![চামড়া খাতে নৈরাজ্য দূর করুন](uploads/2024/06/15/Editorial-1718426838.gif)
ডলারসংকটের প্রভাব চামড়া খাতেও পড়ছে। এ কারণে চামড়া খাতে রপ্তানি কমেছে। বাংলাদেশের ট্যানারিগুলোর কাঁচা চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম ঈদুল আজহা। এ সময় বাংলাদেশ থেকে ভারতে পশুর চামড়া পাচার হয় বেশি।
এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে পাচার হয়ে গেলে বাংলাদেশের ট্যানারির মালিকরা কাঁচামালসংকটে পড়বেন। আর এতে দেশে চামড়াশিল্পের বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে। এমনিতেই পুঁজিসংকটে আছেন ট্যানারির মালিকরা। আসন্ন ঈদুল আজহায় সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করা নিয়ে দেখা দিয়েছে একধরনের অনিশ্চয়তা।
ট্যানারির মালিকরা জানিয়েছেন, ডলারসংকটের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে চামড়া খাতে বিক্রি কমেছে। এলসি খুলতে না পারায় প্রয়োজনমতো রাসায়নিক আমদানি করা সম্ভব হয়নি। আর এতে অনেক ট্যানারিতে সংগৃহীত কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং বিক্রি কমায় পুঁজিসংকটে আছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাই গত বছরের চেয়ে এবারে কোরবানির পশুর চামড়া কম কিনতে পারবেন তারা। কোরবানির পশুর চামড়া নষ্ট হলে তার দায় তারা নেবেন না।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মের প্রথম ১১ মাসে ৯৬ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪.১৭ শতাংশ কম। অন্যদিকে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২২ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি আগের অর্থবছরের তুলনায় পৌনে ২ শতাংশ কম।
বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের অন্যতম ক্রেতা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এ ছাড়া চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশেও রপ্তানি হয়। ডলারসংকটের প্রভাব পড়েছে এসব দেশের অর্থনীতিতেও। ওই সব দেশের বায়াররা বাংলাদেশ থেকে চামড়াজাত পণ্য কেনা কমিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান কতটা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করতে পারবে তা বলা যাচ্ছে না। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের সংকট বেশি। ব্যবসায় এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশুর চামড়া চোরাই পথে প্রতিবেশী দেশে বিক্রির আশঙ্কা করছেন।
তারা মন্ত্রণালয়ে চোরাই পথে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়ে আবেদন করেছেন। ট্যানারির মালিকদের এ সংকটে ব্যাংকঋণ দ্বিগুণ করার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। তথ্যমতে, এবারে সরকারিভাবে ১ কোটি ১০ লাখ কোরবানির পশুর চামড়া পাওয়ার কথা।
অর্থনীতির বিশ্লেষক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা এ বি আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, চামড়া খাতে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। পুঁজিসংকটে আছেন অনেক ট্যানারি মালিক।
তাই আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া ট্যানারির মালিকরা কতটা কিনতে পারবেন, তা এখনই হিসাব করে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। না হলে চামড়া খাতে গতবারের মতো নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে।
ট্যানারি মালিকরা অনেকে এলসি খুলতে না পারার কারণে রাসায়নিক আমদানি করতে পারেননি। ফলে অনেক কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। এতে চামড়াশিল্পে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। চামড়াশিল্পের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে সরকারকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে করণীয় ঠিক করতে হবে।
কোরবানির পশুর চামড়া চোরাচালান বন্ধে সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে হবে। ছোট ও মাঝারি ট্যানারির মালিকদের ব্যাংকঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। চামড়া খাতে নৈরাজ্য রোধ করতে পারলে এ শিল্পের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।