![ব্যবসায়ীদের নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে](uploads/2024/06/29/Editorial-1719636664.gif)
সরকার রাজস্ব আয় বাড়াতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন শিল্প স্থাপনে ব্যবহৃত মূলধনি যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করেছে। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সংসদে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন।
এ বাজেটে সরকার রাজস্ব আয় বাড়াতে নানা ক্ষেত্রে করারোপে পরিবর্তন এনেছে। দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে নতুন শিল্প স্থাপনে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও যানবাহন আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। নতুন বাজেটে সে সুবিধা বাতিল করে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব কার্যকর হলে নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতে পারে মর্মে আশঙ্কা প্রকাশ করেন দেশের ব্যবসায়ী নেতারা। বাজেটে শুল্ক আরোপের এ প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, যেকোনো শিল্প স্থাপনের মূলধনি যন্ত্রপাতিকে প্রারম্ভিক ব্যয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উদ্যোক্তারা যাতে কম খরচে শিল্প স্থাপন করতে পারেন, সে জন্য মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শূন্য শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। পৃথিবীর সব দেশে এই নীতি অনুসরণ করা হয়। বাংলাদেশেও এতদিন মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ব্যবসায়ীরা শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন। কিন্তু এবারের বাজেটে বিদ্যমান সুবিধা বাতিল করে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, অর্থনীতিতে এমনিতেই মন্দা চলছে। এ অবস্থায় মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হলে যারা বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন, তারা পিছু হটতে পারেন। এতে শিল্পায়ন ব্যাহত হবে। কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কেননা বিনিয়োগ না হলে নতুন কর্মসংস্থান হবে না। এনবিআর সূত্র বলছে, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এটি রোধ করতে ন্যূনতম শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এলডিসি থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশকে শামিল করতে সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দেশে মোট ১০০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল বা ইকোনমিক জোন স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্র জানিয়েছে, সরকার এযাবৎ মোট ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে ১১টি অঞ্চল ইতোমধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। ২৯টির জমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামোর নির্মাণকাজ বাস্তবায়নাধীন।
এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরকার ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ এখন পর্যন্ত ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। ৪১টি কোম্পানি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে এবং বিভিন্ন জোনে ৫০টি শিল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব শিল্প হতে এ পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য উৎপাদন হয়েছে এবং ২৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
এই শিল্পসমূহে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এ পর্যন্ত ১২টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রাইভেট ইকোনমিক জোন লাইসেন্স পেয়েছে এবং এই অঞ্চলসমূহে প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশসমূহের মধ্যে রয়েছে জাপান, চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, নরওয়ে।
ব্যবসায়ীদের নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। শিল্প স্থাপনের মূলধনি যন্ত্রপাতিকে প্রারম্ভিক ব্যয় হিসেবে ধরে আমদানিতে শূন্য শুল্ক নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তা হলে উদ্যোক্তারা স্বল্প খরচে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। অন্যান্য দেশের এ-সংক্রান্ত নীতিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে। দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সহজে যাতে আকৃষ্ট হতে পারেন এবং বিনিয়োগ করতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।