![সিলেটে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ান](uploads/2024/06/04/Editorial-1717476158.gif)
সিলেট নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক পরিবারের সহায়-সম্বলটুকুও তলিয়ে গেছে। বন্যাকবলিত মানুষ সামান্য খাবারের জন্য ঠাঁই নিয়েছে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে। ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে গোয়াইনঘাট এলাকায়। ভেঙে গেছে রাস্তা, ধসে পড়েছে ঘরবাড়ি। এখন আসন্ন বর্ষাকাল নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয় মানুষ। ভুক্তভোগীরা বলছেন, রাতে পানি ঢুকে তাদের ঘরে চাল-ডাল যা ছিল সব নষ্ট হয়ে গেছে। তারা চিড়া-মুড়ি খেয়েই কোনোভাবে দিন যাপন করছেন।
পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হচ্ছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। সিলেটের আট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও অপরিবর্তিত আছে নগরীতে। জেলার সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর চারটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও ধীরে ধীরে তা কমছে। ভারতে বৃষ্টিপাত কমে গেলে এবং নতুন করে বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ও টানা বৃষ্টিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯টি
ওয়ার্ডসহ ৮টি উপজেলার ৫৯টি ইউনিয়নের ৭৮১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬ লাখ ৯ হাজার ৭৩৩ বন্যাকবলিত হয়েছে। জেলায় ৫৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে আছে ৩ হাজার ৩৪২ জন।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পার্শ্ববর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রায় ৭০ শতাংশ তলিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে গোয়াইনঘাটের তিনটি নদনদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। আর পানি কমার পরই দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া গোয়াইনঘাট জাফলং ও সারি গোয়াইনঘাট সড়ক ফেটে গেছে। অনেক সড়ক ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোয় গ্রামীণ সব সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এবার বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হবে। ফলে আগাম বন্যা বা আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। জুন মাসেও সিলেট বিভাগে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৩৪ মিলিমিটার। এর চেয়ে বেশি হতে পারে বলে পূর্বাভাসে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হতে পারে। এখানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৮৯ মিলিমিটার। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৩০ থেকে ৬৪৫ মিলিমিটার হতে পারে। অন্যদিকে জুলাইয়ে চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ এবং সিলেট বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুর জেলায় সাম্প্রতিক কালবৈশাখী এবং সিলেট জেলায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত দুস্থ ও অসহায় পরিবারকে মানবিক সহায়তার জন্য মোট ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগে ত্রাণ হিসেবে নগদ ২০ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ১০ লাখ এবং গো-খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ৫০০ মেট্রিক টন চালও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে দিনাজপুর জেলায় নগদ বরাদ্দের পরিমাণ ১৫ লাখ টাকা। আর শুকনা ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার বস্তা বা প্যাকেট।
বন্যায় যেসব সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রাক-বর্ষা ও বর্ষাকালের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে। সেই সঙ্গে সবাইকে সচেতন করতে হবে। বন্যা-পরবর্তী ঝুঁকি বা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তাই বন্যাদুর্গতদের জন্য সরকারের পাশাপাশি দেশের বিত্তবানদের সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।