![ফরেনসিক টেস্টের ফলাফলের ওপর নজর গোয়েন্দাদের](uploads/2024/05/31/MP_Anar-1717136596.jpg)
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ আক্তারুজ্জামান শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ও নেপালে পালিয়ে থাকা আরেক অভিযুক্ত সিয়ামকে হাতে আনার জন্য যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে কলকাতা ও ঢাকার পুলিশ। ঢাকা পুলিশের অনুরোধে দুটি দেশে যোগাযোগ করেছে ভারতের প্রশাসন। আত্মগোপনে থাকা দুই সন্দেহভাজনকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফেরত পাঠানোর আরজি জানানো হয়েছে বলে জানায় কলকাতা সিআইডি সূত্র। ভারতের সঙ্গে দুটি দেশেরই বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকায় দ্রুত অভিযুক্তদের হাতে পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সিআইডির গোয়েন্দারা। এর পাশাপাশি নেপালেও তদন্তের তোড়জোড় করছে সিআইডি।
এদিকে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিবা আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা মাংসের টুকরোগুলোর ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট দ্রুত পাঠাতে ভারতীয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছেন ঢাকা থেকে আসা গোয়েন্দারা। কলকাতা ও ঢাকার গোয়েন্দাদের ধারণা, এসব মাংসের টুকরো এমপি আনারের।
এদিকে ডিএনএ পরীক্ষা দ্রুত করার জন্য এমপি আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের কলকাতায় আসার কথা। তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কলকাতায় আসার অনুরোধ করেছিলেন স্বয়ং ডিবিপ্রধান। কলকাতায় তিনি বলেছিলেন, খুব তাড়াতাড়ি কলকাতায় আসবেন এমপিকন্যা। কিন্তু এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কলকাতায় বাংলাদেশ মিশন সূত্রে জানা যায়নি তিনি কবে কলকাতায় আসছেন। তবে বাংলাদেশ উপদূতাবাসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবারই ভিসা হাতে পেয়েছেন তিনি।
সিবিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, কলকাতায় গ্রেপ্তার করা জিহাদ হাওলাদারকে সঙ্গে নিয়ে ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি ব্রিজের কাছে বাগজোলা খালে দিনের পর দিন তন্ন তন্ন করে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এমনকি ডিবি কর্মকর্তারাও এসে দেখলেন। এই এলাকায় এখনো পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায়নি। হয় জিহাদ স্পষ্ট ও নির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারছেন না, আর না হয় শুধু শুধু সময় নষ্ট করছেন। আরও কয়েক দিন দেরি হলে নিউ টাউনের আবাসনের সেপটিক ট্যাংকে উদ্ধার হওয়া প্রায় চার কিলো ওজনের মাংসখণ্ড নাও মিলতে পারত। ফলে এই মুহূর্তে নেপালে পালিয়ে যাওয়া সিয়ামকে হাতে পাওয়া খুব জরুরি। তাকে নিয়ে নতুন করে তল্লাশি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই নেপালে তদন্তে জোর দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবারই ঢাকায় ফিরে গেছে ঢাকার গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্তকারী দলটি। বিমানে ওঠার আগে ঢাকার গোয়েন্দাপ্রধান পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির তদন্ত প্রক্রিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, কলকাতায় তদন্ত করে অনেক দূর এগোনো সম্ভব হয়েছে। ঢাকায় ধৃতদের জেরা করে যে তথ্য মিলেছিল, তা কলকাতায় সিআইডি অফিসার এবং কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা যাচাই করে দেখেছেন। তারা দুই দেশের আসামিদের দেওয়া তথ্যে মিল পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘চার কিলোর মতো মাংসখণ্ড উদ্ধার হয়েছে। আমাদের আশা, খুব শিগগির বাকি অংশও খুঁজে পাওয়া যাবে। সিআইডি প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেহাবশেষ তল্লাশি চালিয়ে যাছে।’
এদিকে গতকাল কলকাতা থেকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় হারুন বলেন, ‘আমরা কলকাতার পুলিশকে অনুরোধ করেছিলাম স্যুয়ারেজ লাইন ও সেপটিক ট্যাংক ভেঙে দেখার জন্য। আমরা মনে করি সেখান থেকে যে মাংসখণ্ড উদ্ধার করা হয়েছে তা হয়তো এমপি আনারেরই হবে। তবে ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
এমপি আনার হত্যার অন্যতম আসামি সিয়াম নেপালে আত্মগোপন করেছেন জানিয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। তাকে ধরতে ভারত সরকারের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
ডিবিপ্রধান বলেন, আনোয়ারুল আজীম আনারকে গত ১৩ মে কলকাতার মাটিতে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশের পাশাপাশি কলকাতায়ও একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মূল ঘাতক হলেন আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া।
তিবি বলেন, ‘হত্যার পরিকল্পনা হয়েছে বাংলাদেশে আর কার্যকর হয়েছে কলকাতায়। মামলার তদন্তের জন্য আমরা কলকাতায় গিয়েছি। গ্রেপ্তার আসামিদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে এবং ঘটনাস্থলের ডিজিটাল এভিডেন্সগুলো দেখতে সেখানে গিয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘মামলায় ভুক্তভোগীর মরদেহ বা মরদেহের অংশবিশেষ না পাওয়া গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তার সুরতহাল, ভিসেরা ও মেডিকেল রিপোর্ট দিতে বেগ পেতে হয়। এগুলো না পাওয়া গেলে মামলাটি নিষ্পত্তি করাও অনেক কঠিন হয়ে যায়। আমরা সেখানে গিয়ে আমাদের হাতে গ্রেপ্তার আসামিদের তথ্য ক্রসচেক করেছি। এ ছাড়া কলকাতায় গ্রেপ্তার আসামির তথ্য যাচাই-বাছাই করেছি। কলকাতা সিআইডিকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মেলানোর চেষ্টা করেছি।’
এদিকে শিগগিরই ফরেনসিক প্রতিবেদন পাওয়া যাবে বলে সিআইডি সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। এই প্রতিবেদন হাতে পেলে গোয়েন্দারা তদন্তের দ্বিতীয় ধাপ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মাংসের নমুনা পাঠাবেন। আর এর জন্য যেকোনো সময় কলকাতা পৌঁছাচ্ছেন এমপিকন্যা।
গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, উদ্ধার হওয়া ওই মাংস, চুল ও হাড় খুন হওয়া এমপি আনারের। তবে সেটি চূড়ান্তভাবে বলা যাবে ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষার পর।
এর আগে গত রবিবার আনার হত্যা মামলার তদন্ত করতে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশপ্রধানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল কলকাতায় যায়। মামলাটির তদন্তকারী সিআইডি, নিউ টাউন থানার পুলিশ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে গত চার দিন কাজ করেছেন ঢাকার গোয়েন্দারা।
গত ১২ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান ঝিনাইদহ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। ১৩ মে তিনি নিখোঁজ হন। এরপর ১৮ মে বরানগর থানায় তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস একটি নিখোঁজের ডায়েরি করেন। ২২ মে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার ডিবি পুলিশ সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন যে এমপি আনার খুন হয়েছেন।