![সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিস্তৃতি বাড়ান](uploads/2024/06/26/Editorial-1719379065.gif)
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ জনকল্যাণকর কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ইতিবাচক সারা মিলছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সামর্থ্যবান সবাইকে পেনশনের আওতায় আনা বর্তমান সরকারের নির্বাচনি অঙ্গীকার। তারই অংশ হিসেবে বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন। সর্বজনীন পেনশনের আওতায় গ্রাহকসংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, কার্যক্রম শুরুর ১০ মাসের মধ্যে নিবন্ধন সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, উদ্বোধনের পর থেকেই জনকল্যাণকর এ কর্মসূচিতে মানুষের উল্লেখযোগ্য আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। মাঠ প্রশাসনকে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করার ফলে সম্প্রতি সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ৩ লাখ নিবন্ধনের এ মাইলফলক অর্জিত হয়েছে এবং সাবস্ক্রিপশন বাবদ মোট ৮৬ কোটি ৬৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা জমা হয়েছে।
এরই মধ্যে নিবন্ধনকারীদের অর্থ থেকে সরকারি ট্রেজারি বন্ডে ৬২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। নিবন্ধন ও মাসিক জমা পরিষদ সেবা জনগণের জন্য অধিকতর সহজলভ্য হবে। এ প্রক্রিয়ায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমে জনগণের অংশগ্রহণের হার আরও দ্রুততর হবে, যা প্রধানমন্ত্রীর এ বিশেষ জনকল্যাণ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে সহায়ক হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
প্রস্তাবিত বাজেটে যারা নতুন সরকারি চাকরিতে আসবেন, তাদের সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়।
বলা হয়, যারা ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে যোগদান করবেন, তাদের সবাইকে এই স্কিমের আওতায় আনা হবে। এর আগে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে যারা চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে যোগদান করবেন, তাদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। যদিও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই উদ্যোগের বিরোধিতা করছে।
বর্তমানে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা নামের চারটি স্কিমের নিবন্ধনের সুবিধা চালু রয়েছে। এ চারটি স্কিমের মধ্যে সমতা স্কিমে ২ লাখ ২৪ হাজার ১৬৪ জন, প্রগতি স্কিমে ২১ হাজার ২৯৪, সুরক্ষা স্কিমে ৫৬ হাজার ৯১৯ এবং প্রবাসী স্কিমে ৭৯৯ জন নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এতে চার স্কিমে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ৩ লাখ ৩ হাজার ১৭৬ জন।
সূত্রমতে, এরই মধ্যে ৮৭টি এনজিও প্রগতি স্কিমে নিবন্ধন হয়ে তাদের কর্মচারীদের অনুকূলে সাবস্ক্রিপশন প্রদান করছে। পঞ্চম স্কিম হিসেবে প্রত্যয় নামে নতুন স্কিম চালু করা হচ্ছে, যা সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, যারা ১ জুলাই ২০২৪ থেকে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানে নতুন যোগদান করবেন তাদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে কার্যকর হবে।
বর্তমানে দুটি সরকারি ও দুটি বেসরকারি ব্যাংক এবং একটি মোবাইল ফাইন্যান্সিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনসহ মাসিক জমা আদায়ে সম্পৃক্ত আছে। আরও চারটি বেসরকারি ব্যাংক ও একটি মোবাইল ফাইন্যান্সিং প্রতিষ্ঠান খুব শিগগির কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হবে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছতে হলে জাতীয় পেনশন প্রচার কর্তৃপক্ষকে প্রচারণাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সব শ্রেণির মানুষ যাতে এর সুফল ভোগ করতে পারে, সে জন্য এই স্কিমের বিস্তৃতি বাড়াতে হবে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনসহ মাসিক জমা আদায়ের ব্যাংকিং সেবার আওতা আরও বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। নিবন্ধন ও মাসিক জমা পরিশোধ সেবা জনগণের জন্য সহজলভ্য করতে হবে। বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে সর্বজনীন পেনশন মেলা ও কর্মশালার আয়োজন করে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।