ঢাকা ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিস্তৃতি বাড়ান

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ১১:১৭ এএম
আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪, ১১:১৭ এএম
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিস্তৃতি বাড়ান

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ জনকল্যাণকর কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ইতিবাচক সারা মিলছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সামর্থ্যবান সবাইকে পেনশনের আওতায় আনা বর্তমান সরকারের নির্বাচনি অঙ্গীকার। তারই অংশ হিসেবে বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন। সর্বজনীন পেনশনের আওতায় গ্রাহকসংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। 

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, কার্যক্রম শুরুর ১০ মাসের মধ্যে নিবন্ধন সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, উদ্বোধনের পর থেকেই জনকল্যাণকর এ কর্মসূচিতে মানুষের উল্লেখযোগ্য আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। মাঠ প্রশাসনকে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করার ফলে সম্প্রতি সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ৩ লাখ নিবন্ধনের এ মাইলফলক অর্জিত হয়েছে এবং সাবস্ক্রিপশন বাবদ মোট ৮৬ কোটি ৬৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা জমা হয়েছে। 

এরই মধ্যে নিবন্ধনকারীদের অর্থ থেকে সরকারি ট্রেজারি বন্ডে ৬২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। নিবন্ধন ও মাসিক জমা পরিষদ সেবা জনগণের জন্য অধিকতর সহজলভ্য হবে। এ প্রক্রিয়ায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমে জনগণের অংশগ্রহণের হার আরও দ্রুততর হবে, যা প্রধানমন্ত্রীর এ বিশেষ জনকল্যাণ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে সহায়ক হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। 
প্রস্তাবিত বাজেটে যারা নতুন সরকারি চাকরিতে আসবেন, তাদের সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়। 

বলা হয়, যারা ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে যোগদান করবেন, তাদের সবাইকে এই স্কিমের আওতায় আনা হবে। এর আগে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে যারা চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে যোগদান করবেন, তাদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। যদিও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই উদ্যোগের বিরোধিতা করছে।

বর্তমানে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা নামের চারটি স্কিমের নিবন্ধনের সুবিধা চালু রয়েছে। এ চারটি স্কিমের মধ্যে সমতা স্কিমে ২ লাখ ২৪ হাজার ১৬৪ জন, প্রগতি স্কিমে ২১ হাজার ২৯৪, সুরক্ষা স্কিমে ৫৬ হাজার ৯১৯ এবং প্রবাসী স্কিমে ৭৯৯ জন নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এতে চার স্কিমে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ৩ লাখ ৩ হাজার ১৭৬ জন। 

সূত্রমতে, এরই মধ্যে ৮৭টি এনজিও প্রগতি স্কিমে নিবন্ধন হয়ে তাদের কর্মচারীদের অনুকূলে সাবস্ক্রিপশন প্রদান করছে। পঞ্চম স্কিম হিসেবে প্রত্যয় নামে নতুন স্কিম চালু করা হচ্ছে, যা সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, যারা ১ জুলাই ২০২৪ থেকে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানে নতুন যোগদান করবেন তাদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে কার্যকর হবে।

বর্তমানে দুটি সরকারি ও দুটি বেসরকারি ব্যাংক এবং একটি মোবাইল ফাইন্যান্সিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনসহ মাসিক জমা আদায়ে সম্পৃক্ত আছে। আরও চারটি বেসরকারি ব্যাংক ও একটি মোবাইল ফাইন্যান্সিং প্রতিষ্ঠান খুব শিগগির কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হবে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছতে হলে জাতীয় পেনশন প্রচার কর্তৃপক্ষকে প্রচারণাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সব শ্রেণির মানুষ যাতে এর সুফল ভোগ করতে পারে, সে জন্য এই স্কিমের বিস্তৃতি বাড়াতে হবে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনসহ মাসিক জমা আদায়ের ব্যাংকিং সেবার আওতা আরও বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। নিবন্ধন ও মাসিক জমা পরিশোধ সেবা জনগণের জন্য সহজলভ্য করতে হবে। বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে সর্বজনীন পেনশন মেলা ও কর্মশালার আয়োজন করে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।

মাদক কারবারে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:০৪ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:০৪ এএম
মাদক কারবারে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অলিগলিতে চলে মাদকের রমরমা কারবার। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় নেশাদ্রব্য। তথ্য বলছে, প্রকাশ্যে বাদামের ডালায় গাঁজা সাজিয়ে সকাল-সন্ধ্যা বিক্রির রমরমা কারবার চলে রাজধানীসহ দেশের অলিতে-গলিতে। অনেক সময় কারারক্ষীদের মাদক কারবারে জড়িত থাকার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। অসাধু একাধিক কর্মকর্তার গাফিলতি, দায়িত্বে অবহেলা এবং ধরা পড়ার পর লঘুদণ্ডের কারণে কারারক্ষীরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। 

জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পরও বিভাগীয় যে ব্যবস্থা নেওয়া হয় তা যৎসামান্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে বসে মাদকের হাট। এসব অপরাধ দমনে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে। এতে তেমন কোনো ফল আসছে না। কারণ মাদক কারবারিরা জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজ করে। দেশে পুরুষের পাশাপাশি নারী মাদকসেবীর হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। তেমনি বাড়ছে মাদক কারবারে জড়িত নারীর সংখ্যা। তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে মাদকসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখের বেশি। প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়ছে। শিশু-কিশোর ও তরুণরা বেশি মাদকে আসক্ত হচ্ছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় অভিযানে ধরা পড়ছে মাদক কারবারিরা। সূত্রমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের ২৪ তারিখ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতিদিনই গ্রেপ্তার, মামলা ও শাস্তি হওয়ার পরও থেমে নেই মাদকের কারবার। রাজধানী ঢাকার সর্বত্র এখন মাদক বিক্রির স্পট। 

রাজধানীর ছয়টি এলাকা মাদকের রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। রেড জোনে রয়েছে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, মহাখালীর কড়াইল বস্তি, কালশী বিহারি ক্যাম্প, কারওয়ান বাজার, খিলগাঁও ও যাত্রাবাড়ী। এ ছাড়া ইয়োলো ও গ্রিন জোনের তালিকায় রয়েছে পুরো রাজধানী। 

দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা হয়ে ঢাকায় আসছে মাদক। সড়ক, নদী, সাগর ও আকাশপথে প্রতিনিয়ত রাজধানীতে ঢুকছে মাদক। গবেষকরা বলছেন, একসময় হেরোইন ও ফেনসিডিলের চাহিদা বেশি থাকলেও এখন মাদকের বাজার দখলে নিয়েছে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ। বাংলাদেশে এখন এই দুই মাদকের চাহিদা তুঙ্গে। টিনএজরা সবচেয়ে বেশি মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে বলেও গবেষণায় জানা যায়।

পথশিশুদের একটি বড় অংশ মাদকের চোরাচালান, বাজারজাত ও সামগ্রিক বিপণন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ২০২২ সালে প্রকাশিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ইউনিসেফের একটি গবেষণায় বলা হয়, দেশে ড্যান্ডিতে আসক্ত ১৫ দশমিক ২ শতাংশ শিশু। এর মধ্যে খোদ রাজধানীতে ড্যান্ডিতে আসক্ত পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার। যদিও ২০২৪ সালে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। 

এ ছাড়া দেশে ৫৮ শতাংশ পথশিশু ড্যান্ডিসহ অন্যান্য মাদকে আসক্ত। ১৪ শতাংশ শিশু ১০ বছর বয়সের আগেই মাদক সেবন করে। তুলনামূলক সহজলভ্য ও সস্তা হওয়ায় পথশিশুদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ গাঁজা সেবন করে। 
চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ঢাকা মহানগরে মোট মামলা হয়েছে ৬৮৬টি। নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২২০টি। অর্থাৎ এই সময়ে মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তি এক-তৃতীয়াংশের কম। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন্স ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ খবরের কাগজকে বলেন, সারা বিশ্বে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে মাদক। আমেরিকা, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে মাদকাসক্ত হয়ে প্রতিদিন অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। মাদক কারবারের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত অভিযান, গ্রেপ্তার ও মামলা দেওয়ার মাধ্যমে মাদক কারবারিদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

মাদক কারবারে যারা জড়িত, তারা অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। দেশ ও সমাজকে মাদকমুক্ত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনকে সামাজিকভাবে মাদক প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মাদক কারবারে যারা গডফাদার তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে সমাজ থেকে এ ধরনের অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব।

ব্যবসায়ীদের নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ১০:৫১ এএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১০:৫১ এএম
ব্যবসায়ীদের নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে

সরকার রাজস্ব আয় বাড়াতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন শিল্প স্থাপনে ব্যবহৃত মূলধনি যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করেছে। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সংসদে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। 

এ বাজেটে সরকার রাজস্ব আয় বাড়াতে নানা ক্ষেত্রে করারোপে পরিবর্তন এনেছে। দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে নতুন শিল্প স্থাপনে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও যানবাহন আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। নতুন বাজেটে সে সুবিধা বাতিল করে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব কার্যকর হলে নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতে পারে মর্মে আশঙ্কা প্রকাশ করেন দেশের ব্যবসায়ী নেতারা। বাজেটে শুল্ক আরোপের এ প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন তারা। 

অর্থনীতিবিদরা বলেন, যেকোনো শিল্প স্থাপনের মূলধনি যন্ত্রপাতিকে প্রারম্ভিক ব্যয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উদ্যোক্তারা যাতে কম খরচে শিল্প স্থাপন করতে পারেন, সে জন্য মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শূন্য শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। পৃথিবীর সব দেশে এই নীতি অনুসরণ করা হয়। বাংলাদেশেও এতদিন মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ব্যবসায়ীরা শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন। কিন্তু এবারের বাজেটে বিদ্যমান সুবিধা বাতিল করে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। 

ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, অর্থনীতিতে এমনিতেই মন্দা চলছে। এ অবস্থায় মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হলে যারা বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন, তারা পিছু হটতে পারেন। এতে শিল্পায়ন ব্যাহত হবে। কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। 

কেননা বিনিয়োগ না হলে নতুন কর্মসংস্থান হবে না। এনবিআর সূত্র বলছে, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এটি রোধ করতে ন্যূনতম শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। 

এলডিসি থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশকে শামিল করতে সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দেশে মোট ১০০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল বা ইকোনমিক জোন স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্র জানিয়েছে, সরকার এযাবৎ মোট ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে ১১টি অঞ্চল ইতোমধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। ২৯টির জমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামোর নির্মাণকাজ বাস্তবায়নাধীন। 

এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরকার ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ এখন পর্যন্ত ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। ৪১টি কোম্পানি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে এবং বিভিন্ন জোনে ৫০টি শিল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব শিল্প হতে এ পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য উৎপাদন হয়েছে এবং ২৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। 

এই শিল্পসমূহে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এ পর্যন্ত ১২টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রাইভেট ইকোনমিক জোন লাইসেন্স পেয়েছে এবং এই অঞ্চলসমূহে প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশসমূহের মধ্যে রয়েছে জাপান, চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, নরওয়ে। 

ব্যবসায়ীদের নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। শিল্প স্থাপনের মূলধনি যন্ত্রপাতিকে প্রারম্ভিক ব্যয় হিসেবে ধরে আমদানিতে শূন্য শুল্ক নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তা হলে উদ্যোক্তারা স্বল্প খরচে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। অন্যান্য দেশের এ-সংক্রান্ত নীতিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে। দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সহজে যাতে আকৃষ্ট হতে পারেন এবং বিনিয়োগ করতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। 

নদীদূষণ রোধ প্রকল্পের কাজে গতি আনুন

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ১১:২৭ এএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ১১:২৭ এএম
নদীদূষণ রোধ প্রকল্পের কাজে গতি আনুন

বুড়িগঙ্গাসহ চার নদীর দূষণ রোধ ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার পর নদীর চারপাশে বসবাসরত জনগণের জীবনযাত্রার মান ও পরিবেশগত উন্নয়নের দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ৩০ জুন। ইতোমধ্যে দুবার সংশোধন করে ব্যয় বাড়ানো হয়।

কিন্তু তাতেও কাজ শেষ হয়নি। এখন তৃতীয়বার সংশোধন করে ৮৪৮ কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে ৩৪ শতাংশ। সময় বাড়ানো হচ্ছে আরও এক বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। 

বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর দূষণরোধে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। তৃতীয়বার সংশোধনের জন্য প্রকল্পটি আগামী একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পরিকল্পনা কমিশন ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, বুড়িগঙ্গাসহ চার নদীর তীর অবৈধ দখল রোধ করা, নদীর পানি দূষণ কমানো, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সরকার ২০১৮ সালের ২২ মে এই প্রকল্প প্রথমবারের মতো অনুমোদন দেয়। 

তখন খরচ ধরা হয়েছিল ৮৪৮ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কাজ ঠিকমতো না হওয়ায় ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রথম সংশোধন করা হয়। তখন সময় বাড়ানো হয় এক বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। আর খরচ বাড়িয়ে ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকায় আনা হয়। এরপর আবারও সংশোধন করে সময় বাড়ানো হয় এক বছর। অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুনে শেষ করতে বলা হয়। 

কাজ দ্রুত শেষ করতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দও রাখা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। আবার সময় বাড়ানো হয়েছে এক বছর। অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুনে শেষ করার জন্য সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সঙ্গে খরচও বাড়িয়ে ১ হাজার ২৭৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, অর্থাৎ মূল খরচ থেকে ৪২৮ কোটি টাকা বা ৩৪ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। 

এ পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়েছে ২৫ কিলোমিটার। যা ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও তুরাগকে করেছে দৃষ্টিনন্দন ও পর্যটনবান্ধব। ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অবৈধ দখলমুক্ত করা ও নদী রক্ষায় শক্তিশালী অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রায় ১১ হাজার অবৈধ স্থাপনা। উদ্ধার করা হয়েছে নদীর দখল করা প্রায় ৩৫০ একর জায়গা। 

ঢাকা, টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর এলাকায় শেষ হয়েছে তিনটি পরিবেশবান্ধব ইকোপার্ক নির্মাণের কাজ, যা নদীতীরে আসা মানুষকে সবুজ পরিবেশ পেতে সহায়তা করছে। সব মিলিয়ে রাজধানীর চারপাশের নদীতীর রক্ষায় অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ শতাংশ। 

নদীমাতৃক বাংলাদেশে অবৈধভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে নদীগুলো। বিশেষ করে রাজধানীর আশপাশের নদ-নদী ও খাল-বিলগুলো দখল হচ্ছে, সেই সঙ্গে মনুষ্যসৃষ্ট কারণেও পানির দূষণ বাড়ছে। নদীর তীরবর্তী সৌন্দর্য ও প্রায় হারাতে বসেছে। 

এসব নদীকে বাঁচাতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। নদীর দূষণরোধ ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, সেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের গতিশীলতা আনতে হবে। সময় ও প্রকল্প ব্যয় দুটিই কমিয়ে আনতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে আরও উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে হবে।

চীন-ভারত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাস্তবসম্মত

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ১০:১০ এএম
আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ১০:১০ এএম
চীন-ভারত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাস্তবসম্মত

ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরের অর্জনের কথা তুলে ধরেন। এ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় ভারসাম্য রেখেছেন।

দুই দেশই বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেদের রক্ত ঢেলে দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও ১ কোটি বাঙালিকে আশ্রয় দিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পাশে থেকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। 

দল-মতনির্বিশেষে ভারতের প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও নেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুসম্পর্ক রয়েছে। ভারতকে দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে বলেছেন, চীন থেকে শেখার আছে। তিনি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে দেশের উন্নয়নে কাজ করার কথা বলেছেন। 

ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নে কার সঙ্গে কতটুকু বন্ধুত্ব দরকার, সেটা করে যাচ্ছে সরকার। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে পরিচালনা করছেন তারই পিতার দেখানো পথ অনুসরণ করে। দেশের উন্নয়নে তিনি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলেছেন। তার সুচিন্তিত ও গতিশীল নেতৃত্বের কারণে দেশ আজ অনেক অগ্রসরমাণ। 

এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার প্রচেষ্টায় রয়েছে এ দেশ। কূটনীতিতেও ইতিবাচক কৌশল অবলম্বন করে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ জুলাই তিন দিনের সফরে চীনের রাজধানী বেইজিং যাবেন। মাত্র কয়েক দিন আগে তিনি ভারত সফর করে এসেছেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চায় নয়াদিল্লি। এ অবস্থায় সফরকালে নয়াদিল্লি-বেইজিংয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে ঢাকার কর্মকর্তাদের মধ্যে। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ও ভারত উভয় দেশই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দুই ধরনের। বাংলাদেশের তিন দিক ঘিরে রয়েছে ভারত। অন্যদিকে সহযোগিতা ও ভূ-রাজনীতির মতো বিষয়গুলো নিয়ে একধরনের সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে ঢাকা। 

এ ছাড়া বাংলাদেশকে ঘিরে ভারত-চীনের মধ্যে রয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। ভারত চায় ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশ তার সঙ্গে থাকুক। চীনের প্রত্যাশাও বাংলাদেশ তার সঙ্গে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে সফরটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ খবরের কাগজকে বলেন, চীন-ভারত উভয় দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। বাংলাদেশ ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখেই চলছে। উভয় পক্ষের সংবেদনশীলতা ও স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকাকে এগোতে হবে। 

তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে যাদের প্রস্তাব বেশি লাভবান হবে, সেটাই বাংলাদেশ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে চীন-ভারত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাস্তবসম্মত বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।  প্রত্যাশা করছি, বাংলাদেশ সরকার দূরদর্শী চিন্তা দিয়ে এ দেশের মানুষের জন্য যেটি কল্যাণকর সেটিই করবে। প্রধানমন্ত্রী তার কূটনৈতিক কৌশল দিয়ে ইতোমধ্যে অনেক সমস্যার সমাধান করেছেন। ভবিষ্যতেও করবেন, এটাই প্রত্যাশা।

পোশাকশিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
পোশাকশিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে

বাংলাদেশের পোশাকশিল্প অনেক দূর এগিয়েছে। দেশের এই শিল্পটি তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকারি-বেসরকারি এবং সব অংশীজন এ লক্ষ্য অর্জনে দিনরাত পরিশ্রম করছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জ্যান জানোস্কি  বলেন, টেকসই উৎপাদনে বিনিয়োগ করা শুধু একটি দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নয় বরং এটি একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত, যা টেকসই উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থানকে জার্মানি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বৈশ্বিক বাজারে আরও শক্তিশালী করতে পারে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে আরও মনোনিবেশ করতে হবে। সম্প্রতি রাজধানীর রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে দ্বিতীয় বাংলাদেশ সার্কুলার ইকোনমি সামিট এ সম্পর্কে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে বক্তারা পোশাকশিল্প ও বস্ত্র খাত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন। বাংলাদেশ বর্তমানে পোশাক খাতে সুতার জন্য ব্যাপকভাবে আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ২০১৯ সালে দেশটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার টন সুতা আমদানি করে; যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে যদি দেশের সুতাবর্জ্য শতভাগ রিসাইকেল করা সম্ভব হয় তাহলে সুতা আমদানি প্রায় ১৫ শতাংশ কমে আসবে। এতে করে সুতা আমদানিতে ব্যয় হওয়া ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বাঁচাতে পারে। 

দেশের তৈরি পোশাকের ব্যবহৃত সুতার বিকল্প উৎস হয়ে উঠতে পারে রিসাইক্লিং শিল্প। তুলাবর্জ্য রিসাইকেলের মাধ্যমে সুতা আমদানি ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। এতে ৫০ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ শিল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশের সুতা আমদানি কমবে, তেমনি পরিবেশের ক্ষতি রোধ করাও সম্ভব হবে বলে মনে করেন তারা। 

তথ্য মতে, বাংলাদেশে ২০০টিরও বেশি সনদপ্রাপ্ত সবুজ পোশাক কারখানা রয়েছে এবং আরও ৫০০টি কারখানা সনদ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশ সার্কুলারিটি ও টেকসইয়ের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে। পোশাক উদ্যোক্তারা টেকসই অনুশীলনগুলো গ্রহণ করছেন। তারা অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছেন।

বাংলাদেশের পোশাকশিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত। এ খাতের স্বচ্ছতা আনয়নের লক্ষ্যে আরও কাজ করতে হবে। দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে সার্কুলার ইকোনমির সম্ভাবনাকে আরও কাজে লাগাতে হবে। যা টেকসই  উৎপাদনের ক্ষেত্রে আরও সহায়ক হবে। বাংলাদেশের সে ধরনের কর্মপরিবেশ রয়েছে। ব্যবসায়ী উদ্যোক্তরাও সেটাই ভাবছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশ টেকসই ও সার্কুলারিটিতে শীর্ষস্থান অর্জনকারী হয়ে উঠবে। 

সুতা আমদানি কমিয়ে আনতে হবে। দেশীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে পোশাক ও বস্ত্র খাতের উন্নয়ন আশাব্যঞ্জক হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও এ শিল্প গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য তৈরি পোশাক খাতের দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত সরকারকে। দেশের পোশাকশিল্পে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ দেশের অনেক কারখানা সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে কাজ করছে। ভবিষ্যতে মান যেন আরও টেকসই হয় সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।