![আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফল হোক](uploads/2024/06/23/Editorial-1719117995.gif)
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ২৩ জুন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু এ দেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলই নয়, বাংলাদেশের রাজনীতির মূলধারাও। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একসূত্রে গাঁথা। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা আন্দোলনেও দলটি অনন্য ভূমিকা পালন করে। গত ৭৫ বছরের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অনেক চড়াই-উতরাই, বন্ধুর পথ পারি দিতে হয়েছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে দলটি। দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
সেই দলই আজকের আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথে আন্দোলন শুরু করে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে রাজপথে নামে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরের বছর ১৯৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল হয়। সেই কাউন্সিলেই দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতারা দলের আত্মপ্রকাশের দিন হিসেবে ইতিহাস থেকে ২৩ জুন তারিখটি বেছে নিয়েছিলেন। কারণ ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য অস্তমিত হয়েছিল।
১৯৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু তখন কারারুদ্ধ। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্রসমাজ কর্তৃক ১৪৪ ধারা ভঙ্গের কর্মসূচির সঙ্গে কারাগারেই তিনি একাত্মতা প্রকাশ করে অনশন করেন। ’৫৪-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘যুক্তফ্রন্ট’ ভূমিধস বিজয় অর্জন করে। যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করলে বঙ্গবন্ধু বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ’৫৭-এর ৮ আগস্ট মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তার কাছে দলের দায়িত্ব মন্ত্রিত্বের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে যে ছয় দফা দাবি পেশ করা হয়, সেটিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম পদক্ষেপ বলে মনে করা হয়। এরপর ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কারণে দলটি এ অঞ্চলের নেতৃত্বে চলে আসে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। অগণিত শহিদের রক্তের বিনিময়ে ’৬৯-এ গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করে ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে ফাঁসিকাষ্ঠ থেকে মুক্ত করে ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১০ লক্ষাধিক লোকের জনসমুদ্রে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ’৭০-এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করে তৎকালীন সামরিক সরকার। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ’৭১-এর ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে শেখ মুজিব বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার ডাক দেন। তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর ডাকে এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মাতৃভূমির বীর সন্তানরা অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। টানা ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লক্ষাধিক শহিদ আর ২ লক্ষাধিক মা-বোনের আত্মত্যাগে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুটি লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আরেকটি অর্থনৈতিক মুক্তি। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন, কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি। সেই কাজটি নিষ্ঠা, দক্ষতা ও সততার সঙ্গে করে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন সব ধরনের প্রতিকূলতা জয় করে স্বাধীন বাংলাদেশ হবে মর্যাদাশালী ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা স্মার্ট বাংলাদেশ।
তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে জনমানুষের ভাগ্যোন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এ ভূখণ্ডে প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ দলটি সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাবে, এটাই প্রত্যাশা।