![ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন](uploads/2024/06/16/Editorial-1718525279.jpg)
আসছে ঈদুল আজহা। এ সময় রাজধানী ছাড়েন এক কোটিরও বেশি মানুষ। ট্রেন-লঞ্চ অপর্যাপ্ত হওয়ার কারণে গণপরিবহনে ঝুঁকি নিয়ে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা সড়কপথে করতে হয় বেশি। প্রতিবছরই ঘরমুখো মানুষকে অবর্ণনীয় কষ্ট পোহাতে হয়। বিশেষ করে যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে মানুষকে আটকে থাকতে দেখা যায়। এবারও ঈদযাত্রার শুরুতেই চরম দুর্ভোগের শিকার হয় ঘরমুখো মানুষ। প্রথম, দ্বিতীয় দিন ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে যাত্রীদের বিপাকে পড়তে হয়। যানজট এখন নিত্যব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ও হাইওয়ে পুলিশ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তারা নানারকম পদক্ষেপ নিলেও খুব একটা সুফল পাওয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় দর্শক হয়েই থাকতে হয়।
যানজটমুক্ত ঈদযাত্রা সবাই প্রত্যাশা করেন। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা করা দরকার। কিন্তু বাস্তবে পরিকল্পনা হয় ১৫ থেকে ২০ দিন আগে, যা খুব একটা কাজে আসে না। বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থাকে আরও যুগোপযোগী করতে হবে, যাতে মানুষ রেলমুখী হয়। জনবান্ধব করতে হবে নৌ-পরিবহন ব্যবস্থাকে। সড়কপথে গণপরিবহনের ওপর থেকে বাড়তি চাপ কমিয়ে আনতে পারলে সড়ক দুর্ঘটনাও কমে আসবে। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের অবাধ যাতায়াত বন্ধ করতে হবে। ঈদ-পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী যাত্রা দুটো ক্ষেত্রেই বাড়তি নজর দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। কারণ ঈদপরবর্তী ফিরতি যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে এ সময় চালকদের আরও সতর্ক থেকে গাড়ি চালাতে হবে। সব যানবাহন তার নির্ধারিত গতিসীমা মেনে চলবে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির সক্ষমতা বাড়াতে হবে। গতিসীমা না মানলে প্রযুক্তির মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে তাদের জরিমানা নিশ্চিত করতে হবে। বিনা টিকিটে যাতে কেউ রেলভ্রমণ না করতে পারে, সেজন্য সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হবে। সড়কে চাঁদাবাজি একটা বড় সমস্যা। এ সময় পরিবহন খাতে এক ধরনের নৈরাজ্য বা অস্থিরতা তৈরি হয়। কারণ এ সময় পুলিশের কিছু অসাধু ব্যক্তি এবং কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এটা শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে পারলে এ ধরনের নৈরাজ্য দূর হবে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু বহনকারী যানবাহন রাজধানী এবং শহরগুলোতে প্রবেশ করবে। পশু বহনকারী যানবাহনগুলো যাতে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে এবং দালালদের দৌরাত্ম্যের শিকার না হয়, সে বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিতের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হোক সেটি প্রত্যাশা।
কোরবানিপরবর্তী পশুর পয়োনিষ্কাশন যাতে দ্রুত এবং সহজে করা যায় সে জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ এখন ঝড়বৃষ্টির সময়। এ সময় এসব ময়লা-আবর্জনা পরিবেশকে দূষিত করে তুলতে পারে।
ঈদুল আজহা হলো ত্যাগের উৎসব। মুসলমানরা তাদের নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর নামে পশু কোরবানি করে থাকেন, যা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হওয়া উচিত। কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি মানবমনের পশুর কোরবানি হোক সেটিই প্রত্যাশা। পৃথিবী থেকে সব ধরনের হিংসা, বিদ্বেষ ও বিভীষিকা দূর হোক। আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দের বন্ধন অটুট হোক।
পরিশেষে খবরের কাগজের সুপ্রিয় পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, অ্যাজেন্ট, হকার ও শুভানুধ্যায়ী সবাইকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।