![চীন-ভারত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাস্তবসম্মত](uploads/2024/06/27/Editorial-1719461406.gif)
ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরের অর্জনের কথা তুলে ধরেন। এ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় ভারসাম্য রেখেছেন।
দুই দেশই বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেদের রক্ত ঢেলে দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও ১ কোটি বাঙালিকে আশ্রয় দিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পাশে থেকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে।
দল-মতনির্বিশেষে ভারতের প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও নেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুসম্পর্ক রয়েছে। ভারতকে দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে বলেছেন, চীন থেকে শেখার আছে। তিনি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে দেশের উন্নয়নে কাজ করার কথা বলেছেন।
ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নে কার সঙ্গে কতটুকু বন্ধুত্ব দরকার, সেটা করে যাচ্ছে সরকার। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে পরিচালনা করছেন তারই পিতার দেখানো পথ অনুসরণ করে। দেশের উন্নয়নে তিনি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলেছেন। তার সুচিন্তিত ও গতিশীল নেতৃত্বের কারণে দেশ আজ অনেক অগ্রসরমাণ।
এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার প্রচেষ্টায় রয়েছে এ দেশ। কূটনীতিতেও ইতিবাচক কৌশল অবলম্বন করে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ জুলাই তিন দিনের সফরে চীনের রাজধানী বেইজিং যাবেন। মাত্র কয়েক দিন আগে তিনি ভারত সফর করে এসেছেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চায় নয়াদিল্লি। এ অবস্থায় সফরকালে নয়াদিল্লি-বেইজিংয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে ঢাকার কর্মকর্তাদের মধ্যে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ও ভারত উভয় দেশই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দুই ধরনের। বাংলাদেশের তিন দিক ঘিরে রয়েছে ভারত। অন্যদিকে সহযোগিতা ও ভূ-রাজনীতির মতো বিষয়গুলো নিয়ে একধরনের সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে ঢাকা।
এ ছাড়া বাংলাদেশকে ঘিরে ভারত-চীনের মধ্যে রয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। ভারত চায় ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশ তার সঙ্গে থাকুক। চীনের প্রত্যাশাও বাংলাদেশ তার সঙ্গে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে সফরটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ খবরের কাগজকে বলেন, চীন-ভারত উভয় দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। বাংলাদেশ ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখেই চলছে। উভয় পক্ষের সংবেদনশীলতা ও স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকাকে এগোতে হবে।
তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে যাদের প্রস্তাব বেশি লাভবান হবে, সেটাই বাংলাদেশ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে চীন-ভারত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাস্তবসম্মত বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। প্রত্যাশা করছি, বাংলাদেশ সরকার দূরদর্শী চিন্তা দিয়ে এ দেশের মানুষের জন্য যেটি কল্যাণকর সেটিই করবে। প্রধানমন্ত্রী তার কূটনৈতিক কৌশল দিয়ে ইতোমধ্যে অনেক সমস্যার সমাধান করেছেন। ভবিষ্যতেও করবেন, এটাই প্রত্যাশা।