![কসবা সীমান্ত হাট বন্ধ, হতাশ ব্যবসায়ীরা](uploads/2024/05/15/kosba-1715756353.jpg)
করোনার সময় সংক্রমণ রোধে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত হাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনো চালু হয়নি হাটটি। ঠিক কখন চালু হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কিছু বলতে পারছেন না হাটসংশ্লিষ্টরা। চালু না হওয়ায় বিপাকে আছেন হাটের ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে যে বকেয়া পাওনা আছে তাও আদায় করতে পারছেন না তারা। দেশের অন্য সীমান্ত হাটগুলো চালু হলেও কসবা সীমান্ত হাট না খোলায় হতাশ ব্যবসায়ীরা।
সীমান্তের বাইরের এলাকার ক্রেতাদের ভিড়ের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা হাটের সুফল পুরোপুরি ভোগ করতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই হাটটি চালু করা নিয়ে তাড়াহুড়া করছে না হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী ৫ কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দার জন্য দুই দেশের যৌথ উদ্যোগ এবং অর্থায়নে সীমান্ত হাট চালু হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার তারাপুর সীমান্ত এবং ভারতের সিপাহীজলা জেলার কমলাসাগর সীমান্তে ২০১৫ সালের জুনে যাত্রা শুরু হয় সীমান্ত হাটের। বাংলাদেশ অংশে এটি কসবা সীমান্ত হাট নামে পরিচিত।
হাটে বাংলাদেশ ও ভারতের ৫০টি করে মোট ১০০টি দোকান রয়েছে। প্রতি রবিবার ছিল হাটবার। আর হাটে বাংলাদেশি পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হতো কাপড়, প্লাস্টিক ও লৌহজাত পণ্য। ভারতীয় পণ্যের মধ্যে প্রসাধনী, শাড়ি, থ্রি-পিস ও শিশুদের ডায়াপারের চাহিদা ছিল বেশি।
মূলত সীমান্তের বাসিন্দাদের জন্য হলেও হাট এলাকার বাইরের ক্রেতারাই বেশি আসতেন। তাদের অনেকেই ব্যবসার উদ্দেশ্যে ব্যাগভর্তি করে ভারতীয় পণ্য কিনে নিয়ে যেতেন।
তবে করোনা মহামারি দেখা দিলে, ২০২০ সালের ১০ মার্চ থেকে সীমান্ত হাটের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালে জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দুই দেশের হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি। হাট বন্ধের আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ২৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকার বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হয়েছিল। আর ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ৩৭ লাখ ৭২ হাজার টাকার এবং ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশি পণ্য কেনাবেচা হয়েছে ২০ লাখ ৭৭ হাজার টাকার। তবে এ সময়ে ভারতীয় পণ্য দ্বিগুণেরও বেশি কেনাবেচা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাটসংশ্লিষ্টরা।
এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় দোকানঘরের অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি সেগুলো সংস্কার করে হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি। তবে এখনো হাট চালু না হওয়ায় অসন্তোষ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কসবা সীমান্ত হাটের ব্যবসায়ী শ্যামল কর্মকার জানান, তিনি হাটে লৌহজাত, তামা এবং কাসার তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র বিক্রি করতেন। হাট বন্ধ হওয়ার আগে অনেক টাকার মালামাল অবিক্রীত রয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে সেগুলো কম মূল্যে বিক্রি করতে গিয়ে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে দীর্ঘ ৪ বছরেও হাট না খোলায় চরম অর্থকষ্টে আছেন বলে জানান তিনি।
হাটের আরেক ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন জানান, প্রতি হাটবারে তিনি অন্তত ৫০ হাজার টাকার বিভিন্ন ফল বিক্রি করতেন। ভারতীয় ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশি ফলের চাহিদা বেশি ছিল। ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও তার কাছ থেকে ফল কিনে নিয়ে যেতেন। হাট বন্ধের কারণে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ফল বিক্রি বাবদ পাওনা প্রায় ৪ লাখ টাকা আদায় করতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
হাটের আরেকজন ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, হাটটি খোলার বিষয়ে বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও খুলে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ দেশের অন্য সীমান্ত হাটগুলো চালু করে দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই। দীর্ঘদিন ধরে হাট বন্ধ থাকায় অনেক ব্যবসায়ী অর্থকষ্টে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ রিকশা বা ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন বলেও জানান তিনি।
কসবা সীমান্ত হাট ব্যবসায়ী কমিটির (বাংলাদেশ অংশ) সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ওয়ালিউল্লাহ সরকার বলেন, ‘হাটটি সীমন্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের জন্য হলেও সবসময় ভারতীয় দোকানগুলোতে বাইরের ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। ফলে প্রায় ৫ বছর হাট চললেও এর সুফল পুরোপুরি ভোগ করতে পারেননি সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। হাটে দুই দেশের বাণিজ্যে সমতা না থাকার প্রধান কারণ হলো, সীমান্ত এলাকার বাইরের বাসিন্দাদের হাটে অবাধে প্রবেশ এবং ব্যাগভর্তি করে ভারতীয় পণ্য কেনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, বাণিজ্যে সমতা না থাকার কারণেই হাটটি ফের খোলার বিষয়ে খুব একটা উদ্যোগী নন সংশ্লিষ্টরা। এ ক্ষেত্রে সীমান্তের বাইরের এলাকার যেসব ক্রেতা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভারতীয় পণ্য কিনে নিয়ে যান তাদের যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে বাণিজ্যে সমতা ফিরে আসবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সীমান্ত হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির (বাংলাদেশ অংশ) সভাপতি জেসমিন সুলতানা বলেন, ‘দীর্ঘদিন হাট বন্ধ থাকায় অবকাঠামোগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেগুলোর সংস্কার কাজ এখনো চলছে। এটি শেষ হওয়ার পর হাটটি খোলার ব্যাপারে হয়তো বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা আসবে। তবে কবে নাগাদ হাট খুলে দেওয়া হবে সেটি স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্তের বাইরের এলাকার ক্রেতাদের হাটে অবাধ প্রবেশের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাণিজ্যে সমতা আনতে দুই দেশের যৌথ আলোচনার মাধ্যমে হাটের সমস্যাগুলো নিরসন করা হবে।’