![গ্যালারি যেন বিরানভূমি](uploads/2024/02/01/1706762500.Sylhet-fan.jpg)
সিলেটে ফিরছে বিপিএল। এমন আবহে পুরো শহরজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। বিপিএলের সিলেট পর্ব শুরুর দিন গ্যালারিজুড়ে উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু দর্শকদের সেদিন হতাশ হতে হয় স্বাগতিক দল সিলেট স্ট্রাইকার্সের পরাজয়ে। গত মঙ্গলবার সিলেট জিতবে এমন আশায় মাঠে এসেছিলেন অনেক দর্শক। এবারও হতাশায় পোড়ে তারা। কারণ সিলেট স্ট্রাইকার্স পায়নি তাদের কাঙ্ক্ষিত জয়। টানা পঞ্চম হারে সিলেটের এমন ব্যর্থতায় দর্শকের আগ্রহ কমেছে। গ্যালারি পরিণত হয় বিরানভূমিতে।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের ব্যাটার জাকির হাসান বিশ্বাস করেন, সিলেট পারফর্ম করলে বাড়বে দর্শকের পুরোনো ওই স্রোত। তার কথায়, ‘গতবার পারফর্ম করেছি দেখেই দর্শকরা এসেছে। এখানে প্রথম ম্যাচে এসেছিল। এবার ডে ম্যাচ বলে হয়ত কম এসেছে। আমরা পারফর্ম করলে আবার দর্শকরা আসবে।’
চা বাগান ঘেরা সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আসতে মূল সড়ক থেকে পেরুতে হয় অনেকটা পথ। সিলেটে ম্যাচ হলে ওই রাস্তায় দর্শকদের উপস্থিতিতে হেঁটে পাড়ি দেওয়া হয়ে ওঠে কঠিনতম কাজ। বিপিএলের সিলেট পর্বের প্রথম দিনেও কষ্ট হয়েছিল সবারই। তবে পরের দিন থেকে বদলে গেছে চিত্র। দর্শকের ভিড় না থাকায় হেঁটে আসা যায় অনেকটা নির্বিঘ্নে। এমন চিত্র স্পষ্ট করে দেয়, সিলেটের স্থানীয় দর্শকরা বিপিএল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার একমাত্র কারণ- সিলেট স্ট্রাইকার্সের ব্যর্থতা।
স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসা দর্শকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিপিএলে সিলেট ভালো না করায় মাঠে বসে খেলা দেখার আগ্রহ কম। তারা আরও জানান, সিলেট ভালো খেললে দর্শকে সরগরম হয়ে উঠবে লাক্কাতুরার গ্যালারি। তবে কী শুধু সিলেটের টানা হার দর্শক চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে? এটাকে একমাত্র কারণ হিসেবে দাঁড় করানোটাও ভুল হবে।
মাঠে উপস্থিত দর্শকদের বেশির ভাগের অভিযোগ, টিকিট কাউন্টার নয়, তারা কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট কিনেছেন। বিপিএলের টিকিট কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় শুধুমাত্র ৮০০ ও ২৫০০ টাকা দামের ছাড়া আর কোনো টিকিট নেই। অথচ বাইরে কালোবাজারে ২০০ ও ৪০০ টাকা দামের টিকিট বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। দর্শকের অভিযোগ, কালোবাজারিদের কাছ থেকে বাড়তি দামে টিকিট ক্রয় করায় বেশির ভাগই মাঠে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। যারা কাউন্টার থেকে টিকিট কিনতে পেরেছেন তাদের অভিযোগ দাম নিয়ে। তাদের মতে, বিপিএলের এবারের আসরে টিকিটের দাম অনেক বেশি। এমন কী আন্তর্জাতিক ম্যাচের চেয়ে বিপিএলের টিকিটের দাম বেশি। এটাকেও দর্শকদের অনুপস্থিতির অন্যতম কারণ বলে জানান মাঠে আসা সমর্থকরা।
মাঠে দর্শক উপস্থিতি কম থাকলেও সিলেটের বিখ্যাত গ্রিন গ্যালারিতে অবশ্য বেশি দর্শক পাওয়া যায়। রাতের ম্যাচে ক্ষেত্র বিশেষে থাকে না তিল ধারণের ঠাঁই। গ্রিন গ্যালারিতে উপস্থিত কয়েকজন দর্শকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখানে বসে খেলা উপভোগ করতেই এসেছেন। বিদেশের মতো খোলা মাঠে বসে খেলা উপভোগ করার ইচ্ছা থেকে এখানে এসেছেন। তারা জানান, টিকিটের দাম কমানো ও কালোবাজারি ঠেকানো সম্ভব হলে দর্শক চাহিদা ফের ফিরে আসবে সিলেটে। এমন কী তিল ধারণের জায়গা থাকবে না বলে বিশ্বাস তাদের।
গ্যালারিতে দর্শক উপস্থিতি কমের বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যায় টিকিট কাউন্টারে। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সামনের বুথ কিংবা রিকাবিবাজার জেলা স্টেডিয়ামে টিকিট বিক্রির বুথের সামনে নেই কোনো লাইন। নির্বিঘ্নে টিকিট কিনতে পারছেন দর্শকরা। তবে ২০০ কিংবা ৪০০ নয়, সেখানে বেশির ভাগ সময় বিক্রি হয় ৮০০ ও ২৫০০ টাকা দামের টিকিট। দর্শক খরার এই সময়েও ২০০ ও ৪০০ টাকার টিকিট কালোবাজারিদের কাছ থেকে কিনে মাঠে ঢুকতে হয় দর্শকদের। সিলেটের কাঙ্ক্ষিত জয় ও কালোবাজারি বন্ধ হলে তবেই সিলেটের গ্যালারি দর্শকে কানায় কানায় পূর্ণ হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।