয় চক্কর শুরু করুন। এভাবে সাত চক্করে তাওয়াফ শেষ করুন। প্রথম তিন চক্করের সময় পুরুষের জন্য রমল করা সুন্নত। রমল হলো দ্রুতগতিতে বীরদর্পে ঘন ঘন পায়ে চলা। পরের চার চক্কর সাধারণভাবে হেঁটে তাওয়াফ করুন। 

ধাপ-৩ দুই রাকাত নামাজ (সুন্নত): তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিমের পেছনে বা হারাম শরিফের যেকোনো জায়গায় (মাকরুহ সময় ছাড়া) দুই রাকাত নামাজ পড়ুন। এটি দোয়া কবুলের জায়গা। নামাজ শেষে দাঁড়িয়ে জমজমের পানি পান করুন। 

ধাপ-৪ সাঈ করা (ওয়াজিব): সাফা পাহাড়ের ওপরে উঠে কিবলামুখী হয়ে সাঈর নিয়ত করে হাত তুলে তিনবার তাকবির বলে দোয়া করুন। তারপর সাঈ শুরু করুন। সাফা থেকে মারওয়ার দিকে রওনা হয়ে দুই সবুজ দাগের জায়গাটি দ্রুত অতিক্রম করুন। এভাবে এক চক্কর পূর্ণ হলো। মারওয়া পাহাড়ে ওঠার আগে দোয়া করুন। মারওয়া পাহাড়ের ওপরে উঠে কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে দোয়া করুন। এবার সাফায় আসুন। এভাবে সাতটি চক্কর দিলে একটি সাঈ পূর্ণ হয়। সপ্তম চক্কর মারওয়ায় গিয়ে শেষ হবে। 

ধাপ-৫ হলক করা (ওয়াজিব): পুরুষরা মাথা মুণ্ডন করুন। মাথার চুল ছাঁটতেও পারবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মাথা মুণ্ডন করতেন। নারীরা চুলের এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটুন। এতে ওমরার কাজ সম্পন্ন হবে। এরপর হজের ইহরাম না বাঁধা পর্যন্ত স্বাভাবিক হালাল সব কাজ করা যাবে। 

ধাপ-৬ হজের ইহরাম (ফরজ): হারাম শরিফের যেকোনো স্থান বা নিজ বাসা থেকে আগের নিয়মে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে ৮ জিলহজ জোহরের আগে মিনায় পৌঁছে যান। 

ধাপ-৭ মিনায় অবস্থান (সুন্নত): ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করুন এবং সেখানে অবস্থান করুন।

ধাপ-৮ আরাফাতে অবস্থান (ফরজ): জিলহজের ৯ তারিখ সূর্য হেলার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা ফরজ। সে সময় মনোযোগসহকারে হজের খুতবা শুনুন। তাঁবুতে অবস্থানকারীরা জোহর ও আসর নামাজ মুকিম হলে চার রাকাত এবং মুসাফির হলে দুই রাকাত করে আদায় করুন। মসজিদে নামিরায় উভয় নামাজ জামাতে পড়লে একসঙ্গে পড়ুন। সূর্যাস্তের পর মাগরিব না পড়েই মুজদালিফার দিকে রওনা হোন। 

ধাপ-৯ মুজদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব): আরাফা থেকে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফায় গিয়ে এশার সময় মাগরিব ও এশা এক আজানে এবং এক ইকামাতে একসঙ্গে আদায় করুন। (মাগরিবের ওয়াক্ত চলে গেলেও, রাত গভীর হলেও মুজদালিফায় পৌঁছেই মাগরিব ও এশা পড়তে হবে)। এখানেই রাতযাপন করুন, এটি সুন্নত। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। সূর্য ওঠার আগে মুজদালিফা থেকে মিনার উদ্দেশে রওয়ানা হতে হবে। সম্ভব হলে রাতে ৭০টি ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করুন। মিনায় যাওয়ার পথেও সংগ্রহ করতে পারবেন। 

ধাপ-১০ পাথর নিক্ষেপ (১০ জিলহজ, ওয়াজিব): মিনায় পৌঁছে বড় জামারাকে (বড় শয়তান) সাতটি পাথর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। ১০ তারিখ সুবহে সাদিকের পর থেকে পর দিন সুবহে সাদিকের আগে যেকোনো সময় পাথর নিক্ষেপ করা যাবে। দুর্বল ও নারীরা রাতে এ কাজটি করতে পারেন। 

ধাপ-১১ কোরবানি করা (ওয়াজিব): ১০ জিলহজ পাথর মারার পরই সঠিকভাবে কোরবানি করুন। কোরবানির পর মাথা মুণ্ডন বা মাথার চুল ছাঁটা ওয়াজিব। নারীরা এক ইঞ্চি পরিমাণ চুল কাটুন। পাথর মারা, কোরবানি করা ও চুল কাটার মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি। ব্যতিক্রম বা ভুল হলে দম বা কোরবানি দিতে হবে। 

ধাপ-১২ তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ): ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াফে জিয়ারত করতে হবে। ১২ তারিখের পর তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করলে দম বা কোরবানি দিতে হবে। নারীরা প্রাকৃতিক কারণে না করতে পারলে পবিত্র হওয়ার পর করবেন। 

ধাপ-১৩ সাঈ (ওয়াজিব): তাওয়াফ শেষে সাফা-মারওয়ায় গিয়ে সাঈ করুন। সাফা থেকে শুরু হয়ে মারওয়ায় গিয়ে সাঈ শেষ হয়। সাফা পাহাড়ের ওপরে উঠে কিবলামুখী হয়ে সাঈর নিয়ত করে সাঈ শুরু করুন। সাফা থেকে মারওয়ার দিকে রওনা হয়ে দুই সবুজ দাগের জায়গাটি দ্রুত অতিক্রম করুন। এভাবে এক চক্কর পূর্ণ হলো। মারওয়া পাহাড়ে ওঠার আগে দোয়া করুন। মারওয়া থেকে সাফায় আসুন। এভাবে সাতটি চক্কর দিলে একটি সাঈ পূর্ণ হয়। সপ্তম চক্কর মারওয়ায় গিয়ে শেষ হবে। 

ধাপ-১৪ পাথর নিক্ষেপ (ওয়াজিব): ১১ ও ১২ জিলহজ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় জামারায় (ছোট, মধ্যম ও বড় শয়তান) সাতটি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। ছোট জামারা থেকে শুরু করে বড় জামারায় তা শেষ করুন। এ দুই দিন দুপুর থেকে পাথর নিক্ষেপের সময় শুরু। পরদিন সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় পাথর নিক্ষেপ করা যাবে। সূর্যাস্তের আগে হলে ভালো। রাতেও করা যাবে। দুর্বল ও নারীরা নিরাপদ সময়ে নিক্ষেপের জন্য বেছে নিতে পারেন। 

ধাপ-১৫ মিনায় রাতযাপন ও মিনা ত্যাগ: ১০-১১ জিলহজ মিনাতেই রাতযাপন করুন। ১৩ জিলহজ মিনায় না থাকতে চাইলে ১২ জিলহজ সন্ধ্যার আগে মিনা ত্যাগ করুন। ১৩ তারিখ সুবহে সাদিকের পর মিনায় অবস্থান করলে তার জন্য ১৩ তারিখেও পাথর নিক্ষেপ করা সুন্নত। ১২ তারিখের পর একজন হাজি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন।

ধাপ-১৬ বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব): বাংলাদেশি হজযাত্রীদের হজ শেষে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয়, এটি ওয়াজিব। 

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

তওবা করার নিয়ম

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১০:২৫ এএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ০৩:৩৩ পিএম
তওবা করার নিয়ম
ইহরামের শুভ্র পোশাক পরে আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন হাজি। ছবি: হারামাইন

তওবা শব্দের অর্থ ফিরা, ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা ইত্যাদি। পরিভাষায় তওবা বলা হয়, শরিয়তবহির্ভূত নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করে ইসলাম নির্দেশিত কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ফিরে আসা এবং আল্লাহর বিধানের ওপর অটল-অবিচল থাকা। আল্লাহতায়ালা তওবা করার আদেশ দিয়ে পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা, তোমারা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা করো; যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৩১)

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো; খাঁটি তওবা।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে মানবজাতি, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো।’ (মুসলিম, হাদিস: ৭০৩৪)

শয়তান মানুষের আজন্ম শত্রু। সে সব সময় মানুষের পদস্খলন চায়। শয়তানের অভিনব প্রলোভনে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় পা দিয়ে ফেলে অনেকেই। তাই বিশেষজ্ঞ আলেমরা বলেন, সবসময় তাওবা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজিব। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২২)

তওবা যেভাবে করতে হয় 
মহান আল্লাহর হক বা অধিকার সম্পর্কিত হলে তিনটি শর্ত বাস্তবায়ন করলেই তওবা হয়ে যাবে। শর্ত তিনটি হলো— 

  • পুরোপুরিভাবে পাপ ছেড়ে দিতে হবে।
  • পাপের জন্য অনুশোচনা করতে হবে, লজ্জিত ও অনুতপ্ত হতে হবে।
  • ওই পাপ দ্বিতীয়বার না করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। এবং এর ওপর অটল ও অবিচল থাকতে হবে। 

মানুষের হক বা অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলে আরও একটি শর্ত যুক্ত হবে, তা হলো সেই ব্যক্তি মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে অথবা তার পাওনা-প্রাপ্তি, হক ফিরিয়ে দিতে হবে। এই শর্তগুলো পূরণ করলেই তওবা শুদ্ধ হবে। অন্যথায় তওবা বিশুদ্ধ হবে না। 

তওবা জান্নাতপ্রাপ্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও ভালোবাসা লাভের একটি বড় সুযোগ ও উপায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীকে ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২২)


লেখক: আলেম ও গবেষক

 

পেট ব্যথা কমানোর দোয়া

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪, ০৭:৩৩ পিএম
পেট ব্যথা কমানোর দোয়া
পেট ব্যথার যন্ত্রণায় পেটে হাত দিয়ে বসে আছেন এক ব্যক্তি। ইন্টারনেট

নানা কারণে অনেক সময় পেট ব্যথা হয়। পেট ব্যথা যে কারণেই হোক তা মানুষের জন্য মারাত্মক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই কোনো কারণে যদি মানুষের পেট ব্যথা হয়, তবে তা থেকে মুক্ত থাকতে চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশ বিভিন্ন দোয়া ও আমল করা যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে প্রচুর দোয়া-আমল হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

পেট ব্যথার দোয়া
উসমান ইবনে আবুল আস (রা.) বলেন, ‘একবার তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে পেট ব্যথার কথা বলেন। উসমান (রা.) বলেন, ব্যথায় আমাকে অস্থির করে তুলেছে। নবিজি (সা.) বলেন, তুমি ব্যথার স্থানে সাতবার ডান হাত বুলিয়ে দাও এবং বলো, 


أعوذُ باللهِ و قُدرتِه من شرِّ ما أَجِدُ و أُحاذِرُ

বাংলা উচ্চারণ: আউজু বিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু।

বাংলা অর্থ: আল্লাহর মর্যাদা ও তার কুদরতের উসিলায় আমি যা অনুভব এবং ভোগ করছি, তা থেকে মুক্তি চাচ্ছি।

উসমান (রা.) বলেন, আমি এমন করার সঙ্গে সঙ্গেই আল্লাহ আমার কষ্ট দূর করে দেন। এরপর থেকে আমি আমার পরিবার-পরিজন ও অন্যদেরকে এমন করার নির্দেশ দিই। (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৫১)

লেখক : আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

 

সালামের উত্তর কীভাবে দিতে হয়?

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪, ০৯:৫৯ এএম
আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪, ১০:০০ এএম
সালামের উত্তর কীভাবে দিতে হয়?
আরবিতে 'আসসালামু আলাইকুম' লেখা ছবি। ইন্টারনেট

সালাম মুসলিম সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। মুসলিমরা একে অপরকে অভিবাদন জানায় সালামের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন তোমরা ঘরে ঢুকবে নিজেদের লোকদের সালাম করবে, কারণ এটা সাক্ষাতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত বরকতপূর্ণ ও পবিত্র দোয়া।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৬১)

সালামের উত্তর কীভাবে দিতে হবে, তা শিখিয়ে দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যখন তোমাদের কেউ সালাম দেয়, তখন তোমরা (তাকে) তদপেক্ষা উত্তমরূপে সালাম (জবাব) দাও, কিংবা (অন্ততপক্ষে) সে শব্দেই সালামের জবাব দাও।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৮৬)

সালাম দেওয়া ইসলামের সৌন্দর্য। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা-অচেনা সকলকে সালাম দেবে।’ (বুখারি, হাদিস: ১২; মুসনাদে আহমাদ, ৬৭৬৫)

সালামের সম্পূর্ণ বাক্যটি হলো,

বাংলা উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।

বাংলা অর্থ: আপনার ওপর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। 

কেউ আসসালামু আলাইকুম বললে, উত্তরে ওয়ালাইকুম আস ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলা উচিত। অর্থাৎ সালামদাতার চেয়ে উত্তরদাতা শব্দ বাড়িয়ে বলবেন। মনে রাখবেন, কেউ সালাম দিলে তাকে শুনিয়ে উত্তর দেওয়া ওয়াজিব।

যত কথা ও কাজই থাকুক না কেন, দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে সালাম দেওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য। সালামের মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি হয়। 

উল্লেখ্য যে, ‘সালামুন আলাইকুম’, ‘সালামুন আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’, ‘সালামুন আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ’ ইত্যাদি বাক্য দ্বারাও সালাম  দেওয়া জায়েজ আছে। এ বাক্য দ্বারা ফেরেশতারা জান্নাতবাসীদের সম্ভাষণ জানাবেন বলে কোরআনে একাধিক আয়াত রয়েছে। (সুরা জুমার, আয়াত: ৭৩; সুরা নাহল, আয়াত: ৩২)


লেখক: আলেম ও গবেষক

 

হজযাত্রীর মৃত্যু হাজার ছাড়াল, বাংলাদেশি ২৭ জন

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪, ০৯:১২ পিএম
আপডেট: ২০ জুন ২০২৪, ০৯:১২ পিএম
হজযাত্রীর মৃত্যু হাজার ছাড়াল, বাংলাদেশি ২৭ জন
ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহে এক হাজারের বেশি হজযাত্রী মারা গেছেন। এদের মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছেন ২৭ জন।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বার্তা সংস্থা এএফপির হিসাবে হজযাত্রীদের প্রাণহানির এই সংখ্যা জানানো হয়েছে।

এদিকে গত বুধবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজবিষয়ক প্রতিদিনের বুলেটিনের তথ্য অনুসারে জানা যায়, বাংলাদেশি মৃত ২৭ হজযাত্রীর মধ্যে ২২ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী। তাদের ২০ জন মক্কায়, চারজন মদিনায়, দুজন মিনায় ও একজন জেদ্দায় মারা যান। সর্বশেষ বুধবার ফরিদা ইয়াসমিন (৫৩) নামে একজন মারা যান। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে।

সৌদির সরকারি প্রশাসন, মক্কার বিভিন্ন হাসপাতাল ও বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের তথ্যের ভিত্তিতে মৃত হজযাত্রীদের ওই হিসাব করেছে এএফপি। এতে বলা হয়েছে, হজ পালনের সময় নিহতদের তালিকায় বৃহস্পতিবার নতুন করে মিসরের আরও ৫৮ হজযাত্রীর নাম যুক্ত হয়েছে। আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের একজন কূটনীতিক এএফপিকে বলেছেন, ‘হজ পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারানো সহস্রাধিক হজযাত্রীর মধ্যে কেবল মিসরেরই নাগরিক আছেন ৬৫৮ জন। তাদের মধ্যে অনিবন্ধিত ছিলেন ৬৩০ জন। প্রায় ১০ দেশের  ১০৮১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

সৌদি আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গত মঙ্গলবার মক্কা ও মক্কার পবিত্র স্থানগুলোতে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করতে গিয়ে কিছু হাজি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। অনেক মিসরীয় এপিকে জানান, তারা গরম ও ভিড়ের মধ্যে তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। 

সৌদি হজ কর্তৃপক্ষের মতে, ২২ দেশের ১৬ লাখের বেশি ও প্রায় ২ লাখ ২২ হাজার সৌদি নাগরিক এবং বাসিন্দা সহ ২০২৪ সালে ১৮ লাখ ৩০ হাজারে বেশি মুসলমান হজ পালন করেন। সূত্র: এএফপি, এপি

 

স্ত্রীকে হাসি-খুশি রাখা সুন্নত

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪, ০৯:৫১ এএম
স্ত্রীকে হাসি-খুশি রাখা সুন্নত
নামাজ শেষে মোনাজাতরত স্বামী-স্ত্রীর ছবি

আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একবার তিনি এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তখন তার বয়স ছিল অল্প। তিনি তাঁর সঙ্গীদের বললেন, ‘তোমরা সামনে এগিয়ে যাও।’ এরপর (আমাকে) বললেন, ‘এসো, তোমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব।’ এরপর আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তাঁর আগে চলে গেলাম। পরবর্তী সময় আবার তাঁর সঙ্গে সফরে গেলাম। তখন তিনি সঙ্গীদের বললেন, ‘তোমরা সামনে এগোতে থাকো।’ এরপর বললেন, ‘এসো, তোমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব।’ আমি আগের প্রতিযোগিতার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আর তখন আমার শরীর কিছুটা স্থূলকায় হয়ে গিয়েছিল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, এই অবস্থায় কী করে আমি আপনার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব?’ তিনি বললেন, ‘তুমি পারবে।’ এরপর আমি তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলাম। দৌড়ে তিনি আমার আগে চলে গেলেন। এরপর বললেন, ‘এই জয় আগের পরাজয়ের বদলা।” (নাসায়ি, হাদিস: ৮৯৪৫)। 


রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে আনন্দ বিনোদন করতেন। তাদের মন ভালো হয়ে যায়, এমন আচরণ করতেন। এখানে হাদিসের একটি ঘটনা বলা যেতে পারে। আয়েশা (রা.) বলেন, “একবার আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য গোশত, ঝোল ও রুটি মেশানো খাবার তৈরি করে তাঁর কাছে এলাম। এসে সাওদাকে বললাম, তুমি খাও। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন আমার ও তার মাঝখানে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু সাওদা খেতে চাইল না। আমি বললাম, অবশ্যই তুমি খাবে, না হয় আমি তোমার চেহারা লেপ্টে দেব। তারপরও সে খেতে চাইল না। এরপর আমি খাবারের পাত্রে হাত ঢুকিয়ে (হাতে ঝোল মাখিয়ে) সাওদার চেহারায় লেপ্টে দিলাম। তা দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসলেন। এরপর তাঁর উরু সাওদার জন্য বিছিয়ে দিলেন এবং সাওদাকে বললেন, ‘এবার তুমি ওর চেহারায় লেপ্টে দাও। তা শুনে সেও আমার চেহারায় লেপ্টে দিল। আবারও রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসলেন। এমন সময় উমর (রা.) আবদুল্লাহ... আবদুল্লাহ...’ ডাকতে ডাকতে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। উমর হয়তো এখানে প্রবেশ করবেন ভেবে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের দুজনকে বললেন, ‘তোমরা যাও। তোমাদের চেহারা ধুয়ে নাও।’ আয়েশা (রা.) বলেন, ‘উমর (রা.)-এর ডাক শুনে সেদিন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভয় পাওয়ার পর থেকে আমিও উমরকে ভয় পাই।’ (নাসায়ি, ৮৯১৭)


আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনেই আমি পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সঙ্গে খেলাধুলা করত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলা করত।’ (বুখারি, ৮৭৭৯)। 
রাসুলুল্লাহ (সা.) পারিবারিক পরিবেশকে সব সময় আনন্দমুখর রাখতে চেষ্টা করতেন। তিনি পরিবার তথা স্ত্রীদের গুরুত্ব দিতেন। তিনি ছিলেন স্ত্রীদের কাছে উত্তম স্বামী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ, ১৯৭৭)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক