ঢাকা ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪

প্রত্যয় স্কিম: আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৭ এএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১১:০২ এএম
প্রত্যয় স্কিম: আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে

প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাতিলসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার সর্বাত্মক কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। কর্মসূচিটি ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলছে, নতুন ব্যবস্থায় শিক্ষকদের সুবিধা কমবে। ব্যবস্থাটি বৈষম্যমূলক ও তাদের জন্য অবমাননাকর। 

নতুনদের জন্য তারা এ আন্দোলন করছে। বাকি দুই দাবি হলো শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন এবং প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি। সরকার বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৪০০টির মতো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে প্রত্যয় কর্মসূচির আওতায় পেনশন দেওয়া হবে। 

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলছে। দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উচ্চশিক্ষায় সেশনজটসহ নানা সংকট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই স্বল্প সময়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার পক্ষে মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা প্রত্যয় স্কিমকে বৈষম্যমূলক বলছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি ষড়যন্ত্রমূলক।

২০১৫ সালের পে-স্কেল করার সময় শিক্ষকদের গ্রেড অবনমন করা হয়। এবারও সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য সেবক নামের আরেকটি স্কিম আনা হবে। সেই রূপরেখা এখনো ঠিক হয়নি। 

যেখানে একই সঙ্গে আগে সবাই পেনশন পেত, নতুন নিয়মে সবাইকে একসঙ্গে না রেখে আলাদা করে সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় অল্প সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করার জন্য মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম ফজলুল হক খবরের কাগজকে বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির যুক্তিসংগত সমাধান করা উচিত। 

সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। সবাই এর আওতায় আসবেন। পৃথিবীর অনেক দেশেই এই সিস্টেম আছে। সেটা চিন্তা করেই আমাদের এখানে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটা পর্যায়ে সবাইকে এ কর্মসূচির আওতায় আসতে হবে। 

এ বছর শিক্ষকরা আসছেন। আগামী বছর থেকে সরকারি কর্মচারীরাও এর আওতায় আসবেন। বেসরকারি পর্যায়ে নির্দিষ্ট প্যাকেজই রয়েছে। সব উন্নত রাষ্ট্রেই বার্ধক্যকে এ ধরনের নিরাপত্তামূলক আর্থিক কর্মসূচি দিয়ে সেফগার্ড দেওয়া হয়। 

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান এবং ঢাবির সাবেক উপাচার্য এ আজাদ চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, শিক্ষকদের সবার সঙ্গে মেশানো হলো আর আমলাদের আলাদা করে রাখা হলো। এতে একটা অনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এই হিসেবে তো আমি এটা সমর্থন করতে পারি না। সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করায় বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। এটা তো সংশোধন করা যায়। আমার মনে হয়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। 

প্রত্যয় স্কিম নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। বর্তমান চলমান সংকট নিরসন দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। তা না হলে উচ্চশিক্ষাব্যবস্থায় একধরনের নৈরাজ্য তৈরি হবে। ছাত্রছাত্রীরা সেশনজটে পড়বেন। সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক, সেটিই প্রত্যাশা।

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের বিষয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিন

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৮ এএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৮ এএম
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের বিষয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিন

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ছে। দাবি আদায়ে বিক্ষোভের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করছেন। এ ছাড়া ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের এক পাশে মানববন্ধন করেছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। তারা জানিয়েছেন, পেনশন কর্মসূচি প্রত্যয় প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে শ্রেণিকক্ষে ফিরলেও কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে থাকবেন তারা। 

২০১৮ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসগুলো। এদিকে আন্দোলনকারীরা সিদ্ধান্ত বাতিলে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে কি না, এমন বিষয়ে ৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। ওই দিন মামলাটি শুনানির জন্য উপস্থাপিত হলেও প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। 

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে ১ জুলাই থেকে ধারাবাহিক  আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় ধরনের ছাত্র আন্দোলন হয়। 

এ আন্দোলন থেকে কোটা সংস্কারের দাবি উঠেছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি (২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর) করে। এর ফলে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি  বাতিল হয়ে যায়। এরপর ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে হাইকোর্ট ৫ জুন সরকারি পরিপত্রের ওই অংশ (৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা) অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর থেকে আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। ১ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চাকরিপ্রত্যাশীরা আন্দোলন করছেন। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রথমত ২০১৮ সালের সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে এবং সে অনুযায়ী কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশন গঠনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য যৌক্তিক ন্যূনতম কোটা রাখা যেতে পারে। তবে কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ দিয়ে শূন্যপদগুলো পূরণ করতে হবে। চাকরিতে অর্থাৎ সরকারকে দক্ষ, নিরপেক্ষ মেধাভিক্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত আমলাতন্ত্র নিশ্চিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগ খুবই জরুরি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫টি বিভাগ ও দেশের ২৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। কোটা পদ্ধতির ফলে তুলনামূলক যোগ্য মেধাবীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি একধরনের বৈষম্য বটে। এ সংকট নিরসনে সরকারকে সুচিন্তিত ও যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মেধাভিক্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে পারলে সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো আরও গতিশীল হবে।

শিল্প-কারখানা সচল রাখতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করুন

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১১:১৫ এএম
আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১১:১৫ এএম
শিল্প-কারখানা সচল রাখতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করুন

গ্যাসসংকটের কারণে দেশের শিল্পসমূহ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শিল্পোদ্যোক্তারা এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ ও গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সরকার এ লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট, হরিপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকার বিদ্যুৎকেন্দ্র, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেয়। 

কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আনতে নারায়ণগঞ্জ জেলার মেঘনাঘাট হয়ে হরিপুর পর্যন্ত ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইনের নির্মাণকাজ চলছে। ২০২৫ সালের জুনে প্রকল্পটি চালু হলে নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট, হরিপুর, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াসহ আশপাশের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্প-কারখানাগুলোয় বাড়তি গ্যাসের চাহিদা পূরণে যুগান্তকারী অবদান রাখবে। যা দেশের অর্থনীতিতে যোগ করবে এক নতুন দিগন্তের। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার জামালদীতে মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষে গ্যাসভিত্তিক ৬৬০ মেগাওয়াটের নতুন আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মেঘনাঘাট পাওয়ার হাব এলাকায় বেসরকারি খাতে নির্মিত মোট ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে এ সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া গজারিয়া, হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাব এলাকায় তিনটি কেন্দ্রেও গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এর ফলে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়বে। কমে আসবে লোডশেডিং।  

প্রকৌশলীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে পাইপ বসানোর কাজ করছেন শ্রমিকরা। পাওয়ার প্লান্ট বিশেষজ্ঞ জালাল আহমেদ চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার জামালদীতে মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষে গ্যাসভিত্তিক ৬৬০ মেগাওয়াটের নতুন আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া জয়েন্ট ভেঞ্চারে নির্মাণ করা হবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস এলএনজি জ্বালানির উৎস হিসেবে আনুমানিক ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইন বসানো হবে, যা জিটিসিএলের মাধ্যমে নির্মাণাধীন ৪২ ইঞ্চি বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। আমরা এই লাইনটির জন্য অপেক্ষা করছি। এই এলাকার সব বিদ্যুৎকেন্দ্র এই লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। 

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. সানোয়ার হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আমাদের অনেক কারিগরি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমাদের ৯টি নদী ক্রসিং করতে হচ্ছে, যার মোট দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। নদী ক্রসিং সবচেয়ে বড় সমস্যা। মেঘনা নদীতেই দুই কিলোমিটার ক্রসিং আছে, যা বিশাল চ্যালেঞ্জের। হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ পদ্ধতিতে ৯টি নদী ক্রসিং করা হচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণ নিয়েও নানা রকম জটিলতা তৈরি হয়েছিল। আমরা তা অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’ 

প্রকল্পটি দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই মুহূর্তে দেশে তীব্র গ্যাসসংকটের পাশাপাশি বিদ্যুৎ-সংকট তো রয়েছেই। চলমান এই সংকট মোকাবিলায় প্রকল্পটি বাড়তি গ্যাসের চাহিদা পূরণে যুগান্তকারী অবদান রাখবে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়াতে পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১:১৭ এএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১:১৭ এএম
তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়াতে পদক্ষেপ নিন

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ খাতে রপ্তানি কমেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ইতালিতে রপ্তানি কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির পতন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। 

এর মধ্যে আবার অন্য বাজারগুলোতেও রপ্তানি কমে যাওয়ায় নতুন করে ভাবতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। মূলত যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় ক্রয় আদেশ কমছে বলে মনে করেন রপ্তানিকারকরা। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান এই খাতের রপ্তানি বাড়াতে গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

পাঁচ মাসের ব্যবধানে আবারও রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তা কমিয়েছে সরকার। গত রবিবার এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানিয়েছে। একাধিক খাতের রপ্তানিকারক বলছেন, একদিকে ব্যবসার খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে প্রণোদনা কমছে। এতে পণ্য রপ্তানিতে দেশীয় কারখানাগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে। তাতে অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার শঙ্কা আছে। 

২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে সার্বিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত এবং যুক্তরাজ্য ও নতুন বাজারে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। তবে বেশ কয়েকটি বড় বাজারে রপ্তানি কমেছে। ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানি ও ইতালি। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জার্মানির বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধস নেমেছে। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশটিতে আগের অর্থবছরের তুলনায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। এ সময়ে জার্মানির বাজারে ৫৪২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। একই সময়ে ইতালির বাজারে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৯৩ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ কম। 

ইইউর পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাটে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের তুলনায় এ বছরের একই সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানি প্রায় ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমিয়েছে ইইউ। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত মে মাসে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৩৫ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের থেকে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ কম। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, শুধু যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ইতালিতে নয়, বরং নতুন বাজার ভারতেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ভারতে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ। 

উদ্যোক্তারা বলছেন, এটা কমে যাওয়ার পেছনে দেশের অভ্যন্তরীণ কিছু কারণ রয়েছে। আর তা হলো গ্যাস ও বিদ্যুতের চরম সংকট। এই সংকটের কারণে আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ক্রেতাদের কাছে যথাসময়ে পোশাক পাঠানো যাচ্ছে না। এ কারণে তারা বাংলাদেশের কোম্পানির পরিবর্তে অন্য দেশ থেকে পোশাক কিনছে। কাস্টমসের হয়রানির ফলেও শিপমেন্ট বিলম্বিত হচ্ছে। এটাও রপ্তানি কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ। 

সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর চরম অসহযোগিতাও চলছে। সময়মতো ব্যাক টু ব্যাক এলসি করছে না। এ ছাড়া ক্রেতা দেশগুলোর কাছ থেকে আমরা পণ্যের যথার্থ দাম পাচ্ছি না। কারণ শ্রমিকদের বেতনের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা পোশাকের দাম বাড়াচ্ছে না। তারা যে দাম দিচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে আমরা সে দামে ক্রয় আদেশ নিতে পারছি না। এসব সমস্যার কারণে রপ্তানি কমেছে বলে মনে করছেন তারা। 

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মো. রেজাউল আলম খবরের কাগজকে বলেন, রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা। এই মন্দার কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই রপ্তানি কমছে। কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। সে কারণে আমাদের পোশাক রপ্তানি কমেছে। এটা সত্য যে, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে লিড টাইম বেড়ে গেছে। সে কারণে আমাদের কিছু ক্রেতা অন্য দেশে চলে গেছে। 

তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি বাড়াতে সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ খাতে বিদেশি ক্রেতা আকৃষ্ট করতে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট কমিয়ে আনতে হবে। কাস্টমস এবং ব্যাংকের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান এই খাতকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। সম্ভাবনাময় খাতটি আরও গতিশীল হোক, সেটিই প্রত্যাশা।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৪২ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৪২ এএম
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

দুর্নীতি নিয়ে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের সর্বত্র আলোচনা চলছে। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং ছাগলকাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদ্য বিদায়ী সদস্য মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এরপর থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিলের বিষয়টি আবার আলোচনায় উঠে আসে। 

এমনকি বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের দফায় দফায় বেতন বাড়ানোর পরও দুর্নীতি কমেনি। সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে সম্পদের হিসাব দাখিল বাধ্যতামূলক করার দাবি করছে অনেকেই। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে। যে-ই হোক দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে আমরা ধরব। সরকারের দৃঢ় অবস্থানে আতঙ্কে মন্ত্রী-এমপিরাও। প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। ব্যক্তির দায় সরকার কোনোভাবেই বহন করবে না। 

উচ্চমাত্রায় দুর্নীতি কমাতে সরকারি চাকরিজীবীদের কাছ থেকে প্রতিবছর সম্পদের হিসাব নেওয়া এবং হালনাগাদ করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। বাংলাদেশ বিষয়ে আইএমএফের কান্ট্রি রিপোর্টে এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনেকেই বলছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল নিশ্চিত করতে পারলে অপরাধ ও দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে। 

সরকারি চাকরিজীবীদের পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান ১৯৭৯ সালে চালু করা হয়। দেশে বর্তমানে ১৫ লাখ সরকারি চাকরিজীবী আছেন। তাদের জবাবদিহি নিশ্চিতে আচরণ বিধিমালায় এ নিয়ম যুক্ত করা হয়। 

কিন্তু চার দশক ধরে এ নিয়ম পুরোপুরি প্রতিপালন করা যায়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবীর প্রতি পাঁচ বছর অন্তর প্রদর্শিত সম্পত্তির হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব বিবরণী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। কিন্তু ৪৩ বছর আগের এই বিধানকে মানছেন না সরকারি চাকরিজীবীরা। 

আচরণবিধি অনুযায়ী সব সরকারি চাকরিজীবীর সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। যাদের টিআইএন আছে এবং ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পদধারী কিংবা গাড়ি-বাড়ি আছে এমন চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক। 

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হলে তাদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে। আয়কর রিটার্নে সম্পদের হিসাব বিবরণীর তথ্য থাকে। যদি কেউ না দিয়ে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান বাধ্যতামূলক করা হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে ভয়ভীতি কাজ করবে। এতে করে দুর্নীতি কমবে। 

দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত- এমন সাইনবোর্ড দেখা গেলেও অনেক অফিসে এর আড়ালে চলে ব্যাপক দুর্নীতি। শুধু সম্পদের হিসাব জমা দিলেই হবে না। দুর্নীতিবাজরা অনেকে নিজের নামে সম্পদ করে না। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। 

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যারা দুর্নীতি করছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি সেক্টরে কাজের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দুর্নীতিবাজদের খুঁজে তালিকা করে বরখাস্ত এবং তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারলে এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। মাদকের মতো দুর্নীতিকে ‘না’ বলুন এবং এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন।

বিমান টিকিটের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৩ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৩ এএম
বিমান টিকিটের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে

বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর বিপুল ডলার আটকে থাকা এবং সিন্ডিকেটের কারণে চাহিদা বাড়লে লাগামছাড়া হয়ে উঠছে বিমানের টিকিটের দাম। চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। যদি সেটা কয়েক গুণ বেড়ে যায় তখন তা সবার নজরে পড়ে। বিমান টিকিটের বেলায় যাত্রীরা এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন সম্প্রতি। ৩০ হাজার টাকার টিকিট লাখ টাকায় কিনেও ফ্লাইট পাননি অনেকে। এর বড় উদাহরণ হলো মালয়েশিয়াগামী কর্মীরা। 

বিদেশি এয়ারলাইনসের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রুটের টিকিটের দামও বাড়তি। বাংলাদেশের বিদেশি এয়ারলাইনসের টাকা আটকে থাকার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। গত বছরের জুনেও একবার পাওনা আদায়ের তাগিদ দিয়েছিল আইএটিএ। সে সময় সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, প্রায় ২১৪ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার আটকা পড়েছে। 

বিদেশে এয়ারলাইনসগুলোর বিপুল পরিমাণ ডলার আটকে থাকায় সামনের দিনগুলোতে এই ডলারের ভবিষ্যৎ মুনাফা ধরে দাম নির্ধারণ করায় বাংলাদেশ থেকে টিকিটের দাম আরও বাড়তে পারে। এমন শঙ্কা অ্যাভিয়েশন খাত-সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, এর মধ্যে কয়েকটি এয়ারলাইনস তাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে নানা জটিলতায় পড়তে পারেন বাংলাদেশি যাত্রীরা। 

গত এপ্রিলে এক বিজ্ঞপ্তিতে বৈশ্বিক এয়ারলাইনসগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) জানায়, বাংলাদেশের বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর পাওনা প্রায় ৩২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে আছে। অবিলম্বে এ অর্থ পরিশোধের তাগাদাও দিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সহসভাপতি ফিলিপ গোহকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি মুদ্রা ব্যবহারে কৌশলী হওয়া দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

এটি সরকারের জন্য একটা কঠিন চ্যালেঞ্জও। তবে সময়মতো এবং কার্যকর পদ্ধতিতে দেনা পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিমান সংযোগ হ্রাস ঠেকানো, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিদেশি বিনিয়োগ এবং রপ্তানির সম্ভাবনাকে ঠিক রাখার জন্য এটি জরুরি।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশ থেকে নতুন ফ্লাইট শুরু করার বিষয়ে আগ্রহ হারাবে। ডলার লেনদেনের এই পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ সম্পর্কে বহির্বিশ্বে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে। বিদেশি এয়ারলাইনস যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে অপারেট করতে চায়, ডলারের এই লেনদেন দেখে তারা নিরুৎসায়িত হবে। 

বর্তমানে দেশে অ্যাভিয়েশন বাজারের ৮০ ভাগের নিয়ন্ত্রণই বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর হাতে। ফলে বিদেশি এয়ারলাইনসের টিকিটের দাম বেড়ে গেলে তা সামগ্রিকভাবে পুরো বাজারেই প্রভাব ফেলে। এতে সামনের দিনগুলোতে বেড়ে যেতে পারে আকাশ পথে ভ্রমণ ব্যয়। 

বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, বিমানের টিকিটের চাহিদার বিপরীতে আসন সংখ্যা বেশির ভাগ রুটেই কম রয়েছে। ফলে যখন চাহিদা একটু বেড়ে যায়, অর্থাৎ আসন আছে ১০০টি আর চাহিদা ১২০টি। 

তখন এয়ারলাইনসগুলো টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেয়। এই সুযোগে কিছু ট্রাভেল এজেন্সি টিকিটগুলো কিনে স্টক করে। পরে সেগুলো তারা অনেক বেশি দামে বিক্রি করে। এর পাশাপাশি দেশে যেভাবে ডলারের দাম বাড়ছে, তাতে সামনের দিনে টিকিটের দাম আরও বাড়তে পারে।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি এয়ারলাইনস যারা এ দেশে পরিচালনা করছে কিন্তু মাসের পর মাস তারা টাকা ফেরত দিতে পারছে না। তারা স্বাভাবিকভাবে ক্ষতি পোষাতে নানামুখী চেষ্টা করবে। অভিযোগ রয়েছে, বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো টিকিটের দাম বাড়িয়ে তাদের কস্ট অব ফান্ড সমন্বয় করছে। সামগ্রিকভাবে এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে। 

এর ফলে বাংলাদেশ থেকে টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে। এই প্রবণতা রোধ করতে হবে। সিন্ডিকেটমুক্ত রাখতে হবে। বিমান টিকিটের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে। যাতে সহজেই বিমানযাত্রীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত টিকিট সংগ্রহ করতে পারে। বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ব্যবসায়ী বিনিয়োগ পরিবেশ সহজ করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।