![নদীদূষণ রোধ প্রকল্পের কাজে গতি আনুন](uploads/2024/06/28/Editorial-1719552464.gif)
বুড়িগঙ্গাসহ চার নদীর দূষণ রোধ ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার পর নদীর চারপাশে বসবাসরত জনগণের জীবনযাত্রার মান ও পরিবেশগত উন্নয়নের দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ৩০ জুন। ইতোমধ্যে দুবার সংশোধন করে ব্যয় বাড়ানো হয়।
কিন্তু তাতেও কাজ শেষ হয়নি। এখন তৃতীয়বার সংশোধন করে ৮৪৮ কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে ৩৪ শতাংশ। সময় বাড়ানো হচ্ছে আরও এক বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর দূষণরোধে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। তৃতীয়বার সংশোধনের জন্য প্রকল্পটি আগামী একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পরিকল্পনা কমিশন ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, বুড়িগঙ্গাসহ চার নদীর তীর অবৈধ দখল রোধ করা, নদীর পানি দূষণ কমানো, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সরকার ২০১৮ সালের ২২ মে এই প্রকল্প প্রথমবারের মতো অনুমোদন দেয়।
তখন খরচ ধরা হয়েছিল ৮৪৮ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কাজ ঠিকমতো না হওয়ায় ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রথম সংশোধন করা হয়। তখন সময় বাড়ানো হয় এক বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। আর খরচ বাড়িয়ে ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকায় আনা হয়। এরপর আবারও সংশোধন করে সময় বাড়ানো হয় এক বছর। অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুনে শেষ করতে বলা হয়।
কাজ দ্রুত শেষ করতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দও রাখা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। আবার সময় বাড়ানো হয়েছে এক বছর। অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুনে শেষ করার জন্য সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সঙ্গে খরচও বাড়িয়ে ১ হাজার ২৭৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, অর্থাৎ মূল খরচ থেকে ৪২৮ কোটি টাকা বা ৩৪ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে।
এ পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়েছে ২৫ কিলোমিটার। যা ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও তুরাগকে করেছে দৃষ্টিনন্দন ও পর্যটনবান্ধব। ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অবৈধ দখলমুক্ত করা ও নদী রক্ষায় শক্তিশালী অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রায় ১১ হাজার অবৈধ স্থাপনা। উদ্ধার করা হয়েছে নদীর দখল করা প্রায় ৩৫০ একর জায়গা।
ঢাকা, টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর এলাকায় শেষ হয়েছে তিনটি পরিবেশবান্ধব ইকোপার্ক নির্মাণের কাজ, যা নদীতীরে আসা মানুষকে সবুজ পরিবেশ পেতে সহায়তা করছে। সব মিলিয়ে রাজধানীর চারপাশের নদীতীর রক্ষায় অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ শতাংশ।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে অবৈধভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে নদীগুলো। বিশেষ করে রাজধানীর আশপাশের নদ-নদী ও খাল-বিলগুলো দখল হচ্ছে, সেই সঙ্গে মনুষ্যসৃষ্ট কারণেও পানির দূষণ বাড়ছে। নদীর তীরবর্তী সৌন্দর্য ও প্রায় হারাতে বসেছে।
এসব নদীকে বাঁচাতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। নদীর দূষণরোধ ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, সেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের গতিশীলতা আনতে হবে। সময় ও প্রকল্প ব্যয় দুটিই কমিয়ে আনতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে আরও উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে হবে।