বায়ুদূষণের মাত্রা বছর বছর বাড়ছে। আবার এক দেশের বায়ুদূষণের প্রভাব পড়ছে অন্য দেশের ওপর। বায়ুদূষণ রোধে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি সব পক্ষের সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি। আন্তসীমান্তের কারণে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে আগাম বন্যা এবং পানির সঙ্গে আসা ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশের জন্য আগামীতে হুমকি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবেশদূষণে স্থানীয় ইস্যুর পাশাপাশি বর্তমানে আঞ্চলিক ইস্যুও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাই দ্রুত এ বিষয়ে ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর এবং টেকসই সমাধানে যাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
বায়ুর মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম। তিনি রাজধানী ঢাকার ৪০টি স্থানের বায়ুর মান মনিটরিং করেন সার্বক্ষণিক। ২০২২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০টি স্থানের তথ্য গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণের জন্য দায়ী লোকাল বা স্থানীয় কারণ ৭৫ ভাগ আর আঞ্চলিক কারণ ২৫ ভাগ।
সিলেট অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত আর ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে গত ২৯ মে থেকে। এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও এখনো স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি। অনেক এলাকা এখনো পানিবন্দি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পানি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে আবারও বন্যার সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশকে আগাম বন্যার ভিকটিম হিসেবে দাবি করে থাকেন। উজানের পানির সঙ্গে দূষিত পদার্থ এসে পরিবেশের বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। ২০১৭ সালে আসা পানিতে রাসায়নিক পদার্থের কারণে হাওর এলাকায় অনেক মাছ মারা গিয়েছিল। উঁচু স্তর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে যখন পানি আসে, তখন সঙ্গে দূষিত পদার্থও চলে আসে। আবার শুষ্ক মৌসুমে নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোসহ নানা কারণে বাংলাদেশের অনেক নদী নাব্য হারাচ্ছে। তাই পরিবেশ বিপর্যয়ের আন্তসীমান্ত কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব মোকাবিলায় ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দক্ষিণ এশীয় পর্যায়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সমন্বয় প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের আলবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব ন্যানোটেকনোলজি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সাসটেইনেবল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আইনুল বারী খবরের কাগজকে বলেন, আন্তসীমান্ত কারণগুলো নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। দূষণের উৎস, শহরভিত্তিক ও বিভাগভিত্তিক উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করতে হবে। শীতকালে গ্রীষ্মকালের চেয়ে বাতাসে পিএম ২.৫ (ক্ষুদ্র কণা) দ্বিগুণ হয়। এখানে আন্তসীমান্ত ইস্যু অনেক প্রভাব ফেলে।
রাজধানীসহ সারা দেশে কংক্রিটের ব্যবহার বেড়েছে, যা পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যত্রতত্র বৃক্ষ নিধন চলছে। শীতাতপ যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। এতে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগ বা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমেও বৃক্ষরোপণ বাড়ানো যেতে পারে। প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে এনে পাট ও পাটজাতপণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। বায়ুদূষণ রোধে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বায়ুদূষণ রোধে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় দেশীয় কারণগুলোর পাশাপাশি আন্তসীমান্ত কারণগুলো বের করে সে অনুযায়ী সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পরিবেশ বিপর্যয় রোধে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনায় এনে সে অনুযায়ী সরকারকে সমাধানেও পদক্ষেপ নিতে হবে।