![বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করুন](uploads/2024/06/12/Editorial-1718170557.gif)
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর তার শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা উভয়েই আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী দিনে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক ও বোঝাপড়া আরও দৃঢ় হবে।
বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও গভীর হবে। দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া ভালো থাকলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে সকল পর্যায়ে। শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের মধ্য দিয়ে তারই বার্তা পাওয়া গেল। ভারতের সরকারপ্রধান ছাড়াও বিরোধীদলীয় নেতাদের সঙ্গেও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে। তিনি সেই সম্পর্কও ঝালাই করে নিয়েছেন। নয়াদিল্লির আইটিসি মৌর্য শেরাটন হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন কংগ্রেসের পার্লামেন্টারি পার্টির চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী, বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তারাও দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক- এক কথায় বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে। এই দুই দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যের বন্ধন দৃঢ়। স্বাধীনতাযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে থেকে ঘনিষ্ঠ মিত্ররূপে কাজ করেছে দেশটি। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার বাংলাদেশ-ভারত। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনায় অভাবনীয় অগ্রগতি লক্ষ করা গেছে।
বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের গভীরতা যেমন বিস্তৃত, তেমনি বহুমাত্রিক। করোনা-পরবর্তীকালে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বেড়েছে। দুই দেশের বিভিন্ন দ্রব্য আমদানি-রপ্তানিও হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদির টানা ১০ বছরের রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতা এবং শেখ হাসিনার ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্র পরিচালনার দূরদর্শিতা দুই দেশের বহুমুখী সম্পর্কের ভিত মজবুত করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ দুটি ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ইতোমধ্যে দুই দেশের উন্নয়নের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো।
এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর দুই দেশের সরকারেরই নতুন মেয়াদে প্রবেশ উপলক্ষে একটা সৌজন্য সফর। আমার মনে হয়, বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে মোদি এবং বিজেপির অবস্থান যেমন ছিল, সেটা তারা ধরে রাখতে পারবেন বলেই প্রতীয়মান হয়।
বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের সম্পর্কের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধান করতে হবে। সীমান্তে হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ-ভারত দুই বন্ধুপ্রতিম দেশ। এখানে এমন কোনো বিরোধপূর্ণ ইস্যু নেই যাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। অথচ প্রায়শই দেখা যায় সীমান্তে রক্তপাতের ঘটনা ঘটছে। এটা বন্ধের ব্যাপারে দুই দেশকেই আন্তরিক হতে হবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করতে হবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সীমান্ত হাট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সীমান্ত হাট ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। তবে এগুলো আরও সক্রিয় করতে হবে। দুই দেশের মানুষের যাতায়াত বাড়ানোর জন্য ভিসাব্যবস্থা আরও সহজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বড় দেশ হিসেবে ভারতকেই উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে। বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার হোক, সেটিই প্রত্যাশা।