![রক্তাক্ত ফিলিস্তিনিকে জিপে বেঁধে অভিযান](uploads/2024/06/24/ISRAEL-PALESTINIAN-1719198062.jpg)
অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে অভিযান চালানোর সময় এক ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করে রক্তাক্ত অবস্থায় জিপের হুডের (ইঞ্জিনের ওপরের অংশ) সঙ্গে বেঁধে নিয়ে যায় ইসরায়েলি সেনারা।
শনিবার (২২ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ওই ভিডিওটি নিয়ে মুখ খুলেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীও।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আহত ব্যক্তির নাম মুজাহেদ আজমি। ওই ফিলিস্তিনি বাসিন্দাকে দুটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি জিপের সামনে রক্তাক্ত শরীর নিয়ে বাঁধা অবস্থায় দেখা গেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে বলেছে, পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ইসরায়েলি সেনা অভিযান চলাকালে গুলি বিনিময়ের সময় ওই ফিলিস্তিনি আহত হন। তিনি সন্দেহভাজন ছিলেন। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, আহত ওই ফিলিস্তিনিকে এভাবে গাড়ির সামনে বেঁধে রেখে তাদের সেনারা প্রটোকল ভেঙেছে।
আহত ওই ফিলিস্তিনির পরিবার বলেছে, তারা একটি অ্যাম্বুলেন্স খুঁজছিলেন। ওই সময় সেনাবাহিনী তাকে ধরে জিপের হুডের ওপর বেঁধে রাখে। এরপর গাড়িটি চালিয়ে যায়। পরে আহত ফিলিস্তিনিকে চিকিৎসার জন্য রেড ক্রিসেন্টে পাঠানো হয়। এ ঘটনার তদন্ত করবে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
এদিকে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ওই উপত্যকায় ২৪ ঘণ্টায় ১০১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১৬৯ ফিলিস্তিনি। এতে উপত্যকাটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৫৫১ জনে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ইসরায়েলের নৃশংস হামলায় এ পর্যন্ত ৮৫ হাজার ৯১১ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় যেসকল স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে সেগুলোর নিচে এখনো অনেক মানুষ চাপা পড়ে আছে। ইসরায়েলি অবরোধের ফলে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থা। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাতে কোনো কর্ণপাত করছে না ইসরায়েল। যেখানে সর্বশেষ রায়ে তেল আবিবকে অবিলম্বে রাফাতে হামলা কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, রবিবার (২৩ জুন) ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা প্রধান ও মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন। যেখানে গাজা যুদ্ধের পরবর্তী ধাপ ও লেবাননের সঙ্গে সীমান্তে শত্রুতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহর সঙ্গে লেবাননের অস্ত্র বিনিময় ব্যাপক সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করেছে। আট মাসের বেশি আগে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে অগ্নিসংযোগ করছে। গোষ্ঠীটি বলেছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত তারা থামবে না।
হিজবুল্লাহর নতুন ড্রোন ভিডিও প্রকাশ
রবিবার আল-জাজিরার প্রতিবেদনে হিজবুল্লাহ নতুন ড্রোন ভিডিও প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই ভিডিওতে হাইফা শহরের সামরিক অঞ্চলসহ ইসরায়েলের স্পর্শকাতর স্থানগুলো দেখানো হয়েছে, যা দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা বৃদ্ধি করেছে।
‘টু হুম ইট মে কনসার্ন’ শিরোনামে হিজবুল্লাহর প্রকাশিত ভিডিওটিতে ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেছে। যেখানে হাকিরিয়া কমপ্লেক্সেরও স্পষ্ট অবস্থান নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছে হিজবুল্লাহ। মূলত এই কমপ্লেক্স থেকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় ও সামরিক কমান্ড পরিচালিত হয়।
হিজবুল্লাহর দাবি, ভিডিওটিতে এমন তথ্য রয়েছে যা কেউ আগে করতে সক্ষম হয়নি। যেখানে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, যেমন তেল শোধনাগার, বিদ্যুৎকেন্দ্র, উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) ঘাঁটি ও তিনটি গ্যাস উত্তোলন কেন্দ্রের সামুদ্রিক স্থানাঙ্কের অবস্থান ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে হিজবুল্লাহ।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের আকাশসীমা হাইফা বন্দরে অনুপ্রবেশের কয়েকদিন পর হিজবুল্লাহ আবারও ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করেছে। পুনরায় এমন পদক্ষেপের অর্থ হলো, এটি হিজবুল্লাহর তরফ থেকে ইসরায়েলের জন্য আরও একটি সতর্কবার্তা। এটা দেখিয়ে দিয়েছে যে, তারাও ইসরায়েলের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করতে পারে। এমনকি সর্বাত্মক যুদ্ধে লক্ষ্যবস্তু হতে পারে এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করতেও সক্ষম তারা। সূত্র: রয়টার্স, আনাদোলু নিউজ এজেন্সি, আল-জাজিরা