![দেশীয় চিনিশিল্পকে রক্ষা করুন](uploads/2024/06/07/Editorial-1717736146.gif)
চোরাই পথে আসা ভারতীয় চিনি দেশের বেশির ভাগ বাজার দখল করে আছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর ফলে দেশীয় চিনিশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ২৭টি চোরাই পথ দিয়ে প্রকাশ্যে আসছে এসব চিনি। এতে চরম সংকটে পড়েছে দেশের বেসরকারি খাতে চিনি উৎপাদন পরিশোধন ও বাজার কোম্পানিগুলো। ভারত থেকে চিনি আসার কারণে মিলগুলোতে পরিশুদ্ধ চিনির উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।
অনেক মিলমালিক শ্রমিকদের ঠিকমতো বেতনও দিতে পারছেন না। চোরাচালান যেভাবে একসময় সরকারি চিনিকলগুলোকে রুগ্ণ করেছিল, একইভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ধ্বংস করবে। চোরাচালান বন্ধে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানের পাশাপাশি সীমান্তে কঠোর নজরদারির দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
সূত্রমতে, দেশের চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ চিনি অবৈধভাবে দেশের বাজারে ঢুকছে। এতে করে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এ কারণে দেশীয় চিনি বিক্রি দিনে ৬ হাজার টন থেকে কমে ১ হাজার টনে নেমে এসেছে। ফলে দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর দিনে ৭০ কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। আর সরকার দিনে অন্তত ২০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৬ মে পর্যন্ত ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৫৪২ টন চিনি আমদানি হয়েছে। এসব চিনি আমদানিতে ৬ হাজার ৩৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮৯ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার।
ব্যবসায়ীরা জানান, চোরাই পথে আসা ভারতীয় চিনির কারণে সরকার প্রতি কেজি চিনিতে রাজস্ব হারাচ্ছে ৩৮ টাকা। অথচ চোরাই পথে আসা চিনি অত্যন্ত নিম্নমানের এবং ভেজাল। সেটা দেশীয় চিনির চেয়ে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কম থাকলেও খুচরায় তেমন প্রভাব নেই। অর্থাৎ ভোক্তারা কোনো সুফল পাচ্ছেন না। অত্যধিক লাভের কারণে পেঁয়াজ, রসুন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অনেকেই অবৈধ চিনির ব্যবসায় জড়িয়েছেন। এদিকে বিক্রি কমে যাওয়া দেশীয় কারখানায় পরিশোধিত চিনির মজুত বেড়ে যাচ্ছে। এতে বাজারে দরপতন হচ্ছে। তা ছাড়া নতুন এলসিও কমে গেছে। নিয়মিত এলসি কমতে থাকলে দেশীয় বাজারে চিনির সংকট তৈরি হতে পারে।
অভিযোগ রয়েছে, অনেক ব্যবসায়ী ভারতীয় চিনি বিক্রি করছেন। চোরাই পথে আসা প্রতি ট্রাকে ২০ টন চিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বস্তা পরিবর্তন করে বিভিন্ন কোম্পানির বস্তা ছাপিয়ে ভারতীয় চিনি বাজারজাত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সেগুলো মজুত করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে। দেশি চিনির তুলনায় দাম প্রতি মণে ১ হাজার টাকার মতো কম। তাই খুচরা দোকানদার, শহরের বাইরের মুদি দোকান কিংবা খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতীয় চিনি কিনছে।
দেশীয় চিনিশিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকে। চোরাই চিনি কারবারি চক্রের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বাড়াতে হবে।