ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দেওয়া সূত্র ধরে এবং কিছু এনক্রিপ্টেড বা সুরক্ষিত গোপন মেসেজ ক্র্যাক করে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে অপারেট করা এক সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের কাঁকসা থেকে শনিবার (২২ জুন) সন্ধ্যায় মহম্মদ হাবিবুল্লা নামে এক যুবকসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর এমনটাই দাবি করেছে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স।
বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার-আল-ইসলামের একটি মডিউল বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই সক্রিয় ছিল। শাহাদত নামে সেই মডিউলের প্রধান বা আমির হিসেবে কাজ করতেন হাবিবুল্লা। কাঁকসা থানায় গ্রেপ্তার হাবিবুল্লার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং ইউএপিএ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার-আল-ইসলামের সদস্য ছিলেন হাবিবুল্লা। সেই সংগঠনের অন্যতম সদস্য ‘ফিদায়েঁ’ ইসমাইল শাহাদত। মনে করা হচ্ছে তার নামেই তৈরি হয়েছে নতুন এই মডিউল। যার অর্থ, নিজে থেকে শহিদ হওয়া। অর্থাৎ আত্মঘাতী জঙ্গি বা ‘ফিদায়েঁ’। জিহাদের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিতেও পিছপা হব না, এই সংকল্পের বীজই বুনে দেওয়া হতো সদস্যদের মধ্যে। সূত্রের দাবি, বিদেশে আত্মগোপন করে সালাউদ্দিন নাসের নামের একজন মডিউলটি অপারেট করেন।
মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় জাল বিছিয়ে তরুণ-তরুণীদের দলে টানতেন তারা। প্রথমে চলত স্ক্যানিং। দেখা হতো, কারা ইসলামিক মৌলবাদের প্রতি আগ্রহী। তারপর অডিও মেসেজ পাঠিয়ে চলত মগজ ধোলাই। ব্যবহার হতো বিশেষ মোবাইল অ্যাপ ‘বিপ’। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ এক গ্রুপে চলত কথাবার্তা। সেই গ্রুপেই এখন কড়া নজর তদন্তকারীদের। সূত্রের দাবি, এইভাবে ‘রিক্রুট’ করা হয়েছিল হাবিবুল্লাকে। কম্পিউটার সায়েন্সের এই পড়ুয়া বেশির ভাগ সময়ই মোবাইল, ল্যাপটপে মুখ গুজে থাকতেন। এলাকায় কারও সঙ্গে বিশেষ মিশতেন না বলেই দাবি পড়শিদের। তবে আপাত শান্তশিষ্ট, মেধাবী হাবিবুল্লা যে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তা মানতে পারছে না এলাকার বাসিন্দারা।
সম্প্রতি ঢাকার শাহিনবাগ, গুলিস্তান এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে নয়া ‘শাহাদত’ মডিউলের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সূত্রের দাবি, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই বাংলার তিন চক্রীর হদিস মিলেছে। মূলত ঢাকা, সাতক্ষীরা, যশোর এলাকায় অপারেট করেন তারা। ধৃতদের রবিবার বর্ধমানের আদালতে পেশ করা হয়েছে।
আটকদের মধ্যে তিনজন সরাসরি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ এসটিএফের। কয়েকজন ওই জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিতে যাওয়ার পথে এসটিএফের হাতে ধরা পড়েছেন। আটক হাবিবুল্লার ভাই স্কুলছাত্র। তাকেও আটক করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবিবুল্লা পূর্ব বর্ধমানের বুদবুদ থানা এলাকার মানকর কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের কম্পিউটার সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। খবর পেয়ে কাঁকসা থানায় পৌঁছান আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ আধিকারিকরা। সেখানে ছিলেন কাঁকসার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারও।
এই মডিউলের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বিশেষভাবে সুরক্ষিত বা এনক্রিপটেড মেসেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে কথাবার্তা বলতেন। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল কায়দার সঙ্গে যোগাযোগে থাকা আনসার-আল-ইসলামের মডিউল ভারত ও বাংলাদেশে নাশকতামূলক কাণ্ড ঘটাবে বলেই গোপনে কাজ করছিল মনে করছে এসটিএফ।
কাঁকসায় তার বাড়ি থেকেই হাবিবুল্লাকে গ্রেপ্তার করে এসটিএফ। হাবিবুল্লাহ ছাড়াও তার বাবা মহম্মদ ইসমাইল মুন্না ও পরিবারের কয়েকজনকে আটক করেছে এসটিএফ। তার বাড়ি থেকে বেশ কিছু নথিও উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গেছে।