জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চিয়া সিড চাষ। কিন্তু বাজারজাতকরণে রয়েছে চাষিদের দুশ্চিন্তা। রাজশাহী অঞ্চলে চিয়া সিডের চাষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এ অঞ্চলে প্রথম পরীক্ষামূলক শুরু হলেও ক্রমেই বাড়ছে এ শস্যের চাষ। তবে এ শস্য উৎপাদন করার পর বাজারজাতকরণকে প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন চাষিরা। উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হলে চিয়া সিড চাষে কৃষকরা আরও আগ্রহী হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চিয়া সিড মধ্য আমেরিকার একটি উদ্ভিদ। পুদিনার একটি প্রজাতি। বিভিন্ন পোষক পদার্থের উপস্থিতির জন্য একে সুপার ফুড বলা হয়। এটি বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো জন্মে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চিয়া সিড বপন করতে হয়। মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের মধ্যে ফলন ঘরে তোলা হয়। ভালো ফলন পেতে বেশি ব্যবহার করতে হয় জৈবসার। প্রতি বিঘা জমিতে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচে চিয়া সিড উৎপাদন হয় ৭০ থেকে ৮০ কেজি। প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয় ৮৫০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২১-২২ মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মাত্র পাঁচ শতক জমিতে চিয়া সিডের চাষ হয়। এরপর ২০২২-২৩ মৌসুমে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় ৭ হেক্টর জমিতে ৩ দশমিক ২৯ টন চিয়া সিড উৎপাদন হয়। ২০২৩-২৪ মৌসুমে ১৩ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে ৮ টন চিয়া সিড উৎপাদন হয়।
এর মধ্যে বাঘা উপজেলায় ৭ দশমিক ৩ হেক্টর জমিতে, তানোর উপজেলায় ৩ হেক্টর জমিতে, চারঘাট উপজেলায় ২ হেক্টর জমিতে, বাগমারা উপজেলায় ১ হেক্টর জমিতে এবং জেলার অন্য এলাকায় দশমিক ২ হেক্টর জমিতে এই শস্যের আবাদ করা হয়। রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাষ হওয়া পুষ্টি ও ঔষধিগুণসম্পন্ন এই ফসল কয়েক বছরের মধ্যে বিদেশে রপ্তানি সম্ভব বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ এবং এই ফসল রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
চিয়া সিডচাষিদের মতে, প্রথম বছর পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে কম খরচে ভালো ফলন পেয়েছেন। দাম ও চাহিদা অনেক বেশি ছিল। তাই এবার টানা তৃতীয়বারের মতো তারা চাষ করেছেন। তারা বলছেন, এই ফসল চাষ খুবই সহজ, কীটনাশক লাগে না।
এ ছাড়া ১ বিঘা জমিতে প্রয়োজন হয় মাত্র ৩০০ গ্রাম বীজের। অথচ ফলন হয় কমপক্ষে ৭০ কেজি। কৃষকরা আরও বলেছেন, ১ বিঘা জমিতে চিয়া সিড চাষে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ করে মাত্র ৯০ দিনে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব, যা অন্য কোনো ফসল উৎপাদনে সম্ভব হয় না। রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা শুরুতেই ভালো ফলন ও কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় চিয়া সিড চাষে ঝুঁকছেন। বর্তমানে রাজশাহীজুড়ে এ ফসলের চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
কৃষিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিয়া সিড বিক্রি কৃষকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ চিয়া সিড একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির ব্যক্তিরা খেয়ে থাকেন। তারা সুপারশপ বা বড় বড় দোকান থেকে ব্র্যান্ড দেখে এগুলো কেনেন। সে ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে আমদানি করা আকর্ষণীয় বোতলজাত বীজ বেশি বিক্রি হয়। কিন্তু সাধারণ কৃষকের পক্ষে বোতলজাত বা প্যাকেটজাত করে এগুলো বিক্রি করা সম্ভব নয়। তাই সাধারণ কৃষকদের পক্ষে চিয়া সিড বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করা জটিল হয়ে পড়ে।
দেশে উৎপাদিত চিয়া সিড শস্যের চাহিদা বৃদ্ধিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকার এ শস্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে কৃষকদের আরও উৎসাহিত করতে কৃষি প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করতে পারে। দেশের বড় বড় কোম্পানি যাতে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি চিয়া সিড কিনতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশের ভেতরে এই শস্য উৎপাদনে সরকারকে তৎপর হতে হবে।
আমদানি বন্ধ করতে শুল্ককর বাড়িয়ে দিতে হবে। তা হলে দেশে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদিত শস্যটির ন্যায্যমূল্য পাবেন কৃষকরা। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়লে শস্যটি বাজারজাতকরণেও দুশ্চিন্তা কেটে যাবে। কৃষকদের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে দেশও লাভবান হবে।