ঢাকা ১০ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
আপডেট: ১৬ জুন ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

আসছে ঈদুল আজহা। এ সময় রাজধানী ছাড়েন এক কোটিরও বেশি মানুষ। ট্রেন-লঞ্চ অপর্যাপ্ত হওয়ার কারণে গণপরিবহনে ঝুঁকি নিয়ে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা সড়কপথে করতে হয় বেশি। প্রতিবছরই ঘরমুখো মানুষকে অবর্ণনীয় কষ্ট পোহাতে হয়। বিশেষ করে যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে মানুষকে আটকে থাকতে  দেখা যায়। এবারও ঈদযাত্রার শুরুতেই চরম দুর্ভোগের শিকার হয় ঘরমুখো মানুষ। প্রথম, দ্বিতীয় দিন ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে যাত্রীদের বিপাকে পড়তে হয়। যানজট এখন নিত্যব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ও হাইওয়ে পুলিশ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তারা নানারকম পদক্ষেপ নিলেও খুব একটা সুফল পাওয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় দর্শক হয়েই থাকতে হয়। 

যানজটমুক্ত ঈদযাত্রা সবাই প্রত্যাশা করেন। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা করা দরকার। কিন্তু বাস্তবে পরিকল্পনা হয় ১৫ থেকে ২০ দিন আগে, যা খুব একটা কাজে আসে না। বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থাকে আরও যুগোপযোগী করতে হবে, যাতে মানুষ রেলমুখী হয়। জনবান্ধব করতে হবে নৌ-পরিবহন ব্যবস্থাকে। সড়কপথে গণপরিবহনের ওপর থেকে বাড়তি চাপ কমিয়ে আনতে পারলে সড়ক দুর্ঘটনাও কমে আসবে। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের অবাধ যাতায়াত বন্ধ করতে হবে। ঈদ-পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী যাত্রা দুটো ক্ষেত্রেই বাড়তি নজর দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। কারণ ঈদপরবর্তী ফিরতি যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে এ সময় চালকদের আরও সতর্ক থেকে গাড়ি চালাতে হবে। সব যানবাহন তার নির্ধারিত গতিসীমা মেনে চলবে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির সক্ষমতা বাড়াতে হবে। গতিসীমা না মানলে প্রযুক্তির মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে তাদের জরিমানা নিশ্চিত করতে হবে। বিনা টিকিটে যাতে কেউ রেলভ্রমণ না করতে পারে, সেজন্য সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হবে। সড়কে চাঁদাবাজি একটা বড় সমস্যা। এ সময় পরিবহন খাতে এক ধরনের নৈরাজ্য বা অস্থিরতা তৈরি হয়। কারণ এ সময় পুলিশের কিছু অসাধু ব্যক্তি এবং কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী  চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এটা শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে পারলে এ ধরনের নৈরাজ্য দূর হবে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু বহনকারী যানবাহন রাজধানী এবং শহরগুলোতে প্রবেশ করবে। পশু বহনকারী যানবাহনগুলো যাতে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে এবং দালালদের দৌরাত্ম্যের শিকার না হয়, সে বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিতের  কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হোক সেটি প্রত্যাশা। 

কোরবানিপরবর্তী পশুর পয়োনিষ্কাশন যাতে দ্রুত এবং সহজে করা যায় সে জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ এখন ঝড়বৃষ্টির সময়। এ সময় এসব ময়লা-আবর্জনা পরিবেশকে দূষিত করে তুলতে পারে। 

ঈদুল আজহা হলো ত্যাগের উৎসব। মুসলমানরা তাদের নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর নামে পশু কোরবানি করে থাকেন, যা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হওয়া উচিত। কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি মানবমনের পশুর কোরবানি হোক সেটিই প্রত্যাশা। পৃথিবী থেকে সব ধরনের হিংসা, বিদ্বেষ ও বিভীষিকা দূর হোক। আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দের বন্ধন অটুট হোক। 

পরিশেষে খবরের কাগজের সুপ্রিয় পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, অ্যাজেন্ট,  হকার ও শুভানুধ্যায়ী সবাইকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১০:৫৬ এএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ১০:৫৬ এএম
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি দুই দেশেই নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের পর দুই দেশই নতুন করে সহযোগিতার বিষয়ে একমত হয়েছে। গত শনিবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠক-পরবর্তী দুটি চুক্তি, পাঁচটি নতুন সমঝোতা, তিনটি নবায়নসহ মোট ১০ চুক্তি-সমঝোতা স্মারক সই করেছে দুই দেশ। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে ১৩টি ঘোষণা উঠে এসেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উভয় দেশই একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে আমাদের পথ দেখানোর জন্য রূপকল্প ঘোষণা অনুমোদন করেছে। আমরা টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ডিজিটাল অংশীদারি এবং সবুজ অংশীদারিবিষয়ক দুটি রূপকল্প সামনে রেখে কাজ করতে দুই পক্ষই সম্মত হয়েছি। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক দিন দিন বিকশিত হচ্ছে বিভিন্ন অগ্রসরমাণ কাজের মাধ্যমে। রূপকল্প ২০৪১-এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং বিকশিত ভারত ২০৪৭ অনুসরণ করে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শরিক হয়েছে দুই দেশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বাংলাদেশ আমাদের বৃহত্তম উন্নয়ন সঙ্গী। তাদের স্বার্থকে ভারত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর ভারতে প্রধানমন্ত্রীর এটি প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে উভয় দেশের স্বার্থে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ডিজিটাল এবং সবুজ অংশীদারির জন্য যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্মত হয়েছেন দুই দেশের সরকারপ্রধান। 

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমন্বয়ের মাধ্যমে নতুন উন্নয়নের পথে যাত্রা হবে দুই দেশের। যেখানে দুই দেশ একে অপরকে সহযোগিতা করবে। এবার মেরিটাইমে ফোকাস করা হয়েছে। ডিজিটাল পার্টনারশিপের কথাও বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফর ভালো হয়েছে। তিস্তা প্রকল্পে ভারতের যোগ নিয়ে অনেকেই বলার চেষ্টা করেছেন যে, এতে ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের টানাপোড়েন হতে পারে। আদতে বিষয়টি তেমন নয়। বাংলাদেশ যেখানে ভালো পাবে সেখানে যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। 

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ খবরের কাগজকে বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি যা-ই হোক না কেন, তাতে যেন বাংলাদেশের স্বার্থটা আমরা ঠিকমতো রক্ষা করতে পারি। সেই বিষয়টা সব সময় মাথায় রাখতে হবে। আমাদের কাছে যেন স্বার্থ রক্ষা করাটাই মূল লক্ষ্য হয়। দুই দেশের সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়নে ভারত আগ্রহ দেখিয়েছে, এটা ইতিবাচক। 

ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং আঞ্চলিক অংশীদার। সে হিসেবে দুই দেশের আন্তসম্পর্ক অনেক শক্তিশালী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। এ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে হবে। তিস্তা সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হওয়াটা জরুরি। এসব অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধানমুখী চিন্তায় আগ্রহী হতে হবে। এটি নিয়ে জনমনে বেশ আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে হবে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ বিস্তৃত করতে হবে। টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে বাংলাদেশ-ভারত এগিয়ে যাক, সেটিই প্রত্যাশা।

আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফল হোক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪, ১০:৪৬ এএম
আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪, ১০:৪৬ এএম
আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফল হোক

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ২৩ জুন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু এ দেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলই নয়, বাংলাদেশের রাজনীতির মূলধারাও। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একসূত্রে গাঁথা। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা আন্দোলনেও দলটি অনন্য ভূমিকা পালন করে। গত ৭৫ বছরের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অনেক চড়াই-উতরাই, বন্ধুর পথ পারি দিতে হয়েছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে দলটি। দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। 

সেই দলই আজকের আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথে আন্দোলন শুরু করে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে রাজপথে নামে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরের বছর ১৯৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল হয়। সেই কাউন্সিলেই দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতারা দলের আত্মপ্রকাশের দিন হিসেবে ইতিহাস থেকে ২৩ জুন তারিখটি বেছে নিয়েছিলেন। কারণ ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। 

১৯৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু তখন কারারুদ্ধ। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্রসমাজ কর্তৃক ১৪৪ ধারা ভঙ্গের কর্মসূচির সঙ্গে কারাগারেই তিনি একাত্মতা প্রকাশ করে অনশন করেন। ’৫৪-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘যুক্তফ্রন্ট’ ভূমিধস বিজয় অর্জন করে। যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করলে বঙ্গবন্ধু বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ’৫৭-এর ৮ আগস্ট মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তার কাছে দলের দায়িত্ব মন্ত্রিত্বের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে যে ছয় দফা দাবি পেশ করা হয়, সেটিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম পদক্ষেপ বলে মনে করা হয়। এরপর ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কারণে দলটি এ অঞ্চলের নেতৃত্বে চলে আসে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। অগণিত শহিদের রক্তের বিনিময়ে ’৬৯-এ গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করে ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে ফাঁসিকাষ্ঠ থেকে মুক্ত করে ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১০ লক্ষাধিক লোকের জনসমুদ্রে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ’৭০-এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করে তৎকালীন সামরিক সরকার। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ’৭১-এর ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে শেখ মুজিব বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার ডাক দেন। তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর ডাকে এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মাতৃভূমির বীর সন্তানরা অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। টানা ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লক্ষাধিক শহিদ আর ২ লক্ষাধিক মা-বোনের আত্মত্যাগে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুটি লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আরেকটি অর্থনৈতিক মুক্তি। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন, কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি। সেই কাজটি নিষ্ঠা, দক্ষতা ও সততার সঙ্গে করে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন সব ধরনের প্রতিকূলতা জয় করে স্বাধীন বাংলাদেশ হবে মর্যাদাশালী ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা স্মার্ট বাংলাদেশ। 

তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে জনমানুষের ভাগ্যোন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এ ভূখণ্ডে প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ দলটি সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাবে, এটাই প্রত্যাশা।

বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ান

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৪, ১১:১৫ এএম
আপডেট: ২২ জুন ২০২৪, ১১:১৫ এএম
বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ান

ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় সিলেট বিভাগের তিন জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সাড়ে ২৩ লাখ মানুষ। সিলেট ও মৌলভীবাজারের প্রায় অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া নেত্রকোনা, গাইবান্ধা ও নীলফামারীও প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা। অসংখ্য মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। 

সড়ক-মহাসড়কে পানি উঠে স্থল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে খেতের ফসল, ভেসে গেছে চাষের মাছ। ঘরবাড়ি, সহায়-সম্বল হারিয়ে দিশেহারা মানুষ। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্ভোগ। 

প্রতিবছরই সিলেটবাসীকে বন্যাকবলিত হয়ে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এর কি কোনো প্রতিকার নেই?
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত সিলেট মহানগরীর ২৩টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১৩০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১ হাজার ৬০২টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৮ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট মহানগরীতে বন্যাকবলিত হয়েছে ৫৫ হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। 

সিলেট বিভাগের বন্যায় আক্রান্ত এলাকার উজান আর ভাটি- দুই জায়গাতেই দ্রুত বনভূমি উজাড় হচ্ছে। গভীর নদ-নদী অনেকখানি ভরাট হয়ে গেছে। যে কারণে বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে পারছে না। প্রাকৃতিক পানির আধারগুলো ভরাট হয়ে সেখানে বসতি ও শহর  গড়ে উঠেছে। আর হাওরের পানি নামার জায়গাগুলো সংকুচিত হয়েছে। ফলে বৃষ্টির পানি দ্রুত উজান থেকে নেমে এসে সিলেট শহর ভাসিয়ে দিচ্ছে।  

সিলেটের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় জরুরি নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেছেন, দেশের কয়েক জায়গায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় ডায়রিয়া এবং পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে পর্যাপ্ত স্যালাইন ও ওষুধ মজুত রাখতে হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে, বন্যার সময় এবং বন্যা-পরবর্তী রোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। 

বন্যার পানির মাধ্যমে শিশুর শরীরে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এ সময় শিশুদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে শিশুর খাবারের প্রতি। বন্যার সময় সাপসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচতে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের আবহাওয়া পরিস্থিতি প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে পড়েছে এবং এর অন্যতম শিকার আমরা। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিবেশী ও উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে। বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যও প্রস্তুতি রাখতে হবে।

ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ বন্যার প্রকোপ কমাতে নদ-নদীসহ সব জলাধারের পানি ধারণক্ষমতা, অর্থাৎ গভীরতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তবে এই মুহূর্তে বন্যার্তদের ত্রাণ-সহায়তা বেশি প্রয়োজন। খাদ্য, বস্ত্র, বিশুদ্ধ পানি, খাওয়ার স্যালাইনের অভাবে বন্যার্তরা দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছে। সরকার শুধু নয়, সমাজের বিত্তবানরা সামর্থ্যানুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারেন। 

এ ছাড়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারকসহ সামাজিক সংগঠন ও সমাজের বিত্তবানদেরও উচিত বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো। সবার প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারলে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করা অনেকটাই সহজ হবে।

চামড়াশিল্প বাঁচাতে ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ১১:১০ এএম
আপডেট: ২১ জুন ২০২৪, ১১:১৮ এএম
চামড়াশিল্প বাঁচাতে ব্যবস্থা নিন

প্রতিবছর ঈদুল আজহার সময় চামড়া সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য লক্ষ করা যায়, এবারও তার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। পাড়া-মহল্লা ঘুরে এতিমখানা, মাদ্রাসার প্রতিনিধিরা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছেন। তাদের পাশাপাশি কিছু মৌসুমি ও স্থায়ী চামড়া সংগ্রহকারীও কোরবানির পশুর চামড়া কিনেছেন। এবারও ফড়িয়া, ব্যাপারী ও আড়তদাররা চামড়ার ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

ক্রেতার অভাবে, ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চামড়া নদীতে ফেলে কিংবা মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত চামড়াশিল্প হলেও তা সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও ন্যায্যমূল্যের অভাবে দিন দিন ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। তাহলে কি এভাবেই চলবে চামড়াশিল্প? 

সরকারনির্ধারিত দর অনুযায়ী লবণযুক্ত ছোট গরুর চামড়ার ন্যূনতম দাম ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও ন্যায্যমূল্য পাননি চামড়া বিক্রেতারা। সরকারি দরকে পাত্তা দেয়নি চামড়া সিন্ডিকেট। চামড়া সংগ্রহকারীরা কোরবানির পশুর চামড়া কেনার পর আড়তদার ও ট্যানারির মালিকদের কাছে বিক্রি করতে গিয়েই বিপাকে পড়েন। অনেকে কেনা দর দিতেও রাজি হননি। আড়তদাররা বিক্রেতাদের কাছ থেকে সাড়ে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা পিস দামে চামড়া কিনেছেন।

 রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া কওমি মাদ্রাসার মাওলানা মিজানুর রহমান কাশেমী বলেন, ‘বহু ট্যানারির সঙ্গে দর-কষাকষি করে শেষ পর্যন্ত ট্যানারির কাছে সর্বোচ্চ ৮২০ টাকা পিস গরুর চামড়া বিক্রি করা হয়েছে, যা সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে অনেক কম। গতবার এই চামড়া ৮৩০ টাকা পিস বিক্রি করা হয়েছিল। সরকার বেশি দামের কথা বললেও তা কার্যকর হয়নি। শুধু তা-ই নয়, ছাগলের চামড়া কিনতে অনীহা দেখিয়েছেন আড়তদাররা।
 
একেকটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ টাকায়। বিক্রি করতে না পেরে অনেকে মনের কষ্টে চামড়া ফেলে দিয়েছেন। অনেকে মাটিচাপা দিয়েছেন। অতিরিক্ত গরমের কারণেও অনেক চামড়া নষ্ট হয়েছে। 
 
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহিন আহমেদ বলেন, ঈদের দিন ৮ লাখ পিস চামড়া কেনা হয়েছে। ৮২০ টাকা পিস কম না। এটা অনেক বেশি দাম বলা যায়। কারণ এর সঙ্গে লবণ, শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহন খরচ যুক্ত হবে। তাতে সরকারের নির্ধারিত দামের কাছে চলে যাবে।   

অর্থনীতির বিশ্লেষক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে যা পাওয়া যায় তা এতিমদের পেছনেই খরচ করা হয়। প্রতিবছর কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বড় ধরনের সিন্ডিকেট মাঠে থাকে। তারা একজোট হয়ে কম দামে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রিতে বাধ্য করে। এটা পরোক্ষভাবে এতিমদের ঠকানো। 

ট্যানারির মালিকরা দাবি করেছেন, ডলারসংকটের কারণে অনেক দিন থেকেই চামড়ার ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে কোরবানির পশুর চামড়া কিনলে লোকসান হবে। তা ছাড়া চামড়াপণ্যের বৈশ্বিক বড় ক্রেতা ‘গোষ্ঠী লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের পর চামড়া সংগ্রহ পর্যায় থেকে প্রস্তুত পর্যন্ত পরিবেশ ও শ্রমের ন্যূনতম মান নির্ধারণ করে দেয়। এসব মান নিশ্চিত করে যারা ‘ফিনিশ্ড’ চামড়া প্রস্তুত করার সক্ষমতা রাখে, সেসব ট্যানারিকে সনদ দিচ্ছে এবং তাদের কাছ থেকেই চামড়া কিনছে তারা। এলডব্লিউজি সনদ অর্জন না করায় বাংলাদেশি চামড়ার বড় ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

পরিবেশদূষণের কারণে বাংলাদেশ থেকে এসব পণ্য বিদেশি ক্রেতারা কিনতে চাইছেন না। তা ছাড়া রিলোকেশন, অর্থসংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে চামড়াশিল্পে একধরনের ধস নেমেছে।

চামড়াশিল্পকে বাঁচাতে হলে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। চামড়াশিল্পে মান ও মাত্রায় কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে সম্ভাবনাময় খাতগুলোর উন্নয়নেও ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। চামড়াশিল্প সম্ভাবনাময় একটি খাত, যা সুষ্ঠু পরিচালনা ও যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

চামড়াশিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সম্ভাবনাময় এ খাতে সরকারের সুনজর দিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে রপ্তানিমুখী এ শিল্পকে যেকোনো মূল্যে বাঁচাতে হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

শুদ্ধাচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
আপডেট: ২০ জুন ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
শুদ্ধাচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে

সততা, ন্যায়নিষ্ঠাসহ শুদ্ধাচার চর্চায় সেরাদের পুরস্কার দেওয়া হয়। এই পুরস্কার দেওয়ার প্রক্রিয়াটা দিনে দিনে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে নানা কারণে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের অনেকেই অসৎ ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত। পুরস্কারপ্রাপ্তদের পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, এ প্রক্রিয়ায় বিচারকের ভূমিকায় যারা আছেন- তাদের সততা, নিরপেক্ষতা ও শুদ্ধতা নিয়েও। সম্প্রতি বহুল আলোচিত সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে দেওয়া শুদ্ধাচার পুরস্কারের প্রক্রিয়া নিয়ে চলছে নেতিবাচক আলোচনা।

রাষ্ট্র-সমাজে ন্যায়-সততা প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে শুদ্ধাচার কৌশলের অংশ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা চলে আসছে ২০১৭ সাল থেকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারকের ভূমিকায় যারা থাকবেন, তাদের পরিপূর্ণ শুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে এবং এ ধরনের পুরস্কার দেওয়ার আগে মনোনীত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিষয়ে সার্বিক তথ্য সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় খোঁজখবর নেওয়া দরকার।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, এসব পদক দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধু প্রক্রিয়াগত ত্রুটি নিয়ে ভাবলে চলবে না, ক্ষমতার কাছাকাছি অবস্থান করা প্রভাবশালী, শক্তিধর ব্যক্তিদের নৈতিক মান নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা ছাড়া এ ধরনের স্খলনের কোনো সুরাহা হবে না। অনেক কর্মকর্তা আছেন যারা দুর্নীতি, অনিয়ম, নৈতিক স্খলনের দায়ে অভিযুক্ত হয়েও হাসিল করেছেন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ শুদ্ধাচার পুরস্কার। আবার পুরস্কার পাওয়ার পর অনেকেরই অনিয়ম, দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের বিষয়গুলো প্রকাশ পেয়েছে।

রাষ্ট্র-সমাজে ন্যায়-সততা প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকার ২০১২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল নির্ধারণ করে। কৌশলের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত শুদ্ধাচার কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিবীক্ষণ কাঠামো প্রণয়ন করা হয়। ২০১৭ সালে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল শীর্ষক নীতিমালা জারি করা হয়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও টিআইবির চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল খবরের কাগজকে বলেন, রাষ্ট্রের এত সম্মানীয় পুরস্কার দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত এসব ব্যক্তি নিশ্চয়ই সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারাই যখন এ ধরনের অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান, তখন বুঝতে হবে সমাজের নৈতিকতা বোধের কত অধঃপতন ঘটেছে এবং তাদের মাধ্যমে দুর্নীতি কতটা প্রশ্রয়লাভ করেছে। কাজেই এসব পদক দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধু প্রক্রিয়াগত ত্রুটি নিয়ে ভাবলে চলবে না, ক্ষমতার কাছাকাছি অবস্থান করার প্রভাবশালী, শক্তিধর ব্যক্তিদের নৈতিক মান নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হবে।

জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার একটি জাতীয় পুরস্কার। এখানে কোনো অশুদ্ধতা থাকবে না। নির্বাচন-প্রক্রিয়া যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে জন্য পুরস্কার প্রদানকারী এবং পুরস্কার প্রদানের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে। শুদ্ধাচার পুরস্কার যেন মূল্যহীন আনুষ্ঠানিকতা না হয়ে ওঠে, সে জন্য সরকারকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।