![ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইঁদুর পালনে সফল নাসির](uploads/2024/03/28/1711614403.bbaria.jpg)
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে হাঁস, মুরগির খামার দেওয়া স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কেউ বাণিজ্যিকভাবে ইঁদুরের খামার দিয়েছেন তা কল্পনাও করা যায় না। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসির উদ্দিন তাই করে দেখালেন। মাত্র ১০টি দিয়ে শুরু। এখন তার খামারে প্রায় ২০০ ছোট-বড় সাদা ইঁদুর।
নাসির উদ্দিনের বাড়ি আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী আব্দুল্লাহপুর গ্রামে। ইউটিউব দেখে দেখে তিনি ইঁদুরের খামার গড়ে তোলেন। তার এই ব্যতিক্রম উদ্যোগের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অনেকেই সাদা ইঁদুর দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করছেন। কেউ আবার ইঁদুর কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ইঁদুর পালন করে ইতোমধ্যে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। তার কাছ থেকে সাদা জাতের ইঁদুর কিনতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসহ গবেষণাকেন্দ্র থেকে লোকজন আসছেন।
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে একসময় ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। ২০১৬ সালে বাড়িতে চলে আসি। সংসারের হাল ধরতে কৃষি কাজের পাশাপাশি হাঁস, মুরগি ও কবুতর পালন শুরু করি। তবে লাভ বেশি না হওয়ায় বিকল্প উপায় খুঁজতে থাকি। এমন সময় ইউটিউব দেখে ইঁদুর পালনে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। প্রায় পাঁচ মাস আগে ঢাকার কাঁটাবন থেকে সুইজারল্যান্ডের অ্যালবিনো প্রজাতির ১০টি সাদা ইঁদুর কিনে নিয়ে আসি। এতে আমার খরচ হয় ৫ হাজার টাকা। কিছুদিনের মধ্যেই একটি ইঁদুর আটটি বাচ্চা দেয়। কয়েকদিনের মধ্যে আরও তিনটি ইঁদুর বাচ্চা দেয়। পর্যায়ক্রমে সব ইঁদুর বাচ্চা দিতে থাকে। বর্তমানে আমার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দুই শতাধিক ইঁদুর রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইঁদুরগুলোকে খাবার হিসেবে গম, ভুট্টা ও ধান দেওয়া হয়। দৈনিক দুবেলা খাবার দিতে হয়। এতে আমার প্রতিদিন গড়ে খরচ হয় ৬০ টাকা। ফার্মাসিউটিক্যাল ও গবেষণার কাজে এই ইঁদুরের চাহিদা অনেক। গবেষণায় ইঁদুরের কঙ্কালও কাজে লাগে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে লোকজন বাড়িতে এসে ইঁদুর কিনে নিয়ে যান। চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতাদের ইঁদুর দিতে পারছি না। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে নিজ বাড়িতে ইঁদুরের বড় খামার গড়ে তুলব।’
অ্যালবিনো জাতের সাদা ইঁদুর ৪০ দিন পরপর ছয় থেকে সাতটি করে বছরে ছয় থেকে সাতবার বাচ্চা দেয়। বর্তমানে তিনি একেকটি ইঁদুর ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা যুবায়ের হোসেন বলেন, ‘এর আগে এমন সাদা ইঁদুর দেখিনি। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে এসে ইঁদুর কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। শুনেছি এসব ইঁদুর নাকি গবেষণার কাজে লাগে।’
তহিদ ভূঁইয়া নামে অপর ব্যক্তি বলেন, ‘নাসির উদ্দিন সব সময় নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন। ইঁদুর পালন করে সফল হয়েছেন। ইঁদুরগুলো দেখতে ভালোই লাগে। তার দেখাদেখি এখন গ্রামের অনেকেই ইঁদুর পালনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’
আব্দুল্লাহপুর গ্রামের আমীন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের গ্রামের নাসির উদ্দিন কয়েক মাস ধরে সাদা ইঁদুর পালন করছেন। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন সরকার ঘোষণা দিয়েছিল ইঁদুরের লেজ জমা দিলে পুরস্কার দেওয়া হবে। আর এখন মানুষ ইঁদুর পালন করছে। ইঁদুর বিক্রি করে তিনি লাভবানও হচ্ছেন। ইঁদুর লালন পালনে খরচ ও পুঁজি খুবই কম লাগে। গ্রামের যুবকরা এ জাতের ইঁদুর পালন করলে তাদের বেকারত্ব গোছাতে পারবেন।’
উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমাদের গ্রামের নাসির উদ্দিন কয়েকটি সাদা ইঁদুর এনে পালন শুরু করেন। বর্তমানে তার খামারে অনেক ইঁদুর। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তার কাছে লোকজন ইঁদুর কিনতে আসছেন।’
আখাউড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জুয়েল মজুমদার বলেন, ‘এ জাতের ইঁদুর লালন একটা লাভজনক ব্যবসা। খরচ কম কিন্তু আয় অনেক বেশি। ফার্মাসিউটিক্যালস, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এসব ইঁদুরের অনেক চাহিদা রয়েছে। আখাউড়ায় ইঁদুর চাষ হচ্ছে বলে শুনেছি। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। আমার সব ধরনের সহযোগিতা করব।’