![প্রত্যয় স্কিম: আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে](uploads/2024/07/04/Editorial-1720069051.gif)
প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাতিলসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার সর্বাত্মক কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। কর্মসূচিটি ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলছে, নতুন ব্যবস্থায় শিক্ষকদের সুবিধা কমবে। ব্যবস্থাটি বৈষম্যমূলক ও তাদের জন্য অবমাননাকর।
নতুনদের জন্য তারা এ আন্দোলন করছে। বাকি দুই দাবি হলো শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন এবং প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি। সরকার বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৪০০টির মতো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে প্রত্যয় কর্মসূচির আওতায় পেনশন দেওয়া হবে।
সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলছে। দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উচ্চশিক্ষায় সেশনজটসহ নানা সংকট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই স্বল্প সময়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার পক্ষে মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা প্রত্যয় স্কিমকে বৈষম্যমূলক বলছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি ষড়যন্ত্রমূলক।
২০১৫ সালের পে-স্কেল করার সময় শিক্ষকদের গ্রেড অবনমন করা হয়। এবারও সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য সেবক নামের আরেকটি স্কিম আনা হবে। সেই রূপরেখা এখনো ঠিক হয়নি।
যেখানে একই সঙ্গে আগে সবাই পেনশন পেত, নতুন নিয়মে সবাইকে একসঙ্গে না রেখে আলাদা করে সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় অল্প সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করার জন্য মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম ফজলুল হক খবরের কাগজকে বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির যুক্তিসংগত সমাধান করা উচিত।
সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। সবাই এর আওতায় আসবেন। পৃথিবীর অনেক দেশেই এই সিস্টেম আছে। সেটা চিন্তা করেই আমাদের এখানে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটা পর্যায়ে সবাইকে এ কর্মসূচির আওতায় আসতে হবে।
এ বছর শিক্ষকরা আসছেন। আগামী বছর থেকে সরকারি কর্মচারীরাও এর আওতায় আসবেন। বেসরকারি পর্যায়ে নির্দিষ্ট প্যাকেজই রয়েছে। সব উন্নত রাষ্ট্রেই বার্ধক্যকে এ ধরনের নিরাপত্তামূলক আর্থিক কর্মসূচি দিয়ে সেফগার্ড দেওয়া হয়।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান এবং ঢাবির সাবেক উপাচার্য এ আজাদ চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, শিক্ষকদের সবার সঙ্গে মেশানো হলো আর আমলাদের আলাদা করে রাখা হলো। এতে একটা অনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এই হিসেবে তো আমি এটা সমর্থন করতে পারি না। সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করায় বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। এটা তো সংশোধন করা যায়। আমার মনে হয়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত।
প্রত্যয় স্কিম নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। বর্তমান চলমান সংকট নিরসন দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। তা না হলে উচ্চশিক্ষাব্যবস্থায় একধরনের নৈরাজ্য তৈরি হবে। ছাত্রছাত্রীরা সেশনজটে পড়বেন। সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক, সেটিই প্রত্যাশা।