![যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে বাড়ছে বিভাজন](uploads/2024/06/22/Rafah-1719026367.jpg)
দক্ষিণ গাজার পশ্চিম রাফায় বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবুতে ট্যাংক দিয়ে তীব্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এ সময় হামাসের পক্ষ থেকেও জবাব দেওয়া হয়েছে। তারা ইসরায়েলের একটি সাঁজোয়া সামরিক যান বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে।
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে অলাভজনক সংস্থা ইনারার সভাপতি আরওয়া ড্যামন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘অন্যান্য যুদ্ধাঞ্চল থেকে গাজাকে যা আলাদা করে তা হলো এখানে পালানোর কোনো পথ নেই, কোনো অবকাশ নেই, শ্বাস নেওয়ারও কোনো জায়গা নেই … নিরাপদ স্থানের কোনো সন্ধান নেই।’
আল-জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার একমাত্র রাস্তা- রাফা সীমান্ত পারাপার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পেটে ছুরিকাঘাতের শিকার এক ছোট ছেলের কথা উল্লেখ করে ড্যামন বলেন, ‘ছেলেটি যদি চিকিৎসার জন্য গাজা থেকে বের হতে না পারে তাহলে সে স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে যাবে, মারাও যেতে পারে।’
এদিকে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, খান ইউনিসের পূর্ব পাশে গতকাল ভোরে ইসরায়েলি হামলায় দুই ব্যক্তি ও এক শিশু নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় উত্তর গাজার তুফাহ ও শুজাইয়া এলাকায় দুই বসতবাড়িতে আরও দুজন আহত হয়েছেন।
ওয়াফার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গাজা শহরের জেইতুন, মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবির ও মাঘাঝি শরণার্থী শিবিরসহ দেইর এল-বালাহের আশপাশের এলাকাগুলোতে গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েল। এ ছাড়া হেলিকপ্টার থেকে রাফা শহরের পূর্বাঞ্চলে গুলি চালানো হয়েছে। রাফার কেন্দ্রে যুদ্ধবিমান দিয়েও হামলা চালানো হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র বাহিনীর দুটি দল গত বৃহস্পতিবার গাজা শহরের জেইতুন এলাকার পূর্বে জড়ো হয়েছিল। তারা যৌথভাবে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে মর্টার শেল ব্যবহার করে। এ ছাড়া হামাস যোদ্ধারা একই দিন গাজার কেন্দ্রে ও পশ্চিম রাফাতে ‘কৌশলগতভাবে সীমিত’ আক্রমণ পরিচালনা করে।
মার্কিন থিঙ্ক ট্যাংক দ্য ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) ও ক্রিটিকাল থ্রেটস প্রজেক্ট (সিটিপি) জেইতুনে হামলায় হতাহতের কোনো তথ্য দেয়নি। তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গতকাল জানিয়েছে, উত্তর গাজায় মর্টার শেল হামলায় তাদের দুই সেনা নিহত হয়েছেন।
আইএসডব্লিউ ও সিটিপির সর্বশেষ যৌথ প্রতিবেদন অনুসারে পশ্চিম রাফায় হামলায় জড়িত হামাস যোদ্ধারা কয়েক দিন ধরে তাল আস-সুলতানে ইসরায়েলি অভিযান পর্যবেক্ষণ করছে। আর কেন্দ্রীয় রাফায় হামাস যোদ্ধারা একটি কঠিন অভিযান পরিচালনা করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রকেটচালিত গ্রেনেড দিয়ে চারটি ইসরায়েলি সাঁজোয়া যানে আঘাত হানা ও শাবোরা শরণার্থী শিবিরের সরু গলিপথে যানবাহন থেকে নেমে আসা ইসরায়েলি সেনাদের হটিয়ে দেওয়া।
হোয়াইট হাউস ও নেতানিয়াহুর মধ্যে নতুন উত্তেজনা
এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে চলতি সপ্তাহে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
মূলত অস্ত্র সরবরাহকে কেন্দ্র করে এই বিতণ্ডতার সূত্রপাত। হোয়াইট হাউস বৃহস্পতিবার এই পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ ও ‘হতাশাজনক’ বলে অভিহিত করেন।
নেতানিয়াহু চলতি সপ্তাহের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দাবি করেন, ইসরায়েলের প্রধান সামরিক সমর্থক মার্কিন প্রশাসন। অথচ তারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ‘অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ আটকে রেখেছে।’ এরপর দিয়েই নতুন করে শুরু হয় বিতর্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মন্তব্যগুলো গভীরভাবে হতাশাজনক এবং অবশ্যই আমাদের জন্য বিরক্তিকর। আমাদের যে পরিমাণ সমর্থন রয়েছে তা দেওয়া অব্যাহত থাকবে।’
গত বুধবার হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি কারিন জেন-পিয়েরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সত্যিকার অর্থে জানি না তিনি কী বিষয়ে কথা বলছেন। এখানে অন্য কোনো অস্ত্র সরবরাহের বিরতি নেই। কোনোটিই নয়।’ ২০০০ পাউন্ড বোমার একটি চালানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ওই অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। সেটি নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’
নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে জানান, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রের চালান পেলে তিনি ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হওয়ার জন্যও প্রস্তুত।
ইসরায়েলি সরকারপ্রধান ও বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে বিরোধ এই প্রথম নয়। বাইডেন এর আগে দক্ষিণ গাজার রাফাতে ইসরায়েলি স্থল অভিযানের কঠোর বিরোধিতা করেছিলেন। সেখানে সে সময় ১০ লাখেরও বেশি বেসামরিক মানুষ ছিল। সে সময় বাইডেন জানিয়েছিলেন, তার সতর্কতা না মানলে কিছু অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। সূত্র: আল-জাজিরা, এএফপি