![ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জৈব সারের বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়ছে](uploads/2024/05/13/bbaria-1715582832.jpg)
রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে ফসল উৎপাদনে কৃষকদের খরচ কমানোর লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জাতের জৈব সারের উৎপাদন বাড়ছে। যার মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে কৃষি উদ্যোক্তা। কর্মসংস্থান হচ্ছে বেকার যুবকদের। বর্তমানে জেলায় প্রতি মাসে ৩৫০ থেকে ৪০০ টন জৈব সার উৎপাদিত হচ্ছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা। কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত জৈব সার বিক্রির জন্য সারের দোকানগুলোয় জৈব সার কর্নারও করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ।
জেলায় সবচেয়ে বেশি জৈব সার উৎপাদিত হচ্ছে নবীনগরে। এ উপজেলার কয়েকজন কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তা প্রতি মাসে অন্তত ৬০ টন ভার্মি কম্পোস্ট, ট্রাইকো কম্পোস্টসহ বিভিন্ন জৈব সার উৎপাদন করছেন। প্রতি কেজি সার বেচাকেনা হয় ১০ থেকে ১২ টাকা দরে, যা রাসায়নিক সারের অর্ধেক। আর জমিতে জৈব সার ব্যবহারের ফলে ফসলের উৎপাদনও ভালো হয় বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
নবীনগর উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মজির আহমেদ পারভেজ তার বাড়ির পাশে গড়ে তুলেছেন জৈব সারের কারখানা। গ্রাম থেকেই জৈব সার তৈরির প্রধান উপকরণ গরুর গোবর ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা সংগ্রহ করেন। তার কারখানায় কাজ পেয়েছেন স্থানীয় ১০ জন বেকার যুবক। প্রতি মাসে প্রায় ৩০ টন ভার্মি কম্পোস্ট ও ট্রাইকো কম্পোস্ট জাতের জৈব সার বাজারজাত করেন তিনি।
মজির আহম্মেদ পারভেজ বলেন, ‘নিজে কিছু একটা করার আশায় জৈব সারের কারখানা করেছিলাম। প্রথমে নিজের জমিতে ব্যবহারের জন্য সার উৎপাদন করতাম। পরে অনেক কৃষক আমার কাছ থেকে জৈব সার কেনার আগ্রহ দেখান। ফলে পরবর্তী সময়ে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করি। এখন জৈব সার বিক্রি করে প্রতি মাসে সব খরচ মিটিয়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হয়। এ ছাড়া গ্রামের লোকজন আমার কারখানায় তাদের গরুর গোবর ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা বিক্রি করেন। এতে করে তাদেরও বাড়তি আয়ের পথ তৈরি হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সবকটি উপজেলাতেই জৈব সার উৎপাদন হচ্ছে। সারের কারখানাগুলো করা হয়েছে রাস্তার পাশে খোলা জায়গা ও বাড়ির আঙিনাতে। মূলত গরুর গোবর ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠার সঙ্গে আরও কয়েকটি উপকরণের মিশ্রণ পচিয়ে তৈরি হয় ভার্মি কম্পোস্ট, ট্রাইকো কম্পোস্টসহ বিভিন্ন জৈব সার। উৎপাদন প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগে ৩৫ দিন। জৈব সার ব্যবহারের ফলে মাটির গুণাগুণ ঠিক থাকে। যা ফসল উৎপাদনে সহায়ক হয়। ফসলের উৎপাদন ভালো হওয়ায় দিন দিন জৈব সারের চাহিদা বাড়ছে। আর জৈব সারের ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। ফলে বাণিজ্যিক উৎপাদনও বাড়ছে। বর্তমানে শতাধিক কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তা বাণিজ্যিকভাবে জৈব সার উৎপাদন করছেন। আর এ ব্যবসায় কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক শ বেকার যুবকের।
মূলত শাকসবজির খেতে কৃষকরা জৈব সারের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি করেন। এ ছাড়া ধানের জমিতে ব্যবহারেও ভালো ফলন পাচ্ছেন তারা। আর জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে কৃষকদের খরচ যেমন কমছে, তেমনি রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা কমে আসছে।
নবীনগরের ইব্রাহিমপুর গ্রামের আরেক কৃষক কাউসার মিয়া জানান, তিনি বাড়ির আঙিনায় ছোট আকারে জৈব সারের কারখানা করেছেন। নিজের শাকসবজি ও ধানি জমিতে ব্যবহারের পাশাপাশি বাজারেও বিক্রি করেন জৈব সার। এই সার ব্যবহারের ফলে তার জমিতে এখন রাসায়নিক সার কম লাগে। এতে করে ফসল উৎপাদনে খরচ আগের চেয়ে প্রায় অর্ধেক কমেছে বলে জানান তিনি।
কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, প্রতি বছরই জৈব সার উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এখন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই বেশি সার উৎপাদিত হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলায় জৈব সারের কারখানাগুলোয় ২ হাজার ১৬০ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৫০ টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ৭৫০ টন জৈব সার উৎপাদিত হয়। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ হাজার ৬০০ টন সার উৎপাদন ও বাজারজাতের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, ‘জৈব সারের বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়ানোর মূল কারণ হলো রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো। যার মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে কৃষকের খরচ কমবে। এ ছাড়া জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে পারলে রাসায়নিক সার উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি গ্যাসেরও চাপ কমবে। সব মিলিয়ে জৈব সার সবদিক থেকেই লাভজনক।’